হেফাজত সবুজ
নগর পিতা হিসেবে যে ভূমিকায় থাকা উচিত,বহুদিন পর হলেও যেনো সেই ভূমিকায় বেশ সক্রিয়ভাবেই অংশ নিলেন রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র ও জেলা যুবলীগ সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী। রবিবার রাঙামাটিতে মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভায় অংশ নিয়ে মেয়র বেশ কিছু জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। পৌরবাসির মুখে মুখে থাকা বেশ কিছু বিষয় তিনি এদিন তুলে ধরেন সভায়।
পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কের আশপাশে মানুষ নিজের খেয়াল খুশিমত কটেজ নির্মাণ করছেন। এতে এই সড়কের সৌন্দর্য অবোলোকনে বাধা তৈরি হচ্ছে। এখনি এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এই অপার সম্ভাবনাময় সড়কটি প্রাকৃতিক দৃশ্য নষ্ট হবে,যেমনটি হয়েছে সাজেকের। তিনি বলেন, কটেজ নির্মাণ করুক তবে অবশ্যই সেটি যেন নির্মাণ করা হয় পাহাড়ের নিচে। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর হবার অনুরোধ জানান তিনি।
মেয়র আরও বলেন, শহরে সড়কের দুই পাশে ফুটপাত লাগোয়া জায়গা খালি পড়ে আজো। এগুলো কার্পেটিং করে দিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কার্পেটিং হয়ে গেলে এখানে কেউ আর ভাসমান ব্যবসা করে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করতে পারবে না বলে মনে করেন তিনি। ফিসারী বাঁধে কি কাজ করা হচ্ছে তা জানতে চেয়েছেন মেয়র। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই বাঁধ নিয়ে বেশ কিছু পরিকল্পনা ছিল। সড়ক বিভাগ এখানে কি করছে তা আমরা জানি না। এই বাঁধটি পর্যটকবান্ধব করা হবে কিনা? এছাড়া জেল রোডের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকটি বড় করার অনুরোধ করেন তিনি।
তবে এই বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আলনুর সালেহীন বলেন, মূলত ফিসারি বাঁধটির রাস্তা রক্ষার জন্য এই ধারক দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে দেয়ালটি আমরা সড়কের সমান উচ্চতায় রেখেছি। এখানে মাটি ভরাট করা হবে। তবে যেহেতু এটি খুবই সুন্দর স্থান তাই সৌন্দর্য বর্ধন করার জন্য চেষ্টা করা হবে। তবে এই প্রকল্পে শুধুমাত্র মাটি ভরাট করা পর্যন্তই বরাদ্দ আছে। আমরা আপনাদের সাথে বসে কিভাবে বাঁধের সৌন্দর্যবর্ধন করা যায় সেটা নির্ধারণ করে সেভাবে কাজ করবো।
এই বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হাজি কামাল উদ্দিন বলেন, এভাবে পাইলিং করে ধারক দেয়াল করাটা কি দেশের টাকা অপচয় হচ্ছে কিনা? জবাবে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, এধরনের কাজ সড়ক বিভাগ প্রথম করছে। দীর্ঘস্থায়ীত্বের জন্য এখন থেকে এভাবেই সকল কাজ করবে সড়ক বিভাগ।
রবিবার সকাল জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, পৌর মেয়র অকবর হোসেন চৌধুরী, সিভিল সার্জন নীহার রঞ্জন নন্দী, জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী আহম্মদ শফি, সড়ক ও জনপথসহ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলার বিভিন্ন দপ্তর প্রধান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সম্প্রতি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া কি ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে জানতে চাইলে নতুন যোগ দেয়া সিভিল সার্জন ডা.নীহার রঞ্জন নন্দী বলেন, দুর্গম পাহাড়ে, বিশেষ করে জুরাছড়ি উপজেলার মৈদং ও দুমদুম্যায় রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেশি। তবে এতে শঙ্কিত হবার কিছু নেই। এই সময়ে এমনিতেই ম্যালেরিয়া রোগ বৃদ্ধি পায়। ইতোমধ্যে দুর্গম ওই সব এলাকায়, আমাদের ও ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছে। তার পর্যপ্ত কীট ওষুধ নিয়ে গেছে। এলাকায় এলাকায় তারা রক্ত পরীক্ষা করেছে। খুব দ্রুতই এই প্রকোপ কমে আসবে।
রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ব্র্যাক থেকে সরবরাহকৃত ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক মশারির মেয়াদ কাল তিনবছর। এই সময় পেরিয়ে গেলে এই মশারির কার্যকারিতা থাকে না। বিতরণকৃত মশারির মেয়াদকাল শেষ হয়ে যাওয়া ম্যালেরিয়া বেড়ে গেছে। তবে এবছর জুনে জেলায় নতুন করে সাড়ে তিন লাখ মশারি বিতরণ কার হয়েছে। ম্যালেরিয়া নির্মূল করতে কাজ করে যাচ্ছি। এবার আমরা ঘরের রুম অনুপাতে মশারি দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। অনেকেই মশারি ব্যবহার করতে চায় না, তাই এমনটা হচ্ছে। বিশেষ করে যারা জুমে কাজ করেন তারা যেন অবশ্যই রাতে মশারি টাঙিয়ে ঘুমায় এবং বসত বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার আহবান জানান তিনি।
পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বলেন, দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় রাঙামাটিতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভাল। এখানে মানুষের মাঝে অপরাধ প্রবণতা নাই বললেই চলে। গেল মাসে চুরির ঘটনা ঘটেছে একটি। তাও আমরা চোরকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। হত্যার ঘটনা ঘটেছে একটি। যদিও সেটি বান্দরবানে কুকিচিন পার্টি ঘটিয়েছে। আমাদের দুই সেনা সদস্য নিহত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছিল বিলাইছড়িতে। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। এছাড়া বলার মত আর কোন ঘটনা ঘটেনি এই জেলায়। স¤প্রতি সময়ে শহরের বনরূপা এলাকায় পৌরসভাকে সাথে নিয়ে আমরা উচ্ছেদ অভিযান করছিলাম। যার সুফল আমরা পেতে শুরু করেছি। ওই এলাকার যানজট অনেক কমে গেছে। এজন্য অবশ্য আমি রাঙামাটি পৌরসভা, অটোরিকশা চালক সমিতিসহ সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ জানাই। সকলে সহায়তা করেছেন বলে এ কাজ করা সম্ভব হয়েছে। কোন ভাবেই আমরা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চাই না। তবে বাজারের ভেতরে কিছু অনিয়ম এখনও আছে। দোকানদারগণ তার দোকানের সামনে সরকারি রাস্তা ভাড়া দিচ্ছেন। এটা করা যাবে না। এটাও এক ধরণের অপরাধ। আশা করবো আপনার নিজ থেকেই সচেতন হয়ে একাজ বন্ধ করবেন। অন্যথার বাজার সমিতিকে সাথে নিয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। আমরা আইন প্রয়োগ করতে চাইনা, আপনাদের সহযোহিতা চাই।
তিনি আরও বলেন এ বর্ষায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে ঝোপঝাড় বেড়ে গিয়ে দৃষ্টি সীমা সীতিত হয়ে গেছে। রাতে আমাদের পুলিশ সদস্যরা এই সড়কে নিরাপত্তায় কাজ করেন। কিন্তু এসব ঝোপের কারণে বেশি দূর দেখন পান না। এতে আমার সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রতি অনুরোধ রাখবো এসব ঝোপঝাড়গুলো যাতে পরিষ্কার করে দেয়া হয়। তাতে চালক ও পুলিশ সদস্য সকলের জন্য মঙ্গল হবে।
পর্যটকবাহী বোট সমূহের ফিটনেস ও চালকদের দক্ষতার বিষয়ে খুব সহসায় কাজ শুরু করা হবে বলে জানান পুলিশের এই শীর্ষ কর্তা। যাতে রাঙামাটিতে ঘুরতে আসা পর্যটকগণ নিরাপদে ভ্রমণ শেষ করে নিজ গন্তব্যে ফিরে যেতে পারেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা সকলে কাজ করে যাচ্ছি। সড়ক বিভাগ সড়কে গতি প্রতিরোধক স্থাপন করেছে। তার পরে কেন জানি আমরা সচেতন হচ্ছি না। আমাদের দেশের মত এত গতি প্রতিরোধ পৃথিবীর আর কোন দেশে আছে কিনা তা আমার জানা নেই। যে কোন ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফেরাতে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। পৃথিবীর কোন দেশে কি ঘটলে সেটা আমাদের বিবেচ্য নয়। সেটাকে কেন্দ্র করে যাতে আমাদের দেশে বা জেলায় কেউ কিছু ঘটতে না পারে সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যে যাতে কেউ গুজব ছড়াতে না পারে সেটা সবাই খেয়াল রাখবেন।
তিনি আরও বলেন, সামনে শোকাবহ আগস্ট মাস। এ মাস আমাদের জন্য লজ্জার মাস। এই মাসে ঘাতকরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্য করেছিল। যথাযথ মর্যদায় এই মাস পালনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে আমরা পালন করবো। আগস্ট মাসকে কেন্দ্র করে কেবিনেট পর্যায় থেকে একটি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচিটি হচ্ছে-এক মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তথ্য চিত্র প্রতিযোগিতা। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করবে। তারা জাতির জনককে নিয়ে কী ভাবে তা ফুটিয়ে তুলবে। এই কন্টেটটি এই মাসের ১৬ তারিখের মধ্যে স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগের প্রধানদের সাথে মিটিং শেষ করারহয়েছে। বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে প্রচারণা চলছে। আরো প্রচারণা চালালো হবে। আপনারাও প্রচার করবেন। উপজেলার বিজয়ী দলগুলো জেলায়, জেলা থেকে বিভাগ এবং বিভাগ থেকে জাতীয় পর্যায়ে যাবেন প্রতিযোগিরা। এই মহতি কাজে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।