অনুপম মারমা, থানচি
অল্প সময়ের ব্যবধানে দুইবার অগ্নিকান্ড শিকার হয়ে সকল সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে পরিবার পরিজন নিয়ে দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই। এমন পরিস্থিতিতে হার মানেনি মাত্র মারমা(৩৪)। স্থানীয় স্বজন নিকট ও ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ক্লান্তিহীন পথ পাড়ি দিয়ে উঠে দাঁড়ানো চেষ্টায় একদিন সন্তানদের মানুষ করে সুশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেন বান্দরবানে থানচি উপজেলা সদরের মাত্র মারমা। থানচি উপজেলা সদরের এক মাত্র বাজারে সেলাই মেশিনের চাকা ঘুরিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছুতে পরিবারের হাল ধরলেন মাত্র মারমা। স্বামী মংসিহ্লা মারমা স্বল্প শিক্ষিত চাঁন্দের গাড়ি চালিয়ে ছোট সংসারে ফুটফুটে দুইটি সন্তান একজন থানচি সরকারী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণিতে, অন্যজন মাতৃকোলে। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকে স্বামীর সাথে আলোচনা করে স্বপ্ন দেখেন একদিন আদর্শ মা হিসেবে সমাজের স্থান করে নেবে।
সম্প্রতি একান্ত সাক্ষাতকারে মাত্র মারমা প্রতিবেদককে বলেন, হত দরিদ্র মা- বাবা পরিবারের নারী সন্তান হওয়া প্রাথমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করার খুবই ইচ্ছে ছিল কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। দুঃখের বেদনা নিয়ে ১৭ বছর পূর্ণ হওযার পর কক্সবাজারে পরিচিত একটি টেইলার দোকানের ৬ মাসের সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ শেষ করে বিয়ে পিঁড়িতে বসতে হয়েছে। বর্তমানে এক ছেলে এক মেয়েকে সু শিক্ষিত করে সমাজের আদর্শ মা হওয়া অক্লান্ত শ্রমের মধ্য দিয়ে স্বপ্ন গুনছেন মাত্র মারমা। বান্দরবানে লামা উপজেলা রুপসী পাড়া ইউনিয়নের রুপসী পাড়ার বাসিন্দা জুমিয়া মংশৈহ্লা মারমা ও মাসানু মারমা তার বাবা মা। ২০১০ সালে একই জেলা থানচি উপজেলা বলিপাড়া ইউনিয়নের ক্রংক্ষ্যং পাড়া নিবাসী খ্যাবো মারমা ২য় সন্তান মংসিংহ্লা মারমা সাথে বিবাহ হয়। সে সময় মংসিহ্লা মারমা চট্টগ্রামের একটি পোষাক শিল্পের সামান্য বেতনের চাকুরী করেন। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে স্বামী চাকুরী বেতনের স্বল্প কিছু সঞ্চয় করে ২০১৮ সালে থানচি উপজেলা সদরে থানচি বাজারে একটি টিনসেড দোকান ভাড়া নেন। সেখানে গড়ে উঠেন সেলাই মেশিনের কাজ শুরু করেন তাছাড়া কিছু কসমেটিকস থামিন জাতীয় কাপড়-চোপড়ও ক্রয়-বিক্রয় করেন।
২০২০ সালে মহামারী করোনা ভাইরাস লকডাউন, একই বছরে ২৭ এপ্রিল বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ৫ লক্ষাধিক মালামাল ও নগদ অর্থ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সে সময় কিছু সঞ্চয় জমানো দিয়ে ফের ব্যবসা শুরু করেন। ২০২৩ সালে ২৭ শে মার্চ ফের থানচি বাজারের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৮ লক্ষাধিক মালামালসহ নগদ অর্থ পুড়ে ছাই হয়েছে। স্বামী আত্মীয় স্বজন ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে একই বাজারে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের বাজার ফান্ডের আওতায় একটি প্লট ৫ বছর মেয়াদি ভাড়া নিয়ে ফের শুরু করেন সেলাই মেশিনের কাজ।
মাত্র মারমা বলেন, গত মে ২০২৩ সালে শুরু করে অদ্যবধি ৭ মাস অতিবাহিত হয়েছে। বর্তমানে দোকানে সব মিলিয়ে প্রতিদিন তিন হাজার টাকা আয় হয়েছে। দুর্গা পূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমায় নতুন কাপড়-চোপড় সেলাই কাজের ব্যস্ত সময় কাটান। তিনি বলেন, সরকারিভাবে কিছু ঋণ বা পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার স্বপ্ন পূরণের বাধা বিপত্তি কাটিয়ে উঠবে বলে জানান তিনি।