খিয়াং সমাজে নারীরা অধস্থনের মর্যাদা পাচ্ছে,অন্যান্য অনেক সমাজের মতো খিয়াং সমাজেও নারীকে পুরুষের ছত্রছায়ায় বসবাস করতে হয়।
মঙ্গলবার রাঙামাটি শহরের স্থানীয় একটি রেষ্টুরেন্টে ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ-এর অর্থায়নে ‘‘উইমেন্স এ্যাডভান্সমেন্ট ফর এ্যাডুকেশন এন্ড এ্যামপাওয়ারম্যান্ট’ (উইভ) নারী পরিচালিত একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা এর উদ্যোগে দিনব্যাপি এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা উইভ এর নির্বাহী পরিচালক নাইপ্রু মেরী মারমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন,ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ এর ‘জেন্ডার এন্ড এলসিবি ক্লাষ্টার’ এর ঝুমা দেওয়ান,ইউএনডিপির রাঙামাটি জেলা ব্যবস্থাপক ঐশ্বর্য্য চাকমা,নারী নেত্রী টুকু তালুকদার।
সভায় বক্তারা বলেন, ইতিপূর্বে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে কপো সেবা সংঘ ২০০৭ সালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আদিবাসীদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আইন’, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ২০১৩ সালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সংক্রান্ত প্রথা ও রীতি’ এবং বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উদ্যোগে মঙ্গল কুমার চাকমার সম্পাদনায় এ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমার ‘প্রথাগত আইনে আদিবাসী পাহাড়ী নারীর অবস্থান’ শীর্ষক গ্রন্থ সমূহ প্রকাশিত হয়েছে। এ সব গ্রন্থে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী সমূহের মধ্যে যে সব প্রথাগত রীতি সমূহ প্রচলিত রয়েছে তার একটি অনুপুঙ্খ বিবরণও রয়েছে। কিন্তু এ সব প্রকাশনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠী সমূহের উত্তরাধিকার ও তাদের অন্যান্য প্রথাগত আইনে নারীর সুনির্দিষ্ট অবস্থান সে ভাবে নির্ণীত হয় নি।
বক্তারা বলেন,খিয়াং ছাড়াও ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও মেয়েদেরকে সম্পত্তির ভাগ দেয়া মানে সেই সম্পত্তি বেহাত হওয়ার একটা মনমানসিকতা প্রচলন আছে। বৌদ্ধধর্মাবলম্বী খিয়াংদের মধ্যে মারমাদের অনুরূপ একটি সাধারণ বিশ্বাস প্রচলিত আছে যে, পুরুষদের ‘‘ফুং” (অর্থাৎ গুণরাজি/গরিমা) বড় ও নারীদের ‘‘ফুং” ছোট। নারী কোনভাবেই পুরুষের সমকক্ষতা অর্জন করতে পারে না। জরিপের বিশ্লেষণে এমন ধারণাই ঘুরেফিরে প্রতিফলিত হয়েছে। তাই এ কথা না বলে উপায় নেই যে, মানব সমাজের অন্যান্য অনেক জনগোষ্ঠীর মতো খিয়াং সমাজেও নারীরা তাদের প্রথাগত নিয়ম ও নীতির বৈষম্যমূলক বিধান থেকে মুক্ত নয়। কিন্তু বৈষম্যযুক্ত সমাজে মানবিকতার চর্চা ও তার ন্যায্যতা প্রাপ্তির পথ বরাবরই রুদ্ধ থাকে। মানবিকতাকে স্ব-মর্যাদায় ও স্ব-মহিমায় প্রতিষ্ঠিত দেখতে হলে সমাজে নারী ও পুরুষের সম-অধিকার ও সম-মর্যাদা নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই।
সভায় জানানো হয় রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই ও রাজস্থলী উপজেলার ৮ টি গ্রামে এ জরিপ চালানো হয়। গ্রামগুলো হলো, খিয়াং মিশন পাড়া (কাপ্তাই উপজেলা) রাজস্থলী উপজেলার আড়াছড়ি, ধনুছড়ি, কুইক্ক্যাছড়ি , শীলছড়ি , গ্রু¤্রং , জি¤্রং বড় কুইক্ক্যাছড়ি । সভায় অনান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এ্যাডভোকেট দীননাথ তঞ্চঙ্গ্যা, প্রফেসর মংসানু চৌধুরী প্রমুখ।