শংকর হোড় ॥
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ৪ সেপ্টেম্বর ১৩টি বিভাগে ২১টি পদে নিয়োগের জন্য আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়স ৩০বছর নির্ধারণ করে দিয়েছে। যেটা বাংলাদেশের সব নিয়োগের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুসারে এই অঞ্চলে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য আরো ১০ বছর শিথিলের বিধান থাকলেও এই নিয়োগে সেটা অনুসরণ না করার অভিযোগ উঠেছে। তবে উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, বয়সের ক্ষেত্রে ২০২৩ সালে পাশ হওয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড(কর্মচারী) চাকরি প্রবিধানমালা-২০২২ অনুসরণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাথে কোনও সাংঘর্ষিক হবে না।
২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রার্থীর বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর নির্ধারণ করা হয়। তবে সরকারি বিধি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী(উপজাতি) ও অ-উপজাতিয় স্থায়ী বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে প্রার্থীতার বয়স ৪০ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য নিয়োগে এমন নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ ৪ সেপ্টেম্বরের নিয়োগে বয়স শিথিলের বিষয়টি অনুসরণ করা হয়নি।

রাজেশ ত্রিপুরা নামে এক প্রার্থী বলেন, উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োগগুলো ফেয়ার হয়। এজন্য বসেছিলাম এই নিয়োগগুলোর জন্য। প্রায় চার বছর পর তারা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিল। কিন্তু বয়স দেখে আমরা হতাশ হয়েছি। করোনার সময়টার জন্য এমনিতেই আমাদের সময় নষ্ট হয়েছে। তার মধ্যে তারা বয়স নির্ধারণ করে দিয়েছে ৩০ বছর। করোনার জন্য যাদের বয়স ৩০ অতিক্রম করেছে, সরকার তাদের জন্য তিন বছর বয়স শিথিল করে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করেছে। সার্কুলারে দেখলাম মার্চে পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে মার্চে নিয়োগটি ছাড় দেয়া হয়েছে। অন্তত উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োগটা জুলাইয়ের মধ্যে দিলেও আমরা উপকৃত হতাম।
মোসলেহ উদ্দিন নামে আরেক প্রার্থী বলেন, চুক্তি অনুসারে উন্নয়ন বোর্ডে চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে উপজাতীয় প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এটা যদি সরকার মানতে পারে, এবং তিনি তিন পার্বত্য জেলার বাসিন্দা হবেন, এটাও মানতে পারলে তবে চুক্তি অনুযায়ী বয়স শিথিলের বিষয়টি কেন উন্নয়ন বোর্ড মানতে পারবে না সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। কার স্বার্থে এমন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আমরা বুঝতে পারছি না। তিনি নিয়োগের জন্য সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের চাকরির ক্ষেত্রে প্রাপ্য সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানান।
জানা যায়, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের ১৯৮৫ সালের ১৬ জানুয়ারি এক স্মারকে পার্বত্য তিন জেলার অধিবাসীদের চাকরিতে নিয়োগে ১০ বছর বয়সসীমা শিথিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০০৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মাহমুদা মিন আরার স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ২০০৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহসিনা ইয়াসমিন একটি নির্দেশনা প্রদান করেন। নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চাকুরি ক্ষেত্রে বয়সসীমা স্বাভাবিক বয়স সীমার তুলনায় ১০ বৎসর এবং শ্রম সাধ্য কর্মের ক্ষেত্রে ৫ বৎসর পর্যন্ত শিথিল করা হয়েছে।’

এদিকে এই বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ বয়স ৪০বছর অনুসরণসহ যারা প্রকল্পে চাকরি করছেন অথচ বয়স ত্রিশের ওপর চলে গেছে তাদেরকে নিয়োগ পরীক্ষায় সুযোগ দেয়ার জন্য বয়স শিথিলের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আবেদন করেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এই বিষয়ে কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আলম চৌধুরী বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড(কর্মচারী) চাকরি প্রবিধানমালা-২০২২ অনুসরণ করা হয়েছে। নতুন প্রবিধানমালায় যেভাবে আছে আমরা সেটা অনুসরণ করছি। উন্নয়ন বোর্ডের এই আইন পার্বত্য চুক্তির সাথে সাংর্ঘষিক কিংবা সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা লংঘন হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, এটি সাংঘর্ষিক নয় এবং কোনও নির্দেশনা লংঘন করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের নিয়োগও পার্বত্য জেলায় হচ্ছে, সেখানে তো বয়স ত্রিশই অনুসরণ করা হচ্ছে। উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বের নিয়োগে বয়স শিথিলের বিষয়টি মানা হলেও বর্তমানে কেন মানা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা হয়েছে। তাই নতুন প্রবিধানে যেভাবে আছে, সেভাবেই আমরা কাজ করছি।