আরমান খান,লংগদু
রাঙামাটি লংগদুতে চুরির অপবাদ দিয়ে এক যুবককে বেদম মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত যুবক লোকমান হোসেন (৩০) বর্তমানে লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছে। লোকমান হোসেন উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের যাত্রামুড়া গ্রামের বাসিন্দা আনসার আলীর ছেলে। এই ঘটনায় আটারকছড়া ইউনিয়নের সদস্য জিয়াউর রহমানকে দ্বায়ী করছেন আহত যুবক লোকমান ও তার পরিবার।
মঙ্গলবার দুপুরে লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বিছানায় ব্যাথায় কাতর হয়ে শুয়ে আছে আহত লোকমান। তার শরীরে অসংখ্য যখমের ক্ষত। চোখ পিঠ কোমর উরুসহ হাত ও পায়ে আঘাতে চিহ্ন। কোমরের আঘাতের জন্য চিকিৎসক এক্সরে করার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু শরীর ব্যাথায় হাটা চলা করতে না পারায় এক্সরে করাতে পারছে না বলে জানান লোকমানের মা।
আহত লোকমান হোসেন বলেন, গত শনিবার (২৯ জুলাই) রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে রেংকাজ্যা রাস্তার মাথা এলাকায় একজনের কাছে পাওনা টাকা আনতে যাই। টাকা নিয়ে ফেরার পথে কয়েকজন পাহাড়ি যুবক আমাকে আটক করে হাত ও চোঁখ বেঁধে একটা উচু পাহাড়ে কোনো একটা বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে বাড়ির উঠানে একটা গাছের সাথে সারারাত বেঁেধ রাখে। পরের দিন (রবিবার) সকালে ইউপি সদস্য স্মরণিকা চাকমার বাড়িতে নিয়ে আসে। এ সময় ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমান, সাবেক ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন, বাবুল মিয়া, হানিফ মিয়া সহ বেশ কয়েকজন স্মরনিকা মেম্বারের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে আমাকে মারধর শুরু করে। কিল ঘুষি, লাথি ও বেতের লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে। মার খেয়ে পিপাসায় আমি পানি খেতে চাইলে আমাকে নিজের প্রসাব খেতে বলে জিয়া মেম্বার। স্মরনিকা মেম্বারের বাড়ি রাস্তার পাশে হওয়ায় নিরাপত্তাবাহিনীর কেউ দেখে ফেলার ভয়ে আমাকে নিয়ে অন্য একটা বাড়িতে যায়। দ্বিতীয় দফায় আবারো সেখানে মারধর করে এবং বলে তোকে অনেক দিন পর পাইছি। তোকে আজ মেরেই ফেলবো, দেখি তোর কোন বাবা এসে বাঁচায়। পরে ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদারের মাধ্যমে আমাকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে। এরপর আমার স্ত্রী গিয়ে আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। তখন থেকে বাড়ীতেই ওষুধ পথ্য খেয়ে কোনোমতে জীবন বাঁচিয়েছি। সোমবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই।
এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লোকমানের প্রতিবেশি বেলাল হোসেন জানান, লোকমানকে পাহাড়িরা বেঁধে রাখছে শুনে আমিও স্মরণিকা মেম্বারের বাড়িতে যাই। গিয়ে দেখি জিয়া মেম্বারসহ তার সাথে থাকা সাবেক মেম্বার আলমগীর, আলমগীরের ভাই জাহাঙ্গীর, জিয়া মেম্বারের ভাইজি জামাই বাবুল, হানিফ সবাই মিলে ঘরের দরজা বন্ধ করে লোকমানকে বেধরক মারধর করছে। এভাবে মানুষ কখনো মানুষকে মারতে পারে না। পরে স্মরণিকা মেম্বার এসে দরজা খুলে লোকমানকে বাহিরে নিয়ে আসে। এ সময় জিয়া মেম্বার আহত লোকমানকে ফেলে রেখে চলে আসে। পরে পরিষদের চৌকিদারের মাধ্যমে তাঁকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। তবে কি কারণে তাকে মারধর করা হলো সে বিষয়ে তেমন কিছু জানিনা। চুরির সাথে লোকমান কখনো জড়িত ছিল বলেও শুনিনি। তবে লোকমান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলামের অনুসারী হওয়ায় জিয়া মেম্বারের ক্ষোভ ছিল বলে শুনেছি বলেন প্রত্যক্ষদর্শী বেলাল।
সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য স্মরণিকা চাকমা বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটছিল। আমরা এলাকাবাসি মিলে যুবকদের দিয়ে গ্রামে পাহারা বসিয়েছি। গ্রামে প্রবেশের রাস্তায় গত দুই সপ্তাহ ধরে যুবকরা পাহারা দেয়। শনিবার (২৯ জুলাই) রাত তিনটার দিকে লোকমানকে চুরিকরা মুরগীসহ হাতেনাতে ধরা হয়। এ সময় এলাকাবাসী তাকে মারধর করে এবং বেঁধে রাখে। পরে সকালে ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমানকে খবর দিলে তিনি এসে লোকমানকে উদ্ধার করে আমার বাড়িতে আনেন। এখানে একটা রুমে জিজ্ঞাসাবাদ করলে চুরির সাথে জড়িত আরো তিন জনের নাম প্রকাশ করে লোকমান। এ সময় জিয়া মেম্বারের সাথে স্থানীয় আরো ১০/১২ জন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ছিলেন। পরে কিছু সময়ের জন্য আমি দোকানের দিকে চলে যাই। এ সময় কোনো মারধর করা হয়েছে কিনা আমার জানা নাই। এ বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অজয় মিত্র চাকমাকে অবগত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে কথা হয় আটারকছড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, লোকমান সম্পর্কে আমার ভাগিনা। তবে সে অতীতে এলাকায় কিছু চুরির সাথে জড়িত ছিল। কিন্তু চুরির অপরাধ হলেও তাকে মারধর করে আহত করা কোনোভাবেই কাম্য না। আমি এলাকায় ছিলাম না তাই খবর নিতে পারি নাই। তবে জিয়া মেম্বারের সাথে ফোনে কথা বললে তিনি জানান লোকমানকে পাহাড়িরা মারধর করেছে। তিনি গিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসছেন।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, “আমার এলাকাসহ আশেপাশের আরো কিছু এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। শনিবার রাতেও এমন একটা চুরির দায়ে পাহাড়ি এলাকায় লোকমান ধরা পরে। এ সময় তার সাথে থাকা বাকি দুজন পালিয়ে যায়। আমি রাতেই খবর পেয়েছি পরে সকালে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসি। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই এবং মঙ্গলবার (১ আগস্ট) এ বিষয়ে বিচার করা হবে বলে অঙ্গিকার নিয়ে লোকমানকে তার স্ত্রীর জিম্মায় দেওয়া হয়। লোকমানকে শনিবার রাতেই এলাকাবাসি মারধর করে। কিন্তু এখন শুনছি লোকমান ও তার পরিবারের সদস্যরা আমার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করছে। যা একেবারেই অবান্তর ,তবে আমার উচিৎ ছিল লোকমানকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া। কারন সে চিহ্নিত চোর। এলাকায় অনেকবার তার বিচার আচার করা হয়েছে। শশুরবাড়ীর এলাকা নানিয়ারচরেও চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে অনেক বার”
এ বিষয়ে আটারকছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অজয় মিত্র চাকমা বলেন, আমিও শুনেছি এলাকায় একজন চোরকে ধরে গণধোলাই দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি যেহেতু চুরির তাই এ বিষয়ে চোরকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য জিয়া মেম্বারকে পরামর্শ দিয়েছি। কিন্ত মারধরের শিকার লোকমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় আজ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
চুরির অভিযোগে যুবককে বেদম পেটুনি, অভিযোগ ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে!
Previous Articleআলী’র শখের বড়শিতে আটকা কর্ণফুলীর ২৩ কেজির কোরাল
এই বিভাগের আরও সংবাদ
সম্পাদকঃ ফজলে এলাহী
নির্বাহী সম্পাদকঃ হেফাজত সবুজ
প্রধান কার্যালয়
পৌর মার্কেট, দ্বিতীয় তলা, পৌরসভা এলাকা, রাঙামাটি-৪৫০০
ফোন : ০১৭১৮৫৪৭৮৭৮, ০১৬১৮৫৪৭৮৭৮।
ইমেইল : pahar24news@gmail.com
পাহাড়ের সংবাদ
আমাদের সম্পর্কে
© 2024 All Rights Reserved pahar24.com. Developed by MicroWeb Technology.