আরমান খান, লংগদু
রাঙামাটির লংগদুতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ৭৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় যোগ দিলেন দেড় বছর আগে দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার। শুক্রবার সকালে উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় তিনি মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন এবং বক্তব্য রাখেন বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। তবে নানা কারণে বিতর্কিত এই নেতার হঠাৎ দলীয় সভায় অংশগ্রহন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকইে মনে করছেন আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা কমিটির আদেশে তিনি সভায় যোগ দিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিজের পুত্রকে চেয়ারম্যান প্রার্থী করায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন আব্দুল বারেক সরকার। সেই থেকে তাঁকে আর দলীয় কোনো অনুষ্ঠানে আর দেখা যায়নি। এরপর এ বছরের মার্চে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আব্দুল বারেক সরকারের অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার করে শর্ত সাপেক্ষ সাধারণ ক্ষমা করা হয়। তবে সেই চিঠিতে স্ব-পদে (সভাপতি) বহাল থাকার কোনো বিষয় উল্লেখ করা হয় নাই।
এদিকে দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বারেক সরকার আওয়ামীলীগের সভাপতি হওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন দুই বার। এরপর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দি¦তায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিজের ছেলেকে প্রার্থী করেছিলেন। এছাড়াও মাইনীমূখ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেনকে মারধর , উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোশারফ হোসেনকে অপদস্ত করা এবং জেলা পরিষদ নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান, আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রহিমের বাড়িতে হামলা এবং সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল আলমের উপর হামলার মতো নানান বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে সমালোচিত হয়েছেন বারেক। যার বেশিরভাগ ঘটনারই সাংগঠনিকভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সর্বশেষ তিনি গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন। একমাত্র এই ঘটনার শাস্তিই ভোগ করতে হলো তাকে,দলীয় সভাপতির পদ খুইয়ে ও দলকে অব্যাহতি পেয়ে।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “ কেন্দ্র থেকে সাংগঠনিকভাবে আব্দুল বারেক সরকারসহ অব্যাহতি পাওয়া আরো কয়েকজন নেতার অব্যাহতি আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাই এখন থেকে দলীয় সকল কর্মকান্ডে তাদের অংশগ্রহণে কোনো বাঁধা নাই। তবে তাদের স্ব-পদে ফেরার আপাতত কোনো সুযোগ নাই। আমরা দলের সিদ্ধান্ত মেনেই সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
দীর্ঘদিন পর দলীয় সভায় যোগদানের বিষয়ে আব্দুল বারেক সরকার বলেন, “আমি আওয়ামীলীগের রাজনীতি করি, অন্য কোনো দল করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি যদি দলের কোনো পদে নাও থাকি তারপরও দলের মঙ্গলের জন্যই কাজ করে যাবো। শুধু আমি না আমার পরিবার ও আত্মীয় স্বজন যারা আছে সবাই নৌকার জন্য এবং শেখ হাসিনার জন্য কাজ করবে।”
অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহারের পরে দলের সভাপতি পদে ফেরার কোনো সুযোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,“ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জেলা কমিটি। আমি তাদের সিদ্ধান্তই মেনে নিবো। তারা যদি মনে করে আমাকে প্রয়োজন তাহলে আমিও তাদের ডাকে সাড়া দিবো।”
আপাতত দলে ফিরে আসার পথ সুগম হলেও এখনই নিজের সভাপতি পদ ফিরে পাচ্ছেন না বারেক সরকার। আদৌ পাবেন কিনা,নেই তারও নিশ্চয়তা। খেয়ালী এই রাজনীতিবিদ নিজের সভাপতি পদ ছাড়া দলে নতুন করে ফিরে এসে কতটা সামলে নিতে পারেন গত দেড় বছরে তৈরি হওয়া বিরুদ্ধ বাতাস তাই এখন দেখার বিষয়। তবে পুরো পরিস্থিতিই নির্ভর করছে তার নিজের আচরণ,কৌশল এবং পরবর্তী কর্মপন্থার উপরই ! সম্ভবত সে দিকেই তাকিয়ে থাকবে লংগদুর রাজনীতি সচেতন মানুষ।