বিশেষ প্রতিবেদক, বান্দরবান ॥
বান্দরবানের রুমা উপজেলায় দুর্গমাঞ্চলে পাহাড়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সহযোগী গ্রুপ কুকি চীন আর্মির মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। দুপক্ষের বন্দুকযুদ্ধে কেএনএ কমান্ডারসহ দুইজন অস্ত্রধারীর মৃত্যু হয়েছেন। এসময় ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে কেএনএফ এক সদস্য আটক করেছে। আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রুমা সেনাজোনে আনুষ্ঠানিক প্রেসব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর রুমা জোনের কমান্ডার লে: কর্ণেল আলমগীর হোসেন বিষয়টি জানিয়েছেন।
নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নে পলি প্রাংসা ও মুয়ালপি পাড়ার মাঝামাঝি ১৬ কিলোমিটার দূরে তাইদং ঝিড়ি এলাকায় নাইতং পাহাড় এলাকায় সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। এসময় সেনাবাহিনী গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সুনিদিষ্টি আস্তানায় পৌঁছালে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। এসময় সেনাবাহিনী সঙ্গে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের ব্যাপক গুলি বিনিময় হয়। বন্দুকযুদ্ধের পর সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল তল্লাশি করে কেএনএফের পোষাক পরিহিত ২ জনের লাশ দেখতে পায়। তাদের একজন কেএনএফের কমান্ডার ও অপরজন অস্ত্রধারী সদস্য। তবে নিহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। এসময় ঘটনাস্থল কেএনএ আস্তানা থেকে থেকে ৩টি এসএমজি অস্ত্র, ১টি রাইফেল, ৮টি ম্যাগজিন, কেএনএ আর্মীর ইউনিফর্ম, বিপুল পরিমাণে অস্ত্রের গুলি, আগ্নেয়াস্ত্রের সরঞ্জাম, চাঁদার রশিদ’সহ সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
রুমা জোন চত্বরে প্রেসব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর রুমা জোনের কমান্ডার লে: কর্নেল আলমগীর হোসেন বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীরা সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেন সেনাবাহিনীর ১৬ই, ৩৬ ও ৩৭বীর বেঙ্গলের ইউনিটের নিরাপত্তার টিম। এই তিন বেঙ্গলের সাড়াশি অভিযানে কেএনএ কমান্ডারা:সহ দুজন নিহত ও তাদের আস্তানা ধ্বসের পাশাপাশি তাদের ব্যবহৃত সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান শুধুমাত্র পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। যারা স্থানীয় নাগরিক আছেন তাদের প্রতি সেনাবাহিনীর শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি রয়েছে। তাদের জানমালে নিরাপত্তায় রক্ষার্থে সেনাবাহিনী বদ্ধপরিকর।
এদিকে ভবিষ্যতে পর্যটন শিল্পের কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা প্রশ্নের জবাবে সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, কেএনএফ অস্ত্রধারীদের যেখানে অবস্থান রয়েছে, সেটি পর্যটন এড়িয়া থেকে অনেকদূরে। তাই পর্যটন শিল্পে কোন প্রভাব পড়বে না বলে আশাব্যক্ত করেন। পাহাড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে যাওয়া ১২৬ বম জনগোষ্ঠীর পরিবার ইতিমধ্যে নিজ গ্রামে ফিরে এসেছে, অন্যদেরও ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনী সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। ফিরে আসা গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা এবং খাদ্য বাসস্থানের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রসঙ্গত: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২০২২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ। বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলার নয়টি উপজেলা নিয়ে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণাও দেয় তারা। কয়েকটি সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজি এবং হত্যার অভিযোগ উঠতে থাকে শুরু থেকেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের পর আলোচনার টেবিলেও বসে তারা। কিন্তু এর মধ্যেই বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় দু’টি ব্যাংকের তিনটি শাখায় সশস্ত্র হামলা করে টাকা ও অস্ত্র লুটের পর আলোচনায় আসে এই সশস্ত্র সংগঠনটি। গত দুবছরে এই সংগঠনটির সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে ছয় সেনা সদস্যসহ অন্ততপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়। গ্রেফতার করা হয় কেএনএফের দেড়শতাধিক সদস্যকে।