জিয়াউল জিয়া
সাধারণত কৃষিজমি, বাড়ির উঠান কিংবা ছাদবাগানে শাকসবজির চাষ দেখা গেলেও এবার কাপ্তাই হ্রদে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের ছাদে দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। মাছ পরিবহনকারী ট্রলারের ছাদে লাউ চাষ করা হয়েছে। বিষয়টি দেখে অবাক হয়েছেন অনেকে। এটিকে দারুণ উদ্যোগ উল্লেখ করে হ্রদের সব ট্রলারের ছাদে সবজি চাষ হলে স্থানীয় মানুষের সারা বছরের চাহিদা পূরণ হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
ট্রলারের মালিক ও চালক মো. নূরনবী লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের বাসিন্দা। লংগদু উপজেলা থেকে কাপ্তাই হ্রদের আহরিত মাছ নিয়ে যান কাপ্তাই বিএফডিসির ল্যান্ডিং ঘাটে। প্রতিদিন এক ঘাট থেকে আরেক ঘাটে ছুটে বেড়ান। দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে ট্রলারে। সেখানেই চাষ করেছেন লাউ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কাপ্তাই হ্রদে পর্যটকবাহী ও মাছ পরিবহনকারী বিভিন্ন ইঞ্জিনচালিত নৌযান রয়েছে পাঁচ হাজারের মতো। এর মধ্যে একটির ছাদে লাউ চাষ করেছেন নূরনবী। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ অন্য ট্রলারচালক ও স্থানীয়দের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে। অনেকে ট্রলারটি দেখতে হাজির হচ্ছেন প্রতিদিন। এই ধরনের বাগান করতে উৎসাহিত হচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, ট্রলারের ছাদে বড় একটি ড্রামে মাটি দিয়ে লাউ গাছ লাগানো হয়েছে। গাছে ঝুলছে অন্তত ১০টি লাউ। আরও ফুল ফুটেছে। সেগুলোতেও ফলন আসবে বলে আশা নূরনবীর।
এই পদ্ধতির চাষাবাদের ধারণা দিয়ে নূরনবী বলেন, ট্রলারের মেঝের অংশ ব্যবহৃত হলেও ছাদ তেমন কোনও কাজে ব্যবহার হয় না। নিরাপত্তা ও রোদ থেকে ছায়া পেতে এটি দেওয়া হয়। বিনা কাজে পড়ে থাকায় মাছ বহনকারী বড় একটি ড্রামে মাটি দিয়ে লাউয়ের বীজ রোপণ করেছিলাম। শখের বশে চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত ২০টি লাউ তুলেছি। আরও ১০টি গাছে আছে। কোনও ধরনের সার প্রয়োগ করিনি। দুই ঘাটে ট্রলার ভিড়লে লোকজন দেখতে আসেন, অনেকে ছবি তুলে নিয়ে যান। একটি গাছে এত লাউ ধরায় ভালো লেগেছে। লাউগুলো নিজে খেয়েছি, পাশাপাশি প্রতিবেশীদের দিয়েছি। চাইলে যে কেউ এভাবে চাষ করতে পারে।
তার এই লাউ চাষ দেখতে আসা লংগদুর বাসিন্দা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, শহরের বিভিন্ন যানবাহন এবং বাড়ির ছাদে সবজি চাষ করতে দেখেছি। এই প্রথম ট্রলারের ছাদে লাউ চাষ দেখলাম। অবাক হয়েছি। এটি দারুণ উদ্যোগ। হ্রদে শত শত ট্রলার রয়েছে। সেগুলোও একইভাবে সবজি চাষের কাজে লাগানো গেলে এই অঞ্চলের সবজির চাহিদা পূরণ হবে। সেইসঙ্গে পর্যটকদের কাছে ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মো. লোকমান হোসেন বলেন, হ্রদে চলাচলকারী অর্ধেক ট্রলারেও যদি এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা যায়, তাহলে জেলায় বিশাল সবজির ভান্ডার গড়ে তোলা সম্ভব।
এটিকে অনুকরণীয় উদ্যোগ বলে উল্লেখ করেছেন রাঙামাটি অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক কৃষিবিদ তপন কুমার পাল। তিনি বলেন, এই ধরনের উদ্যোগের ফলে নিরাপদ সবজি খেতে পারছেন ট্রলারচালক। সেইসঙ্গে বিক্রি করতে পারবেন। কাপ্তাই হ্রদে অন্তত পাঁচ হাজার ট্রলার চলাচল করছে। তারাও যদি ট্রলারের ছাদে বিভিন্ন সবজি গাছ লাগান, তাহলে সব ধরনের সহযোগিতা করবো আমরা।