নিজস্ব প্রতিবেদক
রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ইসলামপুর ও বগাছড়ি এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে জমি কিনে মূল্য পরিশোধ না করা এবং জমি বিক্রির টাকা নিয়ে জমি বুঝিয়ে না দেয়াসহ আরো বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে কৃষি বিভাগের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে রাঙামাটি কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তোলা হয়।
লিখিত অভিযোগে মো. মানিক বলেন, কৃষি বিভাগের নানিয়ারচর হর্টিকারচার সেন্টারে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত কর্মরত ছিল কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম। কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি স্থানীয় সহজ-সরল ব্যক্তিদের থেকে নামমাত্র মূল্যে জায়গা ক্রয় করেন। জায়গা বিক্রেতাকারীদের সাথে যে পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়, হলফনামায় তার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমি লিখে অশিক্ষিত এসব মানুষদেরকে ঠকিয়েছেন মো. নুরুল ইসলাম। এরপর যে টাকা দরদাম হয়, সেটার কিছু অংশ দিয়ে বাকি টাকাগুলো দিতে গড়িমসি করে মো. নুরুল ইসলাম। অনেককেই অস্ত্র ঠেকিয়ে মেরে ফেলারও হুমকি দেয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ৯১ বছর বয়সী আলী হোসেন বলেন, আমি ভাঙাড়ি ব্যবসা করে কোনওরকম চলি। ২০০৮-০৯সালের দিকে কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম আমার থেকে তিন শতক জমি ক্রয় করেন। এরপর তিনি জমি রেজিস্ট্রির জন্য আমাকে বিভিন্ন জায়গায় স্বাক্ষর দিতে বললে আমি দিই। কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পারি, তিনি আমার পুরো জায়গা ৪.৭৫ একর জমি নিজের নামে লিখে নিয়েছেন। এছাড়া তার সাথে তিন একরের দাম সেই সময়ে আড়াই লক্ষ টাকা নির্ধারণ হলেও এতবছরে তিনি আমাকে টাকা দিয়েছেন মাত্র ৬০ হাজার টাকা। বাকি টাকা খুঁজতে গেলে গত মাসে তিনি আমাকে অস্ত্র ঠেকিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
ভুক্তভোগী মো. মানিক বলেন, উনার থেকে আমি ৮ একর জায়গা ১৬ লাখ ২৭ হাজার ক্রয় করার জন্য বায়না করি। এজন্য ব্যাংকের মাধ্যমে তাকে সাড়ে আট লক্ষ টাকা প্রদান করি। ইতোমধ্যে একটি শুনানিও হয়েছে। কিন্তু তিনি এরপর আমাকে আর জায়গা দিতে চাচ্ছেন না, এমনকি যে টাকা নিয়েছেন, সেগুলোও ফেরত দিচ্ছেন। নিরুপায় হয়ে আমি তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করি।
আলী জাফর নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ৪.৭৫ একর জমি দুই লক্ষ টাকা দিয়ে কেনার জন্য তার সাথে কথা হয়। সে হিসেবে সরল বিশ্বাসে তাকে ব্যাংকের মাধ্যমে এক লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দিই। কিন্তু টাকা পাওয়ার পর তিনি আর আমাদের কোনও সহায়তা করছেন না, ফোনও ধরছেন না। এখন আমি নিরুপায়। সুদে টাকা নিয়ে তাকে পাঠালাম, কিন্তু এখন টাকাও গেল, জমিও বুঝে পাচ্ছি না।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা বলেন, এভাবে এই কৃষি কর্মকর্তা স্থানীয় শাহজাহান বিশ্বাস, নুরু বিশ্বাস, শামসু, লিয়াকত, মরিয়মসহ আরো বিভিন্ন জন থেকে প্রায় ৩৫ একর জমি ক্রয় করেছেন। যেখানে বর্তমানে সরকারি খরচে বাগান গড়ে তুলেছেন। যাদের জমি ক্রয় করেছেন, তাদের প্রত্যেককে কিছু টাকা পরিশোধ করে কৌশলে পুরো জমি কাগজপত্র স্বাক্ষর করে নিয়েছেন, কিন্তু কাউকেই পুরো টাকা পরিশোধ করেননি।
এই বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম বলেন, আমি ২০১০সালে বদলি হয়ে আসার পর সেখানে আর যাওয়া হয়নি। যারা অভিযোগ করছেন, তারা মিথ্যা অভিযোগ করছেন। কারো সাথে জমি নিয়ে প্রতারণা করা হয়নি। উল্টো মানিক নামে একজন আমার নামে ভুয়া মামলা করেছে, আর আলী হোসেন যে অভিযোগ করছেন সেটাও সঠিক নয়, তিনি পাগল টাইপের মানুষ। বর্তমানে তিনি ঢাকা আছেন জানালেও তাঁর বর্তমান কর্মস্থল ও পদবি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনও কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।