নুরুল করিম আরমান, লামা ॥
গত বর্ষায়ও কাদা মাটি মাড়িয়ে আমার ছেলেকে বিদ্যালয়ে যেতে হতো। শুষ্ক মৌসুমে বিদ্যালয়ে যাওয়া সহজ হলেও বর্ষাকালে ছেলেটা বিদ্যালয়ে যেতে চাইত না। এখন সড়কটি ব্রিক সলিং করায় চলতি বর্ষা থেকে বিদ্যালয়ে যেতে আর অসুবিধা হবে না। কথাগুলো বলছিলেন বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা এলাকার হিমছড়ি পাড়ার বাসিন্দা আবুল কালাম। শুধু আবুল কালাম নয়, একই কথা বলেন পাড়ার নুর আলম, গোলাম রহমান, ইসমত আরা ও পাড়া কারবারী সৈয়দ আলম। তারা বলেন, ১৯৭৯ইং সাল থেকে হিমছড়ি পাড়ায় বসতি শুরু হয়। এ পাড়ার শতকরা নিরানব্বই জনেরই পেশা কৃষি। কিন্তু পাড়ার সড়কটি এতদিন কাচা থেকে যাওয়ায় এখানে উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাত, স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থী ও রোগী বহনে পাড়াবাসীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। এক পর্যায়ে পাড়াবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ ইসমাইলের তদবীরে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপির সুপারিশে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সড়কটি ব্রিক সলিং করে দেন। এতে বেজায় খুশি পাড়ার ৩২০ পরিবারের দেড় সহ¯্রাধিক মানুষ। এ সড়ক নির্মাণে বেড়েছে হিমছড়ি পাড়াবাসীর জীবনযাত্রার মান। এখন আর কৃষি পন্য বাজার জাতে সমস্যা হয়না। তবে পাশের অংহ্লারী মার্মা পাড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও হিমছড়ি পাড়ায় বিদ্যুৎ নেই। ফলে সন্ধ্যা নামলেই ভূতুড়ে অবস্থায় পরিণত হয় পাড়াটির ঘরবাড়ি। তাই সড়কের পর এবার বিদ্যুৎ সংযোগের দাবি তুলেছেন হিমছড়ি বাসী। তারা বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।
জানা গেছে, ইয়াংছা-মালিকপুর সড়ক থেকে হিমছড়ি পাড়ার শেষ মাথা আবুল বশরের বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার একটি কাচা সড়ক ছিল। সড়কটি কাঁচা হওয়ায় শুস্ক মৌসুমে কোনমতে চলাচল করা গেলেও প্রতি বছর বর্ষাকালে পাড়ার ১ হাজার ৬০০ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যেত। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পড়–য়া কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে বই খাতা কাদায় নষ্ট হয়ে যেত। বিশেষ করে পাড়ার কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হত এ পাড়ার লোকজনকে। গেল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় মোহাম্মদ ইসমাইল নামের এক সদস্য প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা করতে হিমছড়ি পাড়ায় গেলে পাড়ার লোকজন সড়কটি ব্রিক সলিং করার দাবী তুলেন। পরে মোহাম্মদ ইসমাইল নির্বাচনে ওই প্রার্থী ইউপি সদস্য নির্বাচিত হলে হলে কাজটি করার প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচত হয়ে সড়কটি ব্রিক সলিং করার আবেদন নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র কাছে যান ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইসমাইল। মন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সুপারিশে ২০২১-২০২২ অর্থ সালে সড়কটি ব্রিক সলিং নির্মাণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। বাস্তবায়িত এই সড়ক ব্রিক সলিং এ খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা। সড়কে রয়েছে বেশ কয়েকটি কালভার্ট, সাইড ড্রেন ও গাইড ওয়ালও।
এ বিষয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, দীর্ঘদিন সড়কটি অবহেলিত ছিল। বর্ষাকালে কাদা মাটি মাড়িয়েই সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে হত পাড়াবাসীকে। শুধু তাই নয়, সড়কটিতে কাদা মাটি থাকায় বর্ষাকালে কোমলমতি শিশুরা বিদ্যালয়ে যেত চাইতো না। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর ওয়াদা মত মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সহযোগিতায় সড়কটি ব্রিক করতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি মহোদয়ের আন্তরিকতা ও ভালোবাসায় শুধু হিমছড়ি পাড়া নয় ইয়াংছা এলাকার রাম মন্দির ও মন্দিরে যাতায়াতের রাস্তা, হাই স্কুল মাঠ ভরাট সহ ইউনিয়নের আনাচে-কানাচে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। এখন হিমছড়ি পাড়ায় শুধু বিদ্যুৎ সংযোগ আর অংহ্লারি পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে গুলিমাঠ সড়ক ব্রিক সলিং করা হলেই আর কোন সমস্যা থাকবে না।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান জেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী ত্রিদিব ত্রিপুরা জানান, হিমছড়ি পাড়া সড়কটি দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির সুপারিশে সড়কটি কার্পেটিং করার পর পাড়াবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এতে পাড়ার মানুষের যাত্রার আমূল পরিবর্তন হয়েছে।
জানতে চাইলে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুল হোসাইন চৌধুরী জানায়, এতদিন আমার ইউনিয়নের শেষপ্রান্ত হিমছড়ি পাড়াবাসী অনেকাংশে পিছিয়ে ছিল। পাড়ায় সড়কটি নির্মাণের কারণে বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূরের পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া ওই পাড়ার মানুষের জীবন জীবিকার আমূল পরিবর্তন হয়েছে।