অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই ॥
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা কৃষি সমৃদ্ধ একটি উপজেলা। যেখানে সমতল ভূমি ছাড়াও উঁচু-নিচু পাহাড়ি স্থানে বিভিন্ন মৌসুমী ফল, শাক-সবজির চাষাবাদ হয়ে থাকে। প্রতিবছরই উপজেলার বাগানগুলোতে মৌসুমী ফলের ব্যাপক চাষাবাদ হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আম। বিভিন্ন জাতের আমের চাষ হয়ে থাকে উপজেলার এসব বাগানগুলোতে। তবে এইবার প্রথমবারের মতো এক ভিন্ন জাতের আমের দেখা মিলেছে কাপ্তাইয়ের একটি আমবাগানে। যার নাম হচ্ছে ‘ব্যানানা ম্যাংগো’। বর্তমানে উপজেলা জুড়ে নজর কেড়েছে বিশেষ প্রজাতির এই আম। যা দেখতে অনেকটাই সাগর কলার মতো। আসলে তা কলা নয়, একটু কাছে গিয়েই বুঝা যায় এটি আসলে আমই। এ আমের নাম ব্যানানা ম্যাংগো বা কলা আম।
জানা গেছে, থাইল্যান্ডভিত্তিক এ আম স্বাদে ও গন্ধে অনন্য। দেখতে কলার মতো লম্বা, পাকার সময় দুধে আলতা মেশানো গোলাপি রঙের, আঁটি চোকা পাতলা, রয়েছে প্রকৃত আমের স্বাদ। অন্য সব আমের তুলনায় এই বিশেষ জাতের আম তুলনামূলক অনেক মিষ্টি। আমটি দেখতে কলার মতো, তাই একে বলা হয় ব্যানানা ম্যাংগো। আমটির আরো কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আমটি পাকলে পাকা কলার মতো হলুদ দেখায়। অনেক সময় সিঁদুরের মতো রঙও দেখা যায়। আমটির স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয় হয়ে থাকে। খোসা একেবারে পাতলা। আমের আঁটি অত্যন্ত পাতলা। আঁশ কম। এছাড়া পরিপক্ব অবস্থায় একটি আমের ওজন ৩০০ গ্রাম থেকে ৩৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। সাধারনত বছরের জুনের শেষ দিকে ও জুলাইয়ের শুরুতেই আমটি পরিপক্ক হয়। আমটির মিষ্টতা ভালো। এই আমটি মিষ্টতা ল্যাংড়া আমের মতো। বর্তমানে আমটি দেশে কম প্রচলিত হলেও বিশ্বে এই আমটির জনপ্রিয়তা রয়েছে। সেইসাথে আমটির আকার, রং, স্বাদ ও মিষ্টতার কারণে বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে আমটি রপ্তানি হচ্ছে। তবে বাংলাদেশেও এখনো বিভিন্ন জায়গায় আমটির চাষ হচ্ছে। এর চাষ পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ। তাই বাণিজ্যিকভাবে বাড়ির আঙ্গিনায়, ছাদে বা টবে অনায়াসে চাষ করা যায়।
ব্যানানা মেঙ্গো বা কলা আম প্রসঙ্গে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আমটি মূলত থাইল্যান্ডের একটি জাত। বাংলাদেশে দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ আম। কেউ শখে কেউবা আবার বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন এ বিদেশি আম। আমটি বর্তমানে পাহাড়ি অঞ্চলেসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এ জাতের আমের ভালো ফলন হয়।
প্রথমবারের মতো ব্যানানো ম্যাংগো চাষ করেছেন কাপ্তাইয়ের শৌখিন চাষী মধু মঙ্গল তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি পেশায় একজন প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, উনার শখের বাগানে বিভিন্ন জাতের আমের চাষ হয়ে থাকে। তবে উনার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিলো ব্যানানো ম্যাংগো সম্পর্কে জানার পর তিনি তার বাগানে গাছটি রোপণ করবেন। যেইভাবা সেইকাজ, তিনি খাগড়াছড়ি তার পরিচিত এক আমচাষীর কাছ থেকে এই ব্যানানা ম্যাংগোর চারা সংগ্রহ করে তার কাপ্তাইয়ের বাগানে রোপণ করেন। তিনি প্রায় ১০ থেকে ১২টি চারা রোপণ করেছিলেন প্রায় কয়েকবছর পূর্বে। তবে এইবছরই প্রথম তিনি তার বাগানে ব্যানানা ম্যাংগো জাতের আমের দেখা পেয়েছেন। এছাড়া তিনি জানান, তার বাগানে ব্যানানো ম্যাংগো ছাড়াও মিয়াজাকি, রেড আইবারি, আম্রপালি সহ বিভিন্ন জাতের আম চাষ হচ্ছে। তিনি এতে সফলতা পেলে ভবিষ্যতে আরো বৃহৎ পরিসরে আমের চাষ করবেন বলে আশা করছেন। এজন্য তিনি কৃষি বিভাগের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
কাপ্তাই উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. ইমরান আহমেদ জানান, প্রতিবছরই কাপ্তাইয়ে আমের খুব ভালো ফলন হয়ে থাকে। আমরা আশা করছি এবছরও আমের ভালো ফলন পাওয়া যাবে। সেইসাথে কাপ্তাইয়ে নতুন জাতের যেই ব্যানানা ম্যাংগো আমটি চাষ হচ্ছে বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। আমচাষী মধু মঙ্গল তঞ্চঙ্গ্যার এমন সফলতা দেখে উপজেলার অনান্য চাষীরাও আগ্রহী হবে। তাছাড়া কৃষিবিভাগ থেকে উপজেলার আমচাষীদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। আগামীতেও এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।