অজয় মিত্র
শুনেছি শৈশব থেকে কলেজ জীবনে বেশ উচ্ছ্বল জীবন ছিল। বিয়ের পর একান্নবর্তী পরিবারে শুরুতেই খানিকটা খেই হারিয়ে ফেলেন তিনি। ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে শুরু করেন।
এই এ্যডজাস্টমেন্টের কবলে পড়ে ক্রমেই তিনি যা রপ্ত করেছেন, তা হলো শুধু শুনে যাওয়া।
বাবু যখন সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে পঙ্গপালের জাহাজ চালিয়ে গেছেন বছরের পর বছর, তিনি কখনোই বাঁধ সাধেননি তাতে। ছিলেন সহায়ক। যার কারণে আজকের দিন অব্দি আমাদের বসবাস ভাড়া ঘরে!
নিজের সহজ সরলতায় অনেকের কাছেই মেকি শ্রদ্ধা ভক্তির মানুষ হলেও, সব সময় শুধু শুনেই গেছেন।
বাবুর কাছে আক্ষেপে শুধু শুনে গেছেন বলেই হয়তো সময়ের বৈপরীত্যে মানুষকে এও বলতে শুনেছি ‘সবাই শুধু অমুকের টাকার দিকেই তাকিয়ে থাকে’!
আত্মকেন্দ্রিক হয়ে শুধু নিজের ভবিষ্যত ও সন্তান সন্তুতির কথা না ভেবে ‘সদানন্দ মহাপ্রভু’র ভূমিকায় বাবু যখন অবতীর্ণ, তখন অনেকেই ব্যাংক ভরে রেখেছেন নিজেদের আখের গোছাতে, ব্যাংকের পাসবই, চেকবইয়ের মুড়ায় যার প্রমাণ বহন করে চলেছে, তখনও তিনি শুনেই গেছেন, বলেননি কিছু।
কুটলী না পাকিয়ে, অশান্তির জাল না বুনে তিনি শুধু শুনে গেছেন বলেই, আজ অনেকের পালে হাওয়া লেগেছে, ঘেঁডি মোটা হয়েছে, ধরা কে সড়া জ্ঞান তো করছেই।
তিনি শুনে গেছেন বলেই অনিশ্চিত জীবনে সন্তানরা ভেসে গেছেন, ডুবেছেন দুঃখ দূর্দশায়, তবে তা বিন্দুমাত্র অসততায় নয়।
শঠতা না দেখিয়ে তিনি শুধু শুনে যেতেন বলেই বাবুর শতভাগ উপচে পড়া সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সংসার জীবনে বৈষ্যয়িক প্রাপ্তির স্থান একেবারেই শূণ্য।
তিনি পাল্টা কিছু বলতে পারেন না, আজও শুনে যান বলেই, অর্থের মোহে অন্ধ হয়ে থাকা অমানুষের দল ঘটা করে ডেকে নিয়ে গিয়ে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করেছেন, নিজেদের গড়ে উঠা, বেঁচে থাকা ভুলে।
সময়ের জন্য রেখে দিলাম সব।
সব সময় শুনে যাওয়া এই মানুষটাই আমাদের পরম বন্ধু, আমাদের মা। সংস্কৃতিপ্রাণ বাবু’র স্যস্কৃতিমনস্ক পরম সহযোদ্ধা।
মায়ের জীবনের একমাত্র পরম তৃপ্তিময় প্রাপ্তি হলো অকৃত্রিম বন্ধুত্বপূর্ণ সন্তান সন্তুতিময় শুধুমাত্র নিজের পরিবার।
কারণে বা অকারণে মায়ের মনে আঘাতের কারণ আমি-আমরা সহ যে বা যারা, সবাই চরম নির্মমতায় ধ্বংস হোক।
আমাদের মা
বেঁচে থাকুক, ভাল থাকুক জন্ম জন্মান্তর
সুস্বাস্থ্য, অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালবাসায়…