লংগদু সংবাদদাতা ॥
রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের শুঁটকি জেলার চাহিদা মিটিয়েও এখন ছড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়মিত পাঠানো হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির এসব শুঁটকি। বাংলাদেশে উৎপাদিত দেশীয় প্রজাতির মিঠা পানির শুঁটকির একটি বড় অংশ উৎপাদন হয় কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য দিয়ে। আগে দামে সস্তা থাকায় শুঁটকিকে গরীবের খাবার বলে তাচ্ছিল্য করা হলেও এখন শুঁটকির দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বদলে গেছে অবস্থানও। শুটকি এখন দেশের ধনীদের খাবার ম্যানুতে স্থান পাচ্ছে। এমনকি দেশের বিভিন্ন নামিদামি রেস্টুরেন্টসহ বিলাসবহুল হোটেলেও শুঁটকির এখন বেশ কদর।
শীতের শুরু থেকে কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন এলাকার নদী পাড়ে কাঁচা মাছকে রোদে শুকিয়ে ‘শুঁটকি মাছ’ উৎপাদনের ধুম পড়েছে। আগামী এপ্রিল-মে পর্যন্ত টানা চলবে শুঁটকি উৎপাদনের মৌসুম। অনুকূল আবহাওয়া ও সূর্যালোকের কারণে লংগদু উপজেলায় প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি কাঁচা মাছের শুঁটকি উৎপাদন হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
লংগদু উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, এসব ছোট খাটো অনেক শুটকির সাইট, তবে কাপ্তাই হ্রদের কাট্টলী বিলের মধ্যস্থানে অবস্থিত কাট্টলী বাজারে গিয়ে দেখা যায় বৃহৎ পরিসরের বেশ কয়েকটি শুটকির ঘের অনেকটা দুর থেকে মনে হয় এ যেনো কোনো শুটকি পল্লী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সের ২০/৩০ জন মানুষ ব্যস্ত শুঁটকি উৎপাদনে। কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন এলাকা হতে অসংখ্য ট্রলার মাছ আহরণ করে প্রতিদিন কাট্টলী বিলের বাজার ঘাটে ভিড়ছে। এসব ট্রলারে আসা বিভিন্ন কাঁচা মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করা হচ্ছে। এছাড়াও মাইনী মুখ, কালাপাকুজ্জা, মাহিল্যা, গুলশাখালী, বগাচতর, ভাসাইন্যাদম, ফোরের মূখ, সাদু টিলাসহ লংগদু উপজেলার নদী পাড়ের মানুষের কয়েক হাজার বসত ঘরের ছাদে ও উঠানে মাচা বানিয়ে তৈরি হচ্ছে শুঁটকি।
উৎপাদনকারীরা জানান, উপজেলায় উৎপাদিত বেশিরভাগ শুঁটকিতে কোনো কেমিক্যাল মেশানো হয় না। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে নদী পাড়ের পাশে মাচা তৈরি করে এ শুঁটকি তৈরি করা হয়। তাই কাপ্তাই হ্রদের শুঁটকির চাহিদা সারা বাংলাদেশেই বেশি।
উপজেলার দুই একজন শুঁটকি ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানাযায়, এখানে কেচকি, চাপিলা, চান্দা, পুঁটি, শোল মাছ, চিংড়ি মাছ, বাইম মাছ, ফলিপাতা মাছ, তেলাপিয়া মাছসহ অন্তত ১২ থেকে ১৫ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয়। বর্ষাকালে টানা বৃষ্টির সময় ছাড়া বছরের ৫/৬ মাস এখানে শুঁটকি উৎপাদন চলে। আর নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-মে পর্যন্ত এখানে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ’শ থেকে ছয়’শ কেজি কাঁচা মাছের শুঁটকি উৎপাদিত হয়।
এবিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।