মিশু মল্লিক ।।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে পার্বত্য জনপদ রাঙামাটিতে অতি প্রবল বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের আশংকা রয়েছে। পাহাড় ধসের ফলে প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াত রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের ৯টি ওয়ার্ডে মোট ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হলেও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনাগ্রহী পাহাড়ের ঢালে বসবাসরত স্থানীয়রা। বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো একজনও আশ্রয় নেন নি, তালা ঝুলতে দেখা গেছে অর্ধেকেরও বেশি আশ্রয়কেন্দ্রে।
রবিবার (১৪ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের নিউ রাঙামটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহীদ আব্দুল আলী একাডেমি, রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, শিশু একাডেমি, গোধুলী আমানতবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বি.এম ইন্সটিটিউট, লোকনাথ মন্দির আশ্রয়কেন্দ্রসহ বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্রেই কেউ আসেন নি। তালাবদ্ধ দেখা গেছে বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্র। শনিবার বিকেলে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার সহ প্রশাসনের একটি টিম শহরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো পরিদর্শন করে পাহাড়ের ঢালে বসবাসরতদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করলেও এখনো তেমন সাড়া মেলেনি।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় মোখা ও সম্ভাব্য দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাঙামাটি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ২৯টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের জন্য মোট ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পাশাপাশি ডেপুটি কালেক্টর ও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
রাঙামাটি শিশু একাডেমির নৈশ প্রহরী খোকন কান্তি দে বলেন, প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক গতকাল থেকে আমরা আমাদের একাডেমিকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করে রেখেছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেউ আমাদের এখানে আশ্রয় গ্রহণ করেনি।
শহরের ভেদভেদীস্থ লোকনাথ মন্দিরকেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মন্দিরের পুরোহিত রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করার পর থেকেই আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু এখনো কেউ আসেনি। হয়তো আবহাওয়া আরো খারাপ হলে আশেপাশে পাহাড়ের ঢালে বসবাসকারীরা আসতে পারে। আমরা তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করবো।
ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে শনিবার থেকেই আকাশ মেঘলাসহ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হ্িচ্ছল রাঙামাটিতে। রবিবার সকাল থেকেও আকাশ মেঘলা রয়েছে, সাথে রয়েছে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। আবহাওয়া তেমন খারাপ না হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা।
শহরের রুপনগর এলাকার বাসিন্দা মোঃ আবদুল সোবাহান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বৃষ্টিপাত হবে এটা বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু এখনো তেমন একটা বৃষ্টি না হওয়ায় আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে যাইনি। তবে যদি বেশি বৃষ্টি শুরু হয় আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাব। শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা রুপনা চাকমা বলেন, আমাদের বাসার ছোট বাচ্চাদের আমাদের আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। এখনো তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় আমরা বাসায় আছি। বৃষ্টি শুরু হলে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাব।
শিমুলতলী সমাজ উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মোঃ আবু বক্কর লিটন (মিঠু) বলেন, আমাদের শিমুলতলীকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করে গতকাল বিকেলে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিদর্শন করে গেছেন। যেহেতু বৃষ্টি হলেই পাহাড় ধসের আশংকা থাকে তাই আমি শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু যেহেতু এখনো তেমন বৃষ্টি হয়নি তাই কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাইছে না। তবে অনেকেই আত্মীয় স্বজনের বাসায় চলে গেছে। বৃষ্টি শুরু হলে হয়তো আরো অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাবে।
এই বিষয়ে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমরা ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় আমরা সমস্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। গতকাল থেকে পাহাড়ের ঢালে বসবাসরতদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়ে এসেছি। এখনো তেমন বৃষ্টি শুরু না হওয়াতে লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করছে না। তবে আমরা সতর্ক আছি।