থানচি প্রতিনিধি ॥
বান্দরবানের রুমা থানচি বিছিন্নবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর নির্যাতনের ভয়ে থানচি উপজেলা সদরে মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টা ১১ পরিবারে ৩২ সদস্য থানচি সদরে পৌঁছেন। এরপর উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা হয়। আশ্রয় শিবিরে তাঁদের থাকার খাওয়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ১১ পরিবার সকলে রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে বাকলাই পাড়া বাসিন্দা।
জানা যায়, দীর্ঘ নয় মাস ধরে কুকিচিন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোলাগুলির মধ্যবর্তী স্থান বাকলাই পাড়াতে অবস্থান করছে তারা। এছাড়া তাদের পাড়ার পাশ দিয়ে কুকিচিন সদস্যদের আনাগোনা বেশি। এতে আতঙ্কিত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে তারা বনে জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এ বিষয়ে একাধিকবার বিভিন্ন মহলে সহযোগিতা চেয়েও পায়নি তারা। অবশেষে শনিবার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খামলাই ম্রোর সাথে যোগাযোগ করলে তার সহযোগিতায় পাড়াবাসীরা থানচি সদরে চলে আসে এবং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়।
আশ্রয় শিবিরের বাকলাই পাড়ার প্রধান (কার্বারি)থংলিয়াত বম বলেন, আমাদের পাড়ায় মোট ৩৭ পরিবার ছিল। কুকিচিনের তান্ডবের কারণে ৬ মাস আগেই ২৬ পরিবারের লোকজন অন্যত্র চলে গিয়েছে এবং বিভিন্ন স্থানের আশ্রয় নিয়েছে। আমরা ১১ পরিবার কোন রকমে পুরুষরা দিনের বেলা পাহাড়ে জুম ঘরে পালিয়ে থাকতাম। রাতে বৌ বাচ্ছাদের রান্না করার খাবার নিয়ে আবার চলে যেতাম। এভাবে অক্টোবর ২০২২ হতে মে ২০২৩ গত ৯ মাস যাবৎ অনেক কষ্টের বিনিময় অনাহারে অর্ধহারে নির্ঘুম সময় পার করছিলাম। আমাদের কষ্টের কথা রাজনৈতিক নেতা ও অনেক জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। অবশেষে নিরুপায় হয়ে শনিবার অনেক কষ্ট করে পাহাড় থেকে মুঠোফোনের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খামলাই ম্রো কে আমাদের জীবনের করুণ পরিস্থিতির বিষয়টি অবগত করা হলে আমাদের উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে থানচি সদরে আসার পরামর্শ দেন। সুতরাং আমরা চলে আসছি।
আশ্রয় শিবিরের রোলরেম বম বলেন, আমাদের সকল পরিবারের গৃহপালিত হাঁস মুরগি গরু ছাগল, গয়াল, শুকর, ধান, ঘরবাড়ি সব রেখে জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে এসেছি। পরিস্থিতির শান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
আশ্রয় শিবিরের বাকলাই পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাওরামতং বম জানান, অক্টোবর ২০২২ হতে অদ্যবধি স্কুলও বন্ধ ছেলে মেয়ে ও নেই। হ য ব র ল জীবন যাপন করছি। কোন সময় বাড়িতে কোন সময় জঙ্গলে খাওয়া-দাওয়া ঠিক ছিল না।
পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত থানচি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়প্রার্থীরা অবস্থান করতে পারবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মুহা: আবুল মনসুর। তিনি বলেন, প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা ১১ পরিবার সকলে রুমা উপজেলা রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড, বাকলাই পাড়ার বাসিন্দা। যতদিন তারা আশ্রয়ে থাকবে, ততদিন প্রশাসন সকল ধরনের সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি।