মিশু মল্লিক
কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলরাশিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৬তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটি সেনা জোনের উদ্যোগে শনিবার সকালে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। নৌকা বাইচে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নৌকা নিয়ে হাজির হয় প্রতিযোগিরা। নৌকা বাইচ দেখতে এসময় হ্রদের তীরে ভিড় করে হাজারো নারী-পুরুষ। দুইটি ইভেন্টে মোট ১২টি দল এই নৌকাবাইচে অংশগ্রহণ করে।
ঐতিহ্যবাহী এই খেলা দেখতে এসময় কাপ্তাই হ্রদের তীরে ভিড় করে হাজারো নারী, পুরুষ। অনেকেই বোট-নৌকা নিয়ে হাজির হন নৌকা বাইচ দেখতে। শুধুমাত্র শহর থেকেই নয়; দূরের পাহাড়ি গ্রাম থেকেও পাহাড়ি নারী-পুরুষরা নৌকা বাইচ দেখতে ভিড় করে শহীদ মিনারের নিচে হ্রদের জলে। তাদের হর্ষোধ্বনি ও উল্লাসে এই সময় প্রতিযোগিরা বৈঠার তালে তালে এগিয়ে যায়। গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী খেলায় মুগ্ধতা প্রকাশ পায় তাদের চোখে-মুখে।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া প্রশান্ত ত্রিপুরা বলেন, শান্তিচুক্তির বর্ষপূর্তিতে এই নৌকা খেলার আয়োজন করাতে আমরা খুব খুশি। আমরা দলগতভাবে অংশগ্রহণ করেছি এবং দ্বিতীয় হয়েছি। এই ধরণের প্রতিযোগিতা প্রতিবছর হওয়া উচিত।
আরেক প্রতিযোগি সাধনা চাকমা বলেন, আমরা আসছি কেইল্যাপাহাড় রাজমুনি পাড়া থেকে। আজকের বাইচটা খুবই সুন্দর হয়েছে। আমরা এই বাইচে অংশগ্রহণ করতে পেরে খুবই আনন্দিত ও গর্বিত। খেলায় হার জিত থাকেই, কিন্তু অংশগ্রহণটাই আমাদের কাছে আনন্দের।
নৌকা বাইচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে রাঙামটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রæ চৌধুরী’র সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। এসময় উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি রিজিয়নের ভারপ্রাপ্ত রিজিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল এরশাদ হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মারুফ আহম্মেদসহ জেলা ক্রিড়া সংস্থা ও রাঙামাটির বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।
পুরস্কার বিতরণী সভায় প্রধান অতিথি দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন একটি অশান্ত পরিবেশ ছিল যা শান্তিচুক্তির মাধ্যমে সমাধানের উদ্যেগ নেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শান্তিচুক্তির বর্ষপূর্তিতে রাঙামাটি রিজিয়নের এমন একটি সুন্দর আয়োজন সত্যিই প্রশংসীয়। এজন্য আমি রাঙামাটি রিজিয়ন ও রিজিয়ন কমান্ডার মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আরো বলেন, সেনাবাহিনী শুধু সমরে নয়, শান্তিতেও সমান সক্রিয়। পাবর্ত্য চট্টগ্রামে এখনো পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। এই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য ন্যূনতম যে প্রয়াস তার পেছনেও সেনাবহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় পুরুষদের বড় নৌকা ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয় রতন ত্রিপুরা ও তার দল, প্রথম রানার্স আপ হন প্রশান্ত ত্রিপুরা ও তার দল এবং দ্বিতীয় রানার্স আপ হন চিরমনি ত্রিপুরা ও তার দল। প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় ক্যাটাগরি মহিলাদের বড় নৌকায় চ্যাম্পিয়ন হন পূণ্যরাণী ত্রিপুরা ও তার দল, প্রথম রানার্স আপ হন আলো ত্রিপুরা ও তার দল এবং দ্বিতীয় রানার্স আপ হন সুবর্ণা ত্রিপুরা ও তার দল।
পুরস্কার হিসেবে দুই ক্যাটাগরির চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫০,০০০ টাকা, ১ম রানার্স আপ দলকে ৩৫,০০০ টাকা, ২য় রানার্স আপ দলকে ২৫,০০০ টাকা এবং সাত্ত¦না পুরস্কার হিসেবে ১০,০০০ টাকার চেক তুলে দেন অতিথিরা।