সুহৃদ সুপান্থ
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার রাজনীতিতে,মেধায়-প্রজ্ঞায়-কৌশলে কিংবা সৃজনশীলতায়,যে ক’জন নেতা চিরকালই আলো ছড়িয়েছেন,তাদেরই একজন মনিস্বপন দেওয়ান। রাঙামাটির সাবেক এই সংসদ সদস্যের হাত ধরেই জিয়াউর রহমানউত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামে ধানের শীষের বিজয় দেখে দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি। উপজেলা চেয়ারম্যান,পৌর মেয়ারম্যানের পদ ডিঙ্গিয়ে সংসদ সদস্য হওয়ার পর পার্বত্য উপমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই নিজের সৃজনশীলতায় চমকে দিয়েছিলেন অনেককেই। পার্বত্য শহর রাঙামাটির হিংসার রাজনীতিতে ‘ভালোবাসার বুনোফুল’র চাষাবাদ শুরু করেছিলেন তিনিই। তার কারণেই আজো বড় ধরণের যেকোন রাজনৈতিক সংঘাতমুক্ত পার্বত্য এই পর্যটন জেলা।
মাঝের অভিমান,বিচ্ছিন্নতা ভুলে সর্বশেষ কয়েকবছর ধরে বিএনপির রাজনীতিতে আবারো সক্রিয় মনিস্বপন। তারেক রহমানের ভীষণ বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন মনিস্বপনকে ফের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার কৃতিত্বও তার। দায়িত্ব নিয়েই আবার নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণ ফিরিয়ে এনেছেন তিনি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে তার যৌক্তিক,মুগ্ধতাজাগানিয়া বক্তব্যও প্রাণ সঞ্চার করত,উদ্দীপনা জাগাতো কর্মীদের মাঝে।
৫ আগষ্টের শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর উজ্জীবিত রাঙামাটি বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রায় প্রতিদিনই মিছিল সমাবেশ করছেন। যে দলের কর্মীরা একটি মিছিল নিয়েও শতচেষ্টায় ডিঙিতো পারতেন না অফিসের ঘেরাটোপ,পুলিশের বাঁধায়,তারাই এখন সকাল বিকাল,যেখানে সেখানে,যখন খুশি তখন মিছিল সমাবেশ করতে পারছেন। নেতাকর্মীদের এই বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাস ও স্বাধীনতা ছুঁয়েছে মনিস্বপন দেওয়ানকেও।
পাহাড়টোয়েন্টিফোরের সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।
স্বৈরাচারি হাসিনা সরকারের পতনের জন্য ছাত্রসমাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম পুরো জাতির আশা আকাংখার প্রতিফল ঘটিয়েছে। এই পটপরিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
এই ছাত্র বিপ্লব ও জনআকাঙ্খাকে অবশ্যই রাজনীতিবিদদের বুকে ধারণ করতে হবে,মন্তব্য করে তিনি বলেন-ছাত্ররা যে পরিবর্তনের প্রত্যাশায় জীবন দিয়েছে তার প্রতিফলন থাকতে হবে এই দেশের আগামীর রাজনীতিতে। রাজনৈতিক দলগুলোর দল ও রাষ্ট্র পরিচালনা,নীতি নির্ধারন ও কাজেকর্মে এর প্রতিফলন ঘটাতে হবে। রাজনীতিতে অর্থনীতিতে সামাজিকতায়ও এই পরিবর্তনের প্রভাব দৃশ্যমান হবে।’
ছাত্রদের আন্দোলনের সফলতার পাশাপাশি এই অঞ্চলের ‘জিওপলিটিক্স’ সম্পর্কে সচেতনতার আহ্বান জানিয়ে মনিস্বপন বলেন, এখন পৃথিবী থেকে বিচ্ছন্ন থাকার সময় নয়,কে কার স্বার্থে কেনো কি করছে,সবাই মুহুর্তেই জেনে যাচ্ছে। এই আন্দোলনের সফলতার ফল পুরো পৃথিবীর নানান জায়গায় পড়বে। সম্ভবত মিয়ানমার ও পাকিস্তানেও আমরা এর প্রভাব দেখতে পাব।’
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনুস এর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতীকালীন সরকারের সাফল্য কামনা করে তিনি বলেন,‘ ্ইউনুস সাহেবের যে আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও প্রভাব,তাকে কাজে লাগিয়ে তিনি নতুন কিছু করতে পারবেন বলেই আমার বিশ^াস আছে । তার নেতৃত্বে যোগ্য মানুষদের এই পরিষদ মৌলিক কিছু জায়গায় যদি পরিবর্তন আনতে পারে তবে সামগ্রিকভাবে দেশই উপকৃত হবে। একইসাথে এদের কারণেই আইএমএফ,এডিবি,জাইকাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাও দেশের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক কাঠামোকে পুনর্গঠনে এগিয়ে আসবে। একইসাথে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে এই সরকারকে আনকন্ডিশনাল সাপোর্ট দিচ্ছে,সেটাও একটি বড় সহযোগিতা,যা অন্য সরকারের বেলায় হয়না। সুতরাং তাদের সফল হতেই হবে।’
‘দেশের রাজনীতিতে এই ছাত্রবিপ্লবের সুদূরপ্রসারি প্রভাব পড়বে’ মন্তব্য করে মনিস্বপন দেওয়ান বলেন, আগের রাজনীতি আর দেখবেন না। নতুন রাজনীতি,নতুন দিন আসছে। আসবেই। পুরনো রাজনীতি,পুরনো ভাবনা,পুরনো কাঠামো বদলে যাবে।’
সরকার পতনের পর দেশজুড়ে সহিংসতা ও রাঙামাটিতে আওয়ামীলীগের অফিসে পুড়িগয়ে দেয়ার প্রসঙ্গে মনিস্বপন দেওয়ান বলেন, একটা বিপ্লবের পর কিছু ঘটনা ঘটে,যাতে অনেক শ্রেণী পেশার সুবিধাভোগিরা ঢুকে পড়ে এবং ফায়দা নেয়। তাৎক্ষণিকভাবে অনেককিছুই মোকাবেলা করা সম্ভব হয়না বলেই এমন কিছু ঘটনা এরা ঘটিয়ে ফেলে যা সবার জন্যই বিব্রতকর,অনাকাঙ্খিত। রাঙামাটিতে যেটা হয়েছে সেটা অবশ্যই দুঃখজনক, অনুচিত কাজ হয়েছে এটা।’ তবে মানুষের ক্ষোভ-বেদনার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন এই অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তিনি বলছেন,কিছু ঘটনার প্রতিক্রিয়া তো হবেই। যদিও আমরা এসব চাইনি,চাইওনা।’ সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনার ভাবমুতি ক্ষুন্ন হয়েছে স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, এই হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবে কিছু অপপ্রচারও হয়েছে,দেশের বিরুদ্ধে, এটাও মাথায় রাখতে হবে সবাইকে।’
কিছুদিন আগেও বিএনপির মিছিলে খুব বেশি জমায়েত না দেখা গেলেও এখন হাজার হাজার নেতাকর্মী সমর্থক দেখা যাচ্ছে, এটাকে কিভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ঝানু এই রাজনীতিবিদ বলেন-‘ এটাই রাজনীতি’। ভরা মৌসুমে পানিতে ভেসে যাবে,শুষ্ক মৌসুমে পানিরঅভাব ! তবে যেভাবে যারা জোয়ারের মত আসছে,তারা আবার সেভাবেই কেটে পড়বে,প্রত্যাশা ভঙ্গ হলেই !