ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই ॥
কাপ্তাই হ্রদ ধরে এক একটি বোট ভিড়ছে ঘাটে, মুহূর্তেই মৌসুমি ব্যাবসায়িরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সেই বোটের ওপর। প্রত্যেকটি বোটে আছে পাহাড়ের উৎপাদিত বাংলা কলা। দৃশ্যটি রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র জেটিঘাট এলাকা সংলগ্ন কাপ্তাই লেকে।
শনিবার সকাল আটটায় জেটিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কাপ্তাই হ্রদ ধরে ইঞ্জিনচালিত বোটযোগে বিলাইছড়ি উপজেলার কেংড়াছড়ি, ইজাছড়ি, রাঙামাটি সদরে মগবান, জীবতলি, কাপ্তাইয়ের দুর্গম হরিণছড়া এলাকাসহ নানা জায়গা হতে এইসব কলা শনিবার সাপ্তাহিক বাজার কাপ্তাই জেটিঘাটে নিয়ে আসছেন প্রান্তিক কৃষকরা। বোট ঘাটে ভিড়তেই সাথে সাথে তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত এই সব কলা মুহূর্তেই বেপারিরা ঘাট থেকে কিনে নিচ্ছেন। এ যেন ভাসমান হাট। জানা যায়, প্রতি শনিবার বিশেষ করে এই মৌসুমে ১০ লাখ টাকার মতো বিভিন্ন বাংলা কলার বিকিকিনি হয়।
কথা হয় কাপ্তাইয়ের জেটিঘাটে কলা বিক্রি করতে আসা রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান এলাকার কৃষক স্নেহ রঞ্জন চাকমা ও নয়ন চাকমার সাথে। তাঁরা জানান, তাদের ৩ একর বাগানে কলার ভালো ফলন হয়েছে। সাপ্তাহিক বাজার শনিবারে ইঞ্জিন চালিত বোট যোগে এইসব কলা জেটিঘাট বাজারে নিয়ে আসি। তবে বোট ঘাঁটে ভীড়ার সাথে সাথেই বেপারিরা এইসব কলা ঘাঁট হতে কিনে নেয়, আর বাজারে তুলতে হয় না। তবে এই বছর বেশ লাভবান হয়েছি আমরা।
কেংড়াছড়ি এলাকার কৃষক রুপধন চাকমা তাঁর বাগানের উৎপাদিত কলা নিয়ে এসেছেন সাপ্তাহিক এই বাজারে। তিনি জানান, ঘাঁট হতে বেপারিদের কাছে পাইকারি বিক্রি করে দিয়েছি কলা। কষ্ট করে আর বাজারে তুলতে হয় নাই।
কথা হয়, চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শান্তিনিকেতন এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ি প্রদীপ দে ও চন্দ্রঘোনা এলাকার জানে আলম ও আজিম এর সাথে। তাঁরা দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই জেটিঘাট হতে কলাসহ পাহাড়ে উৎপাদিত বিভিন্ন মৌসুমী ফল নিয়ে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন হাটে বিক্রি করছে। তাঁরা জানান, পাহাড়ের উৎপাদিত এই সব ফল বিষমুক্ত, তাই সমতলের মানুষের কাছে এর চাহিদাও বেশি। আমরা এসব করে লাভবান হচ্ছি এবং আমাদের সংসারও চলছে বেশ।
দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এই জেটিঘাট এলাকায় ঘাট শ্রমিকের কাজ করছেন আবু তাহের ও হারুন মাঝি। তাঁরা জানান, সাপ্তাহিক শনিবার এই জেটিঘাট বেশ জমজমাট হয়ে থাকে। বিশেষ করে ফলের মৌসুমে শত শত ইঞ্জিন চালিত বোট দিয়ে পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্ত হতে কৃষকরা খুব সকালে তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ফল নিয়ে আসে। আমরা বোট হতে উপরে তুলে দিই। শনিবারে আমাদের গড়ে আয় হয় ৮শত টাকার মতো।
কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান আহমেদ জানান, পাহাড়ের উৎপাদিত কলার যেমন পুষ্টিগুণ আছে, তেমনি বিষমুক্তও। যার ফলে এর চাহিদাও বেশ।