আলাউদ্দিন শাহরিয়ার, বান্দরবান ॥
বান্দরবানে কলাগাছের আঁশের সুতায় হস্তশিল্পের পণ্য তৈরি করে বাণিজ্যিক স্বপ্ন বুনছেন পাহাড়ের নারীরা। ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত কলাগাছ থেকে তৈরি করা সুতায় ফুলদানি, শতরঞ্জি, ব্যাগ, জুতা, শোপিস, টেবিল ম্যাট, প্যান্টার বক্স, কলমদানি, ফাইল ফোল্ডার, শাড়ী, কাপড়সহ বিভিন্ন ধরণের হস্তশিল্পজাত জিনিসপত্র তৈরি হচ্ছে জেলায়। স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ নেয়া পাহাড়ের নারীদের তৈরি করা দেখতে আকর্ষণীয় পরিবেশবান্ধব এসব পণ্য স্থানীয় উদ্যোক্তা ছাড়াও হাটবাজারের দোকানগুলোতে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। টেকসই এবং গুণগতমান ঠিক রেখে শিল্পটি সম্প্রসারণ করা গেলে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছলতা ফিরবে পার্বত্য জনপদে দাবী সংশ্লিষ্টদের। অপরদিকে পরীক্ষামূলক সফলতার পর বাণিজ্যিকভাবে কলাবতী শাড়ি তৈরির কাজও চলছে। বাণিজ্যিক উন্নতমানের প্রথম শাড়ীটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিতে চান প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা স্বপ্নবাজ বান্দরবানের জেলা প্রশাসক। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে উপহারের জন্য বাণিজ্যিক প্রথম শাড়ীটি তৈরির কাজ অনেকটায় শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০২১ সালে প্রথম কলাগাছ থেকে সুতা তৈরির জন্য পরীক্ষামূলক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। আর্থ-সামাজিকভাবে পাহাড়ের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীদের নিয়ে আরম্ভ করা এই প্রকল্পটি দ্রুতই আলো ছড়াতে শুরু করে। জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তীবরীজির আন্তরিক প্রচেষ্ঠায় শিল্পটি সাফল্যের পথে এগিয়ে যাচ্ছে ধাপে ধাপে। ইতিমধ্যে কলাগাছের সুতায় ফুলদানি, শতরঞ্জি, ব্যাগ, জুতা, শোপিস, টেবিল ম্যাট, প্যান্টার বক্স, কলমদানি, ফাইল ফোল্ডার হস্তশিল্পজাত জিনিসপত্র স্থানীয় উদ্যোক্তাদের দোকানগুলোতে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। মাত্র দু’বছরের চেষ্টায় ২০২২ সালের এপ্রিলে কলাগাছের আশেঁর সুতায় পরীক্ষামূলক ভাবে শাড়ি তৈরি করে চমকে দেন জেলা প্রশাসক। এমন সৃষ্টিশীল কাজের জন্য সর্বত্র প্রশংসায় ভাসছেন এই নারী।
এই উদ্যোগে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এবং বিশ^বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা’সহ কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সহযোগীতায় কলাগাছের আশঁ থেকে সুতা এবং পন্য তৈরির প্রকল্পটি আলো ছড়াচ্ছে পাহাড়ে। প্রকল্পের সাফল্য ও উদ্যোক্তাদের চাহিদার ভিত্তিতে সহ¯্রাধিক নারীকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে প্রকল্পটি বর্তমানে সদর, রুমা, রোয়াংছড়ি, লামা ও আলীকদম উপজেলায়ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। পাইলট প্রকল্পে সফলতার পর কলাগাছের সুতায় বাণিজ্যিকভাবে তৈরি প্রথম শাড়িটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেয়া হবে। ইতিমধ্যেই শাড়িটি তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কারিগর রাধাবতী দেবী বলেন, জীবনে অনেক রকমের শাড়ীই তৈরি করেছি। কিন্তু কলাগাছের আঁশের সুতায় শাড়ী তৈরি প্রথম করলাম। সম্ভবত এটি বাংলাদেশে তৈরি প্রথম শাড়ী। আমার নামের সাথে মিল রেখে শাড়ীর নাম দেয়া হয়েছে “কলাবতী শাড়ী। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ জেলা প্রশাসকের কাছে।
প্রল্পপ বাস্তবায়নে সহযোগী বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সাইং সাইং উ বলেন, পাহাড়ের নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি ও দারিদ্রতা নিরসনে কলাগাছের আঁশ থেকে সুতা এবং বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরি একটা চ্যালেঞ্জ ছিলো জেলা প্রশাসকের। যেমন: ফুলদানি, শতরঞ্জি, ব্যাগ, জুতা, শোপিস, টেবিল ম্যাট, প্যান্টার বক্স, কলমদানি, ফাইল ফোল্ডার, শাড়ী, কাপড়, পাপস’সহ বিভিন্ন ধরণের হস্তশিল্পজাত পণ্য।
জেল প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তীবরীজি বলেন, পরিত্যক্ত কলাগাছের আঁশ থেকে সুতা তৈরির উদ্যোগ নেন ২০২১ সালে। পরবর্তীতে স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলাগাছের আঁশের সুতায় বিভিন্ন ধরণের জিনিসপত্র তৈরির জন্য ঢাকা থেকে প্রশিক্ষক এনে পাহাড়ের সহ¯্রাধিক নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। কলাগাছের সুতায় তৈরি হস্তশিল্পের পন্যগুলো দেখতে আকর্ষণীয় এবং পরিবেশ বান্ধব। পাহাড়ের প্রশিক্ষণ নেয়া নারীরা হস্তশিল্পের পণ্যের বাণিজ্যিক স্বপ্ন বুনছেন। এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো কলাগাছের আঁশের সুতায় শাড়ী তৈরি। সম্ভবত এটিই প্রথম বাংলাদেশে। এখন বাণিজ্যিকভাবে কলাবতী শাড়ি তৈরির কাজও চলছে। বাণিজ্যিকভাবে তৈরি উন্নতমানের প্রথম শাড়ীটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিতে চাই। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে উপহারের শাড়ীটি তৈরির কাজ অনেকটায় শেষ পর্যায়ে। পাহাড়ের নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি এবং ব্যান্ডিং বান্দরবান এর জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।