নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপ্তাই
রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের দুর্গম ভাঙামুড়া এলাকার জুমচাষীর ছেলে উত্তম কুমার তঞ্চঙ্গ্যা। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক প্রতিটি শ্রেণী শেষ করতে তাকে পোহাতে হয়েছে দুর্ভোগ। জুমচাষী বাবা পাখিজয় তঞ্চঙ্গ্যা নিজে না খেয়ে পড়ালেখা করাচ্ছেন সন্তানদের। ধারদেনায় কোচিং শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে গত বৃহস্পতিবার ফলাফল নিশ্চিত হয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগে। কিন্তু এই খবরও তার দুঃখের কারণ। বাবা চাষী, নেই টাকা। অর্থ সঙ্কটে হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। ফলে আর্থিক সংকটে অনিশ্চিত তার পড়ালেখা।
জানা যায়, কাপ্তাই উপজেলার কাপ্তাই ইউনিয়নের ভাঙামুড়া এলাকার বাসিন্দা উত্তম কুমার তঞ্চঙ্গ্যা। ভাইবোনদের মধ্যে দ্বিতীয় সে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে হোস্টলে থেকে। কখনও খেয়ে-কখনও না খেয়ে বড়ইছড়ি কর্ণফুলী নুরুল হুদা কাদেরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে মানবিক বিভাগে ৩.৭৫ পয়েন্ট এবং গত বছর কর্ণফুলী সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিতে মানবিক বিভাগে ৪.২৫ পয়েন্ট পেয়ে পাস করে উত্তম। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করতে যান রাঙামাটির জুম এডমিশন কেয়ার কোচিংয়ে। সেখানে খরচ দরকার ছিল ৫ হাজার টাকা। যা দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় ধারকর্জ করতে হয়েছে চাষী বাবা-মায়ের। অবশ্যই কোচিং এ বড় ভাইরা তাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন।
উত্তম কুমার তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, প্রায় সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মৌখিক পরীক্ষার জন্য আমাকে ডাকা হয়। কিন্তু বাবার কাছে টাকা ছিল না। হাওলাত হিসেবে যে টাকার ব্যবস্থা করতে পেরেছেন তা দিয়ে প্রায় ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেই। এরমধ্যে গত বৃহস্পতিবার কর্নফাম হলো নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগে ভর্তির। কিন্তু সেখানে ভর্তি হতে দরকার অনেক টাকা। যা আমার জুমচাষী বাবার পক্ষে দেওয়া অসম্ভব।
কর্ণফুলী সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এএইচএম বেলাল চৌধুরী বলেন, ছেলেটা খুব কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। থেকেছে হোস্টেলে, পড়েছে সংকট নিয়েই। তাপরও তার এই ফলাফলে আমরা গর্বিত।
বড়ইছড়ি নুরুল হুদা কাদেরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়সীম বড়ুয়া বলেন, দুর্গম পাহাড়, যেখানে সড়ক নেই, বিদ্যুৎ নেই, টাকা নেই-সবদিকে শুধু সংকট আর সংকট। এমন একটা পরিবেশ থেকে উত্তম যে এই পর্যন্ত এসেছে- তা আসলেই প্রশংসার দাবি রাখে। আমাদের উচিত তাকে সহযোগিতা করা।
বড় হয়ে একজন বিসিএস কর্মকর্তা হয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলোতে আলোকিত করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন উত্তম কুমার তঞ্চঙ্গ্যা।