অরণ্য ইমতিয়াজ ও মেহেরাজ সুজন
রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য ইলিপন চাকমার বিরুদ্ধে ‘ জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে নিজের পছন্দের প্রার্থী সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচিত না হওয়ায় মনক্ষুন্ন হয়ে দলীয় আনুগত্য না থাকার অভিযোগসহ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে দল থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করেছে উপজেলা আওয়ামীলীগ !
১৬ এপ্রিল উপজেলা কমিটির ৭১ সদস্যের মধ্যে ৫১ জনের উপস্থিতিতে এক সিদ্ধান্তের রেজুলেশনের ভিত্তিতে তাকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য জেলা কমিটিকে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ আব্দুল ওহাব হাওলাদার। সেই কপি জেলা আওয়ামীলীগের হাতে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পাহাড়টোয়েন্টিফোর।
আবেদনে ইলিপন চাকমার বিরুদ্ধে যে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়,তা হলো, জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে তার নিজের পছন্দের প্রার্থী সভাপতি-সম্পাদক হতে না পারায় মনক্ষুন্ন হয়ে দলীয় আনুগত্য না মেলে সাংগঠনিক কর্মসূচীতে অংশগ্রহণে অনীহা, জাতীয় দিবসের কর্মসূচীতে উপস্থিত না থাকা,১৭ মার্চ জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য আহ্বান করা হলেও অনিহা প্রকাশ করা, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচীতে অংশ না নেয়া এবং নিজে দলীয় নেতাকর্মীদের অংশ না নিতে নিরুৎসাহিত করা, ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারনায় অংশ না নেয়া এবং দলের মনোনীত প্রার্থীদের বিরোধীতা করা এবং নিজে ভোটদানে বিরত থাকা,নেতাকর্মীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন এবং টেন্ডার বাণিজ্য ও অধিগ্রহণ বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকায় দলকে সময় দিতে না পারা।

এইসব অভিযোগের সপক্ষে বেশকিছু প্রমাণসহ সভার কার্যবিবরণী জেলা আওয়ামীলীগের কাছে প্রদান করে ইলিপন চাকমার অব্যাহতির আবেদন করেছেন উপজেলা সভাপতি আব্দুল ওহাব হাওলাদার ।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ইলিপন চাকমা বলেন-‘ আমার কোনো অন্যায় হলে সভাপতি মহোদয় আমাকে কৈফিয়ত তলব করতে পারত, কিন্তু তিনি সেটা না করে সরাসরি অব্যাহতি দাবি করে জেলা আওয়ামী লীগের নিকট আবেদন করেছে। আমি এমন কোন কাজ করিনি যাতে আমাকে কৈফিয়ত তলব না করে অব্যাহতির জন্য আবেদন করা হবে এবং আমার মনে হয় আমি জেলা পরিষদের সদস্য হওয়ায় সভাপতিসহ কুচক্রি মহল আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে,অথচ আমি জেলা পরিষদের সদস্য হবার পর নানিয়ারচর উপজেলায় অনেক গুলো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে আমি জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করেছি বলে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমি নাকি বিগত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের হয়ে ভোট চাইনি। এটা মিথ্যাচার । নানিয়ারচরের দুর্গম অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন জায়গায় নৌকার প্রচারণা আমি করেছি এবং বেতছড়ির মত জায়গাতেও স্মরণকালের সবচে বেশি ভোট নৌকা পেয়েছে আমি যাওয়াতেই।’
এর আগে একজন নেতার সাথে ইলিপন চাকমার মোবাইল আলাপের একটি ধারণকৃত অডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে,যাতে ওই নেতাকে দলীয় কর্মসূচীতে অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ইলিপন বিরোধী শিবিরের নেতারা। ওই অডিও আলোচনার পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ফেসবুক সরগরম করে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ওই অডিও রেকর্ড পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট কম’র হাতেও এসেছে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে লিখিত একটি আবেদন পেয়েছেন জানিয়ে রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর বলছেন, একটি আবেদন আমরা পেয়েছি,যেখানে উপজেলা আওয়ামীলীগের ৭১ সদস্যের মধ্যে ৫১ জনের সাক্ষর আছে। বিষয়টি নিয়ে ঈদের পর আমরা জেলা কমিটি বসব,সেখানে সবকিছু পর্যালোচনা করে দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
জেলায় একজন ‘বড় ঠিকাদার’ হিসেবেই সুপরিচিত ইলিপন চাকমা সর্বশেষ সম্মেলনে নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। পরে জেলা পরিষদ পুনর্গঠিত হলে সদস্য হিসেবেও মনোনীত হন তিনি। কিন্তু সর্বশেষ জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে শীর্ষ একটি পদে প্রার্থী হয়েও নিজেকে সড়িয়ে নেয়া এক নেতার অনুসারি হিসেবে পরিচিত ইলিপন চাকমার সাথে উপজেলা আওয়ামীলীগের বিরোধের পেছনে ‘অন্তর্দলীয় কোন্দল’ই মূল কারণ কিনা সেটি নিশ্চিত হতে পারেনি পাহাড়টোয়েন্টিফোর। তবে গত কয়েকবছর ধরে দ্বি-ধারায় বিভক্ত নানিয়ারচর উপজেলার আওয়ামীলীগের রাজনীতির বিরোধ এবার খোলস ছেড়ে প্রকাশ্যেই বেরিয়ে এলো, খোদ সাধারন সম্পাদকের অব্যাহতি চেয়ে আবেদনের মধ্য দিয়ে। এখন দেখার পালা,কোথাকার পানি শেষাবধি কোথায় গড়ায়…।