জিয়াউল জিয়া ॥
কাপ্তাই হ্রদে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও জেলেদের মাঝে ভিডিএফের চাল বিতরণ উপলক্ষে রাঙামাটিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন(বিএফডিসি) রাঙামাটি অঞ্চলের ঘাটে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএফডিসি’র চেয়ারম্যান কাজী আশরাফ উদ্দিন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহা-পরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, বিএফডিসি রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল আলম ভূঁইয়া, নৌ পুলিশ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার আ.ফ.ম নাহিদ উদ্দিন. অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহ নেওয়াজ রাজু। এতে জেলেদের পক্ষে শহর আলী ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের পক্ষে মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা উদয়ন বড়–য়া বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, কাপ্তাই হ্রদ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান মৎস্য ভান্ডার। এই মৎস্যসম্পদের ওপর এখানকার অর্থনীতি নির্ভরশীল। কিন্তু গত কয়েকবছর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাছ আহরণে প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি বন্ধকালীন আহরণের কারণে মাছের বংশবৃদ্ধি কম হচ্ছে। মাছের বংশবৃদ্ধির জন্য বন্ধকালীন কোনওভাবেই হ্রদ থেকে মাছ আহরণ না করা এবং পোনা মাছ আহরণ না করারও আহ্বান জানান বক্তারা। আলোচনা সভা শেষে জেলেদের মাঝে চাল এবং হ্রদে মৎস্য অবম্ক্তু করা হয়।
বিএফডিসি সূত্র জানায়, মাছ আহরণ বন্ধ মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে ৭০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হবে এবং ২৬ হাজার ৪৫৯ জেলের মাঝে ২০ কেজি করে তিন মাসের ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হবে।
বিএফডিসির সূত্র মতে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ হাজার ১৫৪ মেট্রিকটন মাছ আহরণ করা হয় যার মধ্যে রাজস্ব আদায় হয় ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
নৌ পুলিশ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার আ.ফ.ম নাহিদ উদ্দিন বলেন, এইসময়ের জন্য আমাদের সাতটি ফাঁড়ি কাজ করে। কাপ্তাই হ্রদে যাতে মাছ বেড়ে উঠতে পারে সেই বিষয়ে আমরা কাজ করবো। গত বছর বন্ধকালীন সময়ে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ বর্গ মিটার জাল, প্রায় ১ হাজার ৫০০ কেজি মাছ, ৩২৪টি নৌকার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মোবাইল কোর্টের মধ্যমে কয়েক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই ক্ষতি আপনাদের। আমরা চাই না আপানাদের কোন ক্ষতি হউক। আমরা চাই না কোন জেলে বন্ধকালীন সময়ে হ্রদে মাছ শিকারে নামুক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, এই বিশাল হ্রদ শুধুমাত্র কাচকি মাছের জন্য না। এই হ্রদকে বাঁচাতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সবার আন্তরিকতা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ বলেন, কাপ্তাই লেক গর্ব ও অহংকার করার মতো একটি বিষয়। মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। যখনি মাছ শিকার বন্ধ হবে আপনারা চিন্তা করবেন না। বন্ধকালীন সময়ে আপনারা কষ্ট করেন। এই কষ্ট করার ফলে মাছ শিকার শুরুর পর আপনারাই সুবিধা পাবেন। এই লেককে বাঁচান, যত্রতত্র মাছ ধরবেন না। বিশে^র পরিস্থিতি ভালো হলে ভিজিএফ পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়ে আমরা বিবেচনায় রেখেছি।
খাদ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় জনবান্ধব সরকার। আমরা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর মাছ শিকার বন্ধকালীন সময়ে জেলের জন্য ভিডিএফ এর মাধ্যমে চাল দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। রাঙামাটিতে এখন প্রায় ২৬ হাজার জেলে এই সুবিধা পায়। বন্ধকালীন সময়ে গোপনে চুরি করে মাছ শিকার থেকে আপনারা বিরত থাকুন। এর সুফল আপনারাই পাবেন।
তিনি আরও বলেন, যে পরিমাণ মাছের পোনা ছাড়া হচ্ছে তা এই বিশাল লেকের জন্য খুবই কম। আগামী বছর এর পরিমাণ বাড়ানো যায় কিনা সেই বিষয়ে বিচেনার করার কথাও বলেন। তিনি জেলেদের উদ্দেশে বলেন, সরকার আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আপনারা মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিতে সরকারের পাশে থাকুন।