সাইফুল হাসান ॥
সারা দেশের মত পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতেও বেড়েছে কিশোর অপরাধ। উঠতি বয়সি তরুণরা বিভিন্ন ধরনের মোবাইল গেইম, জুয়া খেলা সহ মাদকাসক্তের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। তাই অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করে তা প্রতিহত করছে রাঙামাটি কোতয়ালী থানা পুলিশ।
রাত আটটার পর যে সকল স্কুল কলেজ পড়–য়া উঠতি বয়সি তরুণ বাইরে আড্ডা দিচ্ছে তাদের থানায় নিয়ে গিয়ে অভিভাবক ডেকে কাউন্সেলিং করছেন পুলিশ। শহরে গত বেশ কয়েকদিন ধরেই চলছে পুলিশের এই ব্যতিক্রমী কর্মকান্ড। পুলিশের এমন কাজে সন্তুষ্ট অভিভাবক ও সুশীল সমাজ।
অভিভাবক মুহাম্মদ শওকত বলেন, আমার ছেলে রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র। আমি দোকানে থাকি বলে জানতে পারি না সে সন্ধ্যায় ঠিক মত বাসায় যায় কিনা আবার রাতে কোন বের হয় কি না। তবে প্রায় সময় শুনতাম সে রাত আটটার পর বাহির হয়ে ঘন্টাখানিক ঘুরে আমি বাসায় যাবার আগে চলে যেতো। সামনে পরীক্ষা তাই এ নিয়ে আমি বহু বকাঝকা করেছি। কিন্তু ইদানিং তার মা বলছে সে নাকি আর বাহির হয় না। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত পড়ালেখা করছে। পুলিশের টহল এখন ছেলেদের ভয় লাগিয়ে দিয়েছে। পুলিশের এমন কর্মকান্ডে আমরা অভিভাবকরা খুঁশি।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট পরিচালনা কমিটির সদস্য ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির নাট্য প্রশিক্ষক সোহেল রানা বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে উঠতি বয়সি তরুণদের অপরাধ জগতে জড়িয়ে যাওয়াটা লক্ষ্য করা যাচ্ছিলো। রাঙামাটিতে যারা বিভিন্ন উপজেলা ও বাহির থেকে এসে পড়ালেখা করে তারাই বেশি অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া শহরের অনেক উঠতি বয়সি তরুণও এরমধ্যে সংযুক্ত হয়েছে। পুলিশের এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার।
তিনি আরও বলেন, তরুণদের যেমন কাউন্সেলিং করতে হবে ঠিক তেমনি ভাবে অভিভাবকদেরও সচেতন করতে হবে। তরুণদের শিল্প, সাহিত্য ও খেলাধুলার দিকে উৎসাহিত করতে হবে। তাহলে সমাজে কিশোর গ্যাং সহ বিভিন্ন অপরাধ জগত থেকে তরুণদের বাঁচানো সম্ভব।
রানী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রণতোষ মল্লিক বলেন, কিশোর গ্যাং প্রতিহত করতে পুলিশের এই অভিনব উদ্যোগ ইতিবাচক ও শতভাগ প্রশংসনীয়। আমি ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে এবং রানী স্কুল পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার, ওসিসহ সকল পুলিশ ভাইদের জানাই শুভেচ্ছা। এক মাস এই কর্মকান্ড অব্যাহত রাখলে সমাজে একটি পরিবর্তন আসবে এবং তরুণদের মাঝেও পরিবর্তন আসবে বলে আমি মনে করি।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুল আমিন বলেন, সারা দেশে কিশোর বয়সি তরুণরা যে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে, পড়ালেখা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তারা বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়ে যাচ্ছে, মা-বাবার অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে, সমাজে বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে এগুলো প্রতিহত করতে আমাদের এই কর্মকান্ড। আইনের কিছু বাধ্যবাধকতা আছে তাই তাদের বিষয়ে এমন কোন আইন বা আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সংশোধন করা সম্ভব না। তাই আমরা উদ্যোগ নিয়েছি যদি তাদের সচেতন করতে পারি, অভিভাবকদের সচেতন করতে পারি এবং সমাজকে সচেতন করতে পারি তাহলে উঠতি বয়সি তরুণরা অপরাধের সাথে জড়িয়ে যাওয়া, পড়ালেখার প্রতি অমনোযোগি হওয়া, মোবাইলে আসক্ত হয়ে যাওয়া, মাদকাসক্ত হওয়া এসব থেকে তারা দূরে থাকতে পারবে। সে উদ্যোগের প্রেক্ষিতে আমাদের এই অভিযান।
তিনি আরও বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য তাদের শাস্তি দেওয়া নয়, তাদের সচেতনতার মাধ্যেমে শোধরানো। সেটার জন্য তাদেরকে যেমন কাউন্সেলিং করতে হবে ঠিক তেমনি ভাবে তাদের পরিবার মা-বাবাকেও কাউন্সেলিং করতে হবে। আমরা যে কাজটা করছি তাদেরকে থানায় নিয়ে আসার পর তাদের ও তাদের পরিবারকে ডেকে এনে কাউন্সিলিং করছি। এমনও হয়েছে কাউন্সেলিং এর পর সন্তান তার ভুল বুঝতে পেরে কান্না করছে এবং যে মা মনে করেছিলো তার সন্তান খারাপ হয়ে গেছে তিনি সন্তানের ভুল বুঝতে পারা এবং সন্তান ভালো হয়ে যাবে সেটা ভেবে কান্না করছে। আমরা এখানেই স্বার্থক, আমরা চাই কিশোরদের সচেতনতার মাধ্যমে সঠিক পথে নিয়ে আসতে। পুলিশ সুপারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও কোতয়ালী থানা পুলিশ এ কাজ অব্যাহত রাখবো বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।