আলাউদ্দীন শাহরিয়ার, বান্দরবান
বান্দরবানে নির্মাণের পাঁচ বছর না পেরুতেই এলজিইডি অর্থায়নে নির্মিত ভাগ্যকুল বাজারের সেতু’তে আগাগোড়া ফাটল দেখা দিয়েছে। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ফাটল ডাকতে তড়িঘড়ি করে সেতু’র উপরে কার্পেটিং করে প্রলেপ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ স্থানীয়দের।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অর্থায়নে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বান্দরবান ভাগ্যকূল তিন কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিংসহ সেতু নির্মাণ কাজের টেন্ডার দেয়া হয়। একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন কাজটি বাস্তবায়ন করেন আওয়ামীলীগের বান্দরবান পৌর শাখার সভাপতি অমল কান্তি দাস। নির্মাণ কাজের শুরুতেই নয়ছয়ের অভিযোগ উঠে ঠিকাদার এবং এলজিইডি’র দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে। নির্মাণের পাঁচ বছর না পেরুতেই ভাগ্যকূল বাজারে নির্মিত সেতু’টি আগাগোড়া লম্বা ফাটল দেখা দিয়েছে। সেতুর কয়েকটি স্থানে ছিদ্রের মত গর্তও তৈরি হয়েছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে অভিযোগ করে বলেন, সেতুটি নির্মাণে মানা হয়নি দরপত্রের নির্দেশনা। অফিসের দায়িত্বশীলদের যোগসাজশে সেতুটি নির্মাণের সময় লোড টেস্ট পরীক্ষা করা হয়নি, পর্যাপ্ত পরিমাণে কিউরিং করা হয়নি, তড়িঘড়ি করে যেনতেন ভাবে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কাজ শেষ করা হয়েছিল। স্থানীয়রা তখন প্রতিবাদ জানালেও আওয়ামীলীগ নেতার কাজ হওয়ায় অফিস তোয়াক্কা করেনি। ঠিকঠাক কাজ না করাই সেতুতে ফাটল তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান, শহীদুল ইসলাম বলেন, কাজের গুণগত মান ঠিক না থাকায় কয়েকমাস হলো ভাগ্যকূল বাজারের সেতুটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। চার-পাঁচ বছর আগেই সেতুটি নির্মাণ করেছিল এলজিইডি। একেকটা সেতু ৫০-১০০ বছরের স্থায়িত্ব পরিকল্পনা নিয়ে সেতু নির্মাণ করা হলেও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে অল্প সময়েই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফাটল ঢাকতে কৌশলে সেতুতে বালি ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগ অস্বীকার করে সেতু নির্মাণ কাজের ঠিকাদার আওয়ামীলীগের বান্দরবান পৌরশাখার সভাপতি অমল কান্তি দাস বলেন, সেতুটি সম্ভবত ২০১৭-২০১৮ সালের দিকে রাস্তাসহ নির্মাণ করা হয়েছিল। খবর নিয়ে দেখেছি মূল সেতুতে ফাটল দেখা দেয়নি, সেতুর প্লেসাইডিং ফেটেছে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে। একেকটা সেতু ৫০-১০০ বছরের জন্য তৈরি করা হয়, এত তাড়াতাড়ি কেমনে নষ্ট হবে। সেতু তৈরিকে কোনো অনিয়ম করা হয়নি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বান্দরবানের সিনিয়র প্রকৌশলী মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ভাগ্যকুল বাজারে নির্মিত সেতু ফাটলের খবর পেয়ে সেতুতে পানি জমিয়ে রেখে পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু ছিদ্র হয়ে পানি পড়ে যায়নি। সেতুর উপরের দুই ইঞ্চি ঢালাই ফেটেছে ঠিকমত কিউরিং না হওয়ায়। সেতুর উপরে রাস্তার কার্পেটিং করে দেয়া হবে যাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।