রাঙামাটির কুতুকছড়ি এলাকা থেকে অপহৃত দুই হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রীর অপহরণ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নিজের নাম থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করে নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএনলারমা)র সহসভাপতি এডভোকেট শক্তিমান চাকমা বলেছেন, ‘ইউপিডিএফ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। নিজেদের আভ্যন্তরীন বিরোধ ও ব্যর্থতায় দায় আমাদের উপর চাপিয়ে নিজেরা দায়মুক্ত হতে চাইছে তারা। দুই ইউপিডিএফের বিরোধের বলি করতে চাইছে আমাকে ও আমার দলকে। এটা অপরাজনীতি।’
এডভোকেট শক্তিমান চাকমা পাহাড়টোয়েন্টিফোর ও দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রামকে বলেন, ‘যখন ছাত্রজীবনে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) এর রাজনীতি করি,তখন থেকেই পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের দুটি ধারা ছিলো,একটি আমার নেতৃত্বে,অন্যটি প্রসিত খীসার অধীনে। আমি চুক্তি সাক্ষরকালে পক্ষে ছিলাম,ওরা বিরোধীতা করে ভিন্ন দল গঠন করে। সেই থেকে যে বিরোধ,সেই বিরোধের ধারাবাহিকতায় তার দলের লোকজন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশত: আমাকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছে। বিগত নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তারা আমার বিরুদ্ধে নানাভাবে চক্রান্ত করেও ব্যর্থ হয়েছে,সেই ক্ষোভও আছে তাদের। তাই খাগড়াছড়িতে কিছু হলেই আমাদের নেতাদের নামে মামলা,এখানে কিছু হলে আমার নামে মামলা দেয়াটা তাদের অসৎ রাজনীতি ও ব্যক্তি আক্রোশের ফল। ’
শক্তিমান চাকমা আরো বলেন, ‘আমি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং সরকারের লোক। আমি সারাক্ষন পুলিশ প্রহরায় থাকি,আমি কেনো কাউকে অপহরণ করব। বরং তিন বিদেশী অপহরণসহ অসংখ্য অপহরণ,ঘুম,খুনের অভিযোগ আছে ইউপিডিএফের বিরুদ্ধেই। তারা এই এলাকাকে ত্রাসের রাজত্বে পরিণত করেছিলো। এখন নানিয়ারচরে তারা নেই,উৎখাত হয়েছে। এখানকার মানুষ এজন্য খুব খুশি। তারা বহুবছর পর স্বস্তিতে আছে। ’
এডভোকেট শক্তিমান চাকমা বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব মেনেই পার্বত্য চুক্তি হয়েছে। আমি চুক্তির পক্ষের মানুষ। আর তারা ? জাতীয় দিবস বর্জন,প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় বাধা প্রদান,সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভাবমূর্তি নষ্টকারি মিথ্যা অভিযোগ,উস্কানিমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। সরকারের উচিত এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া। এরা পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র সফল করতে চায়।’
তিনি বলেন, কুতকছড়িতে কি হয়েছে,কারা অপহৃত হয়েছে বা কারা করেছে,সেটার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত,কিন্তু তার আগেই অন্যায়ভাবে কাউকে অভিযুক্ত করা,মিথ্যা মামলা করা উচিত নয়।’
ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি ও প্রগতিশীল মানুষদের ধ্বংস করার অভিনব ষড়যন্ত্র করছে এবং আগামী নির্বাচনকে মাথায় রেখে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে রাঙামাটিতে থাকা আরেকটি পক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে এসব অপকর্ম করছে।’
অপহরণ ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউপিডিএফকে বিশ্বাস করা কঠিন। এর আগে বুদ্ধমূর্তি নিয়ে সাজানো নাটক সাজিয়ে পরিস্থিতি ঘোলা করেছে এরা,বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুতে এসব অপকর্ম ও অপরাজনীতি করা ইউপিডিএফ এর পুরনো অভ্যাস। তিন বিদেশী অপহরণ সহ অসংখ্য অপহরণ,খুনের পুরনো অভ্যাস আছে এদের,আমরা তো এসব করিনা। গনতান্ত্রিক রাজনীতি করি।’
ইউপিডিএফ এর স্বভাব সম্পর্কে জেনেই মামলা নেয়া উচিত ছিলো মন্তব্য করে তিনি বলেন, এভাবে মিথ্যা মামলা করতে চাইলেই নেয়া উচিত নয়। প্রশাসনের উচিত এসব খতিয়ে দেখা। এরা আশ্রয় প্রশ্রয় পেলে পার্বত্য পরিস্থিতি জটিল হয়। এদের অপরাজনীতি ও ফাঁদ থেকে সবাইকে দুরে থাকতে হবে।’
ইউপিডিএফকে সামাজিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ এদের জঘণ্য অপরাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে পাহাড়ের মানুষকে। দেশবিরোধী সকল অপপ্রচার,মিথ্যাচার,ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে হবে । একই সাথে এদের যেনো শুভবুদ্ধির উদয় হয়,সেই প্রত্যাশাও করি।
ইউপিডিএফ (গনতান্ত্রিক) সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা সবাই জানে যে,তপনজ্যোতি চাকমা বর্মা কাদের লোক ছিলো। কিন্তু সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চেয়েছে, আমাদের দলে আসতে চেয়েছিলো। আমরাও তাকে নিতে চেয়েছি। কিন্তু রাঙামাটিতে থাকা একটি দল ও ইউপিডিএফ এর মধ্যকার সমঝোতার কারণে আমরা তপনজ্যোতিকে আর দলে নেইনি,সে নিজে দল করেছে। প্রত্যেকের রাজনীতি করার ,দল করার অধিকার আছে। সেও করেছে। এখন তারা যদি নিজেরাই বিরোধ করে আর এর সাথে আমাদের মেশানো হয়,জড়ানো হয়,সেটাতো ঠিক না।’
ইউপিডিএফ এর রাজনীতিতে ‘অসুস্থ রাজনীতি’ এবং রাঙামাটিতে অবস্থান করা একটি দলের গনতান্ত্রিক রাজনীতির নামে ‘মুখোশ গনতন্ত্র’র কঠোর সমালোচনা করে সাবেক পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ নেতা ও জনসংহতি সমিতির প্রভাবশালী এই সাবেক নেতা বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব মেনেই পার্বত্য চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি আমরাও জানাই। কিন্তু চুক্তিবাস্তবায়নের নামে কিংবা বিরোধীতা করে সশস্ত্র কিংবা দেশবিরোধী তৎপরতা গ্রহণযোগ্য নয়। এসব আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র,অপরাজনীতি। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় বাধা প্রদান,মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির উপর হামলা,সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য বিতর্কিত কর্মসূচী ও চুক্তিবিরোধী কার্যক্রম গ্রহণযোগ্য নয়। ইউপিডিএফকে মনে রাখতে হবে, আমরাও কচুরিপানার মতো ভেসে আসিনি। আন্দোলন সংগ্রাম লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই আমাদের আজকের অবস্থান।’