অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলা পর্যটনসমৃদ্ধ শহর হিসাবে পরিচিত হওয়ার ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে। বিশেষ করে দেশের অন্যতম কর্ণফুলী পেপার মিলস, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন এর মতো নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে কাপ্তাইয়ে। পাশাপাশি বিভিন্ন নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে এই কাপ্তাইয়ে। যেখানে পর্যটকরা বিভিন্ন ছোট বড় বাস, মাইক্রোবাস, কার, মোটরসাইকেল যোগে কাপ্তাই উপজেলায় প্রবেশ করে। এছাড়া শতশত যানবাহনে চড়ে মানুষ প্রয়োজনে প্রতিদিন কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন স্থানে আসেন। কিন্তু সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। বিশেষ করে কাপ্তাই সড়কের ৭টি বাঁক চরম ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এসব বাঁক পেরিয়ে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে পদে পদে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন সড়ক চারলেনে উন্নীত হলেও কাপ্তাই সড়কটি অদ্যবদি দুলেনে রয়ে গেছে। অনেকসময় সড়কের তুলনায় যানবাহনের চাপ বেড়ে যায় দ্বিগুণ। তখন সড়কজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে কাপ্তাইয়ের স্থানীয় বাসিন্দা মো. সুমন, রফিকুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, কাপ্তাই সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো অনেক সময় চালকেরা বুঝতে পারেন না। অতিরিক্ত গতি নিয়ে আসার পর বাঁকগুলোতে ঘটে দুর্ঘটনা। এক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত গাড়িগুলো বেশি ঝুঁকিতে পড়ে। তাই এসকল বাঁক গুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা আহবান জানান।
কাপ্তাই সড়কের নিয়মিত চলাচলকারী বাস চালক জাকির হোসেন, সোনা মিয়া সহ একাধিক চালক বলেন, কাপ্তাই সড়ক অত্যন্ত সুন্দর। সড়কের কোথাও খানাখন্দ নেই। গাড়ি চালাতে বেশ আরামই লাগে। কিন্তু বেশ কয়েকটি বাঁক থাকার কারণে সড়কে নিরাপদে গাড়ি চালানো সম্ভব হয়না। বিশেষ করে উপজেলা সদর বড়ইছড়িতে বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। নতুন কোন চালক হলে এসব বাঁক পেরিয়ে গাড়ি চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এছাড়াও সড়কের চিৎমরম এলাকাতেও বেশ কয়েকটি বাঁক রয়েছে। সবগুলো বাঁকই বেশ বিপজ্জনক। তবে সড়কের ৭টি বাঁক চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এসব বাঁককে ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য চালকরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
এবিষয়ে কাপ্তাই উপজেলার ৫নং ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. সরোয়ার হোসেন জানান, কাপ্তাইয়ের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোতে প্রায়সময় চালকদের বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকেরা বেশ ঝুঁকিতে থাকে। অনেকসময় নতুন চালকরা এই সড়কে গাড়ি চালাতে আসার পর সড়কের বাঁকগুলোতে স্পিড কন্ট্রোল করতে না পেরে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। তাই চালকদের সচেতন করতে কাপ্তাই সড়কের এই বাঁকগুলোতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এবিষয়ে কাপ্তাই উপজেলার ১নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আকতার হোসেন মিলন জানান, কাপ্তাই সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোতে দ্রুত সময়ে কিছু সতর্কতামুলক চিহ্ন স্থাপন করা প্রয়োজন। বিশেষ করে যে বাঁকগুলো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সেখানে প্রয়োজনে গ্লাসের বোর্ড বসানো দরকার। তাহলে বিপরীত দিক থেকে আসা যেকোন যানবাহন এর চালক সতর্ক হতে পারবে। আর তাছাড়া সড়কের এই বাঁকে রাতের বেলায় যানবাহন চালানোর সময় দুর্ঘটনার আশংকা থাকে সবচেয়ে বেশি। তাই সড়কের মাঝে ডিজিটাল ডিভাইডার চিহ্ন গুলো স্থাপন করা হলে চালকেরা সচেতন হবো। এতে দুর্ঘটনার আশংকাও কমবে।
এবিষয়ে চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, ভবিষ্যতে কাপ্তাই সড়কটি চার লেনে উত্তীর্ণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তখন এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোকে নিরাপদ করা হবে। তবে বর্তমানে কাপ্তাই সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ স্খানগুলো চিহ্নিত করে সেখানে চালকদের সচেতনতার জন্য ঝুঁকিচিহ্ন বসানো হবে। সেইসাথে কাপ্তাই সড়কে চালকদের যতটা সম্ভব সাবধানতার সাথে যানবাহন পরিচালনা করার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।