অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই
রাঙামাটি কাপ্তাই উপজেলার ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র জেটিঘাট এলাকায় কাপ্তাই লেকের উপর প্রতি সপ্তাহের শনিবার ও বৃহস্পতিবার বসে ভাসমান কলার হাট। যেখানে রাঙামাটির বিভিন্ন দুর্গম এলাকা থেকে নৌযোগে বিপুল পরিমাণ কলার ছড়া নিয়ে বিক্রয় করতে আসেন চাষীরা। বিশেষ করে পার্বত্য অ লের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত কলা ফরমালিন মুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ার ফলে এর বেশ চাহিদা ও কদর রয়েছে। তাই এসব কলা কিনতে জেটিঘাটে ভিড় জমান দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পাইকারি ক্রেতারা।
সম্প্রতি কাপ্তাই জেটিঘাটের ভাসমান কলার হাটে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি কলা নিয়ে একের পর এক ইঞ্জিন চালিত বোট ভিড়ছে ঘাটে। বোট ভিড়ার সাথে সাথেই পাইকার ক্রেতারা কলাগুলো কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন। হচ্ছে দাম কষাকষি। দরদামে মিলে গেলেই বোট থেকে কলার ছড়া গুলো তোলা হচ্ছে ট্রাকে। পাহাড়ে উৎপাদিত এসব কলার ছড়া চলে যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
কাপ্তাই হ্রদের ওপর এই ভাসমান কলার হাট নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলা সদর, ধুপশীল, লতাপাহাড়, ফারুয়া, রাইক্ষং, কেংড়াছড়ি, কাপ্তাইয়ের হরিনছড়া, বারুদগোলা সহ বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ী অ ল থেকে চাষীরা কাপ্তাই জেটিঘাট বাজারে কলা নিয়ে আসেন বিক্রয়ের জন্য। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এবং কলার দাম বেশ সাশ্রয়ী হওয়ায় চট্টগ্রাম শহরের পাইকার ক্রেতাদের আগ্রহ থাকে এই কলার হাটে। এছাড়া কাপ্তাই জেটিঘাট কলার হাটে একদিনেই লক্ষ লক্ষ টাকা কলার কেনাবেচা হয়ে থাকে।
বিলাইছড়ির দুর্গম ফারুয়া এলাকা থেকে নিজ বাগানের কলা বিক্রয় করতে এসেছেন মনিধন ত ঙ্গ্যা। তিনি জানান, দুর্গম ফারুয়া থেকে বোটে করে কাপ্তাই জেটিঘাট কলা নিয়ে আসতে প্রায় ৭ থেকে ৮ ঘন্টা লেগে যায়। এতে সময় ও অর্থ দুইটাই অনেক ব্যয় হয়। তবে কষ্ট হলেও কাপ্তাই জেটিঘাটে কলা বিক্রয় করতে আনতে পারলে কিছুটা লাভবান হওয়া যায়। তিনি জানান, এক হাটেই তিনি প্রায় ২ লক্ষ টাকার কলা বিক্রয় করে থাকেন। এতে প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়ে থাকে।
এছাড়া কলা বিক্রয় করতে আসা বিলাইছড়ির দুর্গম রাইক্ষং পাড়ার কৃষক সাধনময় চাকমা জানান, আমাদের নিজস্ব বাগানের উৎপাদিত এই কলা আমরা জেটিঘাট হাটে নিয়ে আসি। তবে একসময় লেকের পানি কমে যাওয়ায় কষ্ট হলেও বর্তমানে লেকের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক ভালো হয়েছে। এতে জেটিঘাটে কলা বিক্রয় করে আমরা লাভবান হচ্ছি। এছাড়া এইভাবে কলা বিক্রি করেই আমাদের সবার সংসার চলে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাপ্তাই জেটিঘাটে কলা কিনতে আসেন ব্যাপারীরা। তাদের মধ্যে একজন চট্টগ্রাম শহরের বাসিন্দা মোঃ আব্দুর রহিম। তিনি জানান, চট্টগ্রাম ফিরিঙ্গি বাজারে তার ফলের দোকান রয়েছে। বিশেষ করে কাপ্তাইয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়াতে তিনি প্রতি শনিবার কাপ্তাই জেটিঘাটে ভোরবেলা চলে আসেন কলা কিনতে। এখান থেকে কলা কিনে বেশ লাভবান হচ্ছেন বলে জানান তিনি। এরকম চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারি থেকে আসা বেশ কয়েকজন পাইকারদের সাথে কথা হলে তারাও জানান, পাহাড়ের কলাগুলো খুব ভালো। দামও অনেকটা কমে পাওয়া যায়। প্রতি সপ্তাহেই তারা এক একজন ব্যবসায়ী ২ থেকে ৩টি ট্রাকে করে লক্ষাধিক টাকার কলা শহরে নিয়ে যায় বলে জানান।
এছাড়া কাপ্তাই জেটিঘাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা যায়, কাপ্তাইয়ের জেটিঘাটে ভাসমান এই কলার হাট একটি ঐহিহ্যবাহী বাজার। বিশেষ করে দীর্ঘবছর ধরে এই হাট বসে আসছে। বর্তমানে এই ভাসমান হাটের জনপ্রিয়তা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং প্রতি সপ্তাহের কলার হাটে কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকারও বেশি কলার কেনাবেচা হয়ে থাকে। এতে পাহাড়ের কলা চাষীরা বেশ লাভবান হচ্ছে।