মিশু মল্লিক
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের টানা ছুটিতেও পর্যটক শুন্যতায় ভুগছে পর্যটন নগরী রুপের রাণী রাঙামাটি। ছুটিতে পর্যটনের ভরা মৌসুমেও আশানুরুপ পর্যটক আসেনি রাঙামাটিতে। বেশ কিছু মাস যাবত পর্যটকের যে খরা চলছিল সেই ক্ষতি ঈদে পুষিয়ে নেয়ার আশা করলেও, সেই আশা পূরণ হয়নি ব্যবসায়ীদের। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন পর্যটক সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে রাঙামাটির প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, যথেষ্ট লোক সমাগম থাকলেও যাদের বেশিরভাগই স্থানীয় লোকজন। যারা ঈদ উপলক্ষে পরিবার পরিজনের সাথে সময় কাটাতে বিনোদনকেন্দ্র গুলোতে ভিড় করেছেন। রাঙামাটির বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত নয়। অন্যান্য ঈদ মৌসুমে রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের সরব উপস্থিতি থাকলেও এবারের চিত্র যেন সম্পূর্ণই বিপরীত। যেখানে পর্যটকদের চাপে হোটেল-মোটেলে রুম না পেয়ে রাস্তায় থাকার নজির রয়েছে, সেখানে আবাসিক হোটেলগুলোর প্রায় অর্ধেক খালি। নেই তেমন কোন অগ্রিম বুকিং। শহরজুড়ে লক্ষ্য করা যায়নি পর্যটকদের গাড়ির চাপ অথবা কাপ্তাই হ্রদে ভেসে বেড়াতে দেখা যায়নি পর্যটকে পরিপূর্ণ টুরিস্ট বোট।
হোটেল নাদিশা ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার মোঃ জসীম উদ্দিন বলেন, ঈদের ছুটি উপলক্ষে আমরা সবসময় বাড়তি একটা প্রস্তুতি রাখি। কারণ এই সময়টাতে প্রচুর পর্যটক সমাগম হয় রাঙামাটিতে। কিন্তু এবার আমরা খুবই হতাশ। যেমন পর্যটক আশা করেছিলাম তার অর্ধেক পর্যটকও আসেনি। আপাতত আমাদের হোটেলের ৬০ শতাংশের মত বুকিং আছে। আগামীকাল সেটা আরো কমে যাবে।
হোটেল গ্রীণ ক্যাসেলের ম্যানেজার মোঃ শরীফ বলেন, আমাদের এখানে মোট ৩৭টি রুম রয়েছে। কিন্তু এখন রুম খালি আছে প্রায় ১৮টির বেশি। সুতরাং আমাদের বুকিং ৫০ শতাংশের বেশি নয়। আমরা আরো অনেক বেশি পর্যটক সমাগম হবে আশা করেছিলাম।
একই কথা বলেন হোটেল মতি মহলের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ শফিউল আজম। তিনি জানান, ঈদের মৌসুম যেকোন পর্যটন শহরের জন্য ব্যবসার মৌসুম। কিন্তু এবারের ঈদে পর্যটকদের উপস্থিতি সত্যিই হতাশাজনক।
রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের আকর্ষণের প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে কাপ্তাই হ্রদ। বোটে করে কাপ্তই হ্রদ ভ্রমণ না করলে রাঙামাটি বেড়াতে আসা যেন পূর্ণই হয়না। কিন্তু পর্যটকদের হতাশাজনক উপস্থিতির প্রভাব পড়েছে রাঙামাটির টুরিস্ট বোট সংশ্লিষ্টদের উপরও। আশানুরুপ পর্যটক না হওয়াতে ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।
রাঙামাটি পর্যটন ঘাটের ইজারাদার এবং ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রমজান আলী বলেন, ঈদের জন্য আমরা খুব ভালো একটা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম ছুটিতে ভালোই পর্যটক আসবে। কিন্তু আমাদের আশা অনুযায়ী পর্যটক আসেনি। তাই অনেক বোট চালকই ভাড়া না পেয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন।
রাঙামাটি ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস গাইড এর স্বত্ত্বাধিকারী হিমু বাপ্পী জানান, সচরাচর পর্যটকন মৌসুমগুলোতে আমাদের বিভিন্ন রিসোর্ট ও কটেজের জন্য ভালোই বুকিং থাকে। কিন্তু এবার তেমনটা হয়নি। আমাদের বেশিরভাগ কটেজ এখনো বুকিং হয়নি। এদিকে ছুটি শেষ হয়ে গেলে আর বুকিং পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
সরেজমিনে রাঙামাটির টেক্সটাইল মার্কেটগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রেতারা প্রায় অলস সময় কাটাচ্ছেন। ক্রেতার সংখ্যা খুবই নগন্য। তন্তুজ টেক্সটাইলের স্বত্ত্বাধিকারী কল্পনা চাকমা বলেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটক আসবে সেই আশাতে দোকানে অনেক নতুন পণ্য ও আইটেম তুলেছিলাম। কিন্তু পর্যটকদের উপস্থিতি দেখে আমরা ব্যবসায়ীরা প্রচন্ড হতাশ।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৃজন কান্তি বড়ুয়া বলেন, বর্তমানে যে পরিমাণ ট্যুরিস্ট এসেছেন আমরা আশা করেছিলাম এর থেকে আরেকটু বেশি ট্যুরিস্ট আসবে। কিন্তু যেহেতেু তাপদাহ চলছিল এবং আবহাওয়া জনিত কারণেও আশানুরুপ পর্যটক হয়নি। বর্তমানে আমাদের ৭০ শতাংশ বুকিং রয়েছে এবং আগামী শুক্র ও শনিবারের জন্যও কিছু বুকিং আছে। আশা করছি আগামীতে পর্যটক উপস্থিতি আরো বাড়বে।
সিম্বল অব রাঙামাটি খ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক হলিডে রিসোর্ট, ডিসি বাংলো পার্ক, রাঙামাটি পার্কসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের চেয়ে স্থানীয়দের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা গেছে।