জিয়াউল জিয়া ও অর্ণব মল্লিক
উজান থেকে পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় এবং বৃষ্টির কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি এখনো বিপদসীমায় রয়েছে। কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেইট সোমবার পর্যন্ত চার ফুট খোলা রাখার পরও পানি না কমায় মঙ্গলবার সকাল সাতটা থেকে আরো এক ফুট করে মোট ৫ ফুট খুলে দেয়া হয়েছে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯৮ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে নির্গত হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পাঁচটি ইউনিট চালু রেখে প্রতি সেকেন্ডে আরো ৩২ হাজার কিউসেক পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে কাপ্তাই হ্রদ থেকে কর্ণফুলীতে নদীতে প্রতি সেকেন্ডে পানি নির্গত হচ্ছে ১ লক্ষ ৩০ হাজার কিউসেক পানি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রথম কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেইট পাঁচ ফুট খোলা রেখে এতো পরিমাণ পানি ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্র জানায়, কাপ্তাই হ্রদের পানির বর্তমান স্তর রয়েছে ১০৮.৬৫ এমএসএল(মিনস সি লেভেল)। হ্রদের সর্বোচ্চ পানি ধারণ ক্ষমতা ১০৯ এমএসএল।
এদিকে পানির তীব্র ¯্রােতের ফলে রাঙামাটি-বান্দরবান সড়কে যাওয়ার একমাত্র ফেরী চলাচল সীমিত করা হয়েছে। এতে বন্ধ আছে রাঙ্গামাটি-বান্দরবান সড়কে যান চলাচল। রাঙামাটি সড়ক বিভাগ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সারাদিন পানির ¯্রােত তীব্র থাকলে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হবে।
এদিকে সকালে শহরের শান্তি নগর, রসুলপুর ও রিজার্ভ বাজারসহ আশপাশের এলাকার সড়ক ও বাসাবাড়ি থেকে নামতে শুরু করেছে পানি। তবে এখনো অনেক বাসাবাড়িতে পানি রয়েছে।
অনেকে ত্রাণ না পাওয়া নিয়ে করছে অভিযোগ। আবার অনেকেই ত্রাণ সহায়তা না দিয়ে দ্রæত পানি ছেড়ে দেয়ার দাবি জানান। পানি না কমায় দুর্ভোগে পানিবান্দি কয়েক হাজার মানুষ। প্লাবিত এলাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট।
শহরের রসুলপুরের বাসিন্দা মো. শাহ পরান জানান, গতকাল(সোমবার) সন্ধ্যায় বাসায় এক ফুটের বেশি পানি ছিলো। তবে সকালে ঘুম থেকে উঠে দিখে ৫-৬ ইঞ্চি পানি কমে আসছে। এভাবে পানি ছাড়া থাকলে আশা করি আজকে মধ্যে ঘরে সব পানি সরে যাবে।
লংগদু উপজেলার বগাচত্বর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. মমিন মিয়া জানান, গত কয়েকদিন দ্রæত পানি বাড়ছিলো তবে সোমবার থেকে পানি বৃদ্ধি বন্ধ হলেও অনেক বাসাবাড়ি সড়ক এখনো ডুবে আছে। এমন পানি ২০০৭ সালের পর হয়নি। এলাকার লোকজন গরু-ছাগল নিয়ে কষ্টে পড়েছে।
টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে জেলার লংগদু, বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর, বরকলসহ কয়েক উপজেলার প্রায় ১৭টি গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি রয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরতদের রান্না করা খাবার দেয়া হচ্ছে। যারা বাসা বাড়িতে আছেন তাদের ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে।
কর্ণফুলি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসার পানির কারণে বাঁধের জলকপাট আড়াই ফুট থেকে ধাপে ধাপে ৫ ফুট বাড়ানো হয়েছে। এখন ১৬টি গেইট দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৯৮ হাজার কিউসেক পানি নিস্কাশন হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হচ্ছে। সব মিলে ১ লাখ ৩০ হাজার কিউসেক পানি প্রতি সেকেন্ডে কর্ণফুলিতে যাচ্ছে।