অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই ॥
কাপ্তাই উপজেলার অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু নামে পরিচিত কাপ্তাই ইউনিয়নের জেটিঘাট এলাকা। সম্প্রতি জেটিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সুদূর বিলাইছড়ি, জুরাছড়িসহ কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে নৌযোগে আসছে সারি সারি ফুল ঝাড়ু। নৌকা থেকে এসব ফুল ঝাড়ুগুলো সারি সারি করে উঠানো হচ্ছে জেটিঘাটে অপেক্ষাকৃত ট্রাকে। পাহাড়ের উৎপাদিত এসব ফুলের ঝাড়ুর কদর রয়েছে সারা দেশ জুড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব ফুলের ঝাড়ু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিকরা।
ফুলের ঝাড়ু পরিবহনে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কাজ করছে স্থানীয় শ্রমিক হাশেম। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছরই তিনি এই মৌসুমে ফুলের ঝাড়ু পরিবহনে কাজ করে আসছে। দৈনিক ৫শত টাকা মজুরিতে পাইকার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ফুলের ঝাড়ু ট্রাকে উঠানোর কাজে সহযোগিতা করেন তিনি। এইভাবে প্রায় প্রতিদিনই তিনি কাজ করছেন, তবে সপ্তাহের শনিবার সাপ্তাহিক হাটে ব্যস্ততা একটু বেশি থাকে। ওইসময় তিনি ভোর থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত ঝাড়ু সরবারহ কাজে সময় দিয়ে থাকেন। ওইসময় বাড়তি আয় হয় তার। এরকম স্থানীয় বেশ কয়েকজন শ্রমিক প্রায় দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ঝাড়ু সরবারহ করার কাজ করে সংসার চালান বলে জানান।
এদিকে ফুল ঝাড়ু বিক্রয় করতে কাপ্তাই জেটিঘাটে আসা বিলাইছড়ির ফারুয়ার বাসিন্দা সুইসাপ্রু মারমাসহ বেশ কয়েকজন বিক্রেতা জানান, পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে ফোটা এই ফুলের ১০ থেকে ১৫টি দিয়ে আঁটি বেঁধে ঝাড়ু বানানো হয়। সেই ঝাড়ু স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় ১০ থেকে ১৫ টাকায়। বেশ কয়েকবছর ধরে তারা এই ফুল ঝাড়ু বিক্রয় করে ভালো লাভ পাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম শহরের বহাদ্দারহাট থেকে আসা মনিরুল ইসলাম নামে এক পাইকারি ফুল ঝাড়ু ক্রেতা জানান, পাহাড়ের ফুল ঝাড়ুর কদরের কথা শুনে তিনিও আজ বেশ কয়েক বছর ধরে কাপ্তাই জেটিঘাট থেকে ঝাড়ু ক্রয় করে আসছেন। তিনি জানান, প্রতি ট্রাকে প্রায় তিন হাজার বান্ডেল ফুল ঝাড়ু পরিবহন করা যায়। এছাড়া প্রতি বান্ডেল ১ থেকে ২ হাজার টাকা ক্রয় করে থাকেন। পাশাপাশি সেগুলো শহরে নিয়ে খুচরা বাজারে বিক্রয় করে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা আয় হয় তার।
এরকম কাপ্তাইয়ে ফুল ঝাড়ু ক্রয় করে আসা সুদূর ফেনীর বাসিন্দা মোঃ আরমান সহ বেশ কয়েকজন জানান, পাহাড়ের এসব ফুল ঝাড়ু ক্রয় করে যেইভাবে লাভবান হওয়া যায়, সেটা দেশের অনান্য প্রান্তের তুলনায় বিরল। কেননা কাপ্তাই থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে এই পাহাড়ী ফুল ঝাড়ু ক্রয় করে তা ভালো দামে বাইরে বিক্রয় করা যায়। এছাড়া কাপ্তাইয়ে পরিবহন ব্যবস্থা অনেক ভালো হওয়াতে দ্রুত সময়ে শহরে পৌঁছানো সম্ভব হয়। তাই এটি অনেকের কাছে জনপ্রিয় ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
কাপ্তাই জেটিঘাট হতে ঢাকা, চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ফুল ঝাড়ু পৌঁছে দিচ্ছেন ট্রাক চালক ইলিয়াছ, রহমান আলী সহ বেশ কয়েকজন। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কাপ্তাইয়ের সাথে সরাসরি শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়াতে অনেকটা কম পরিশ্রম ও স্বল্প মূল্যে এসব ফুল ঝাড়ু গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়। পাশাপাশি কাপ্তাই সড়কে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতির ফলে অনেক ঝামেলা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে বেশ কয়েকজন চালক জানান, জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে বর্তমানে পরিবহন ব্যয় অনেকটা বেড়ে গেছে। যার ফলে বর্তমানে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
প্রসঙ্গত, প্রতিবছরের এই মৌসুমে দুর্গম বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি এবং কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে এসব ফুল ঝাড়ু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।