শংকর হোড় ॥
রাঙামাটিতে দু’পক্ষের সংঘর্ষের পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার ডাকে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ গতকাল রাত ১২টায় শেষ হয়েছে। তবে প্রথম দুইদিনের তুলনায় গতকাল রাঙামাটি শহরে বেড়েছে যান চলাচল। রাঙামাটিতে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা পরিবহন ধর্মঘট জেলা প্রশাসকের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে প্রত্যাহার করার পর গতকাল সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ি নিয়ে সড়কে বের হয়। এতে চিরচেনা রাঙামাটি স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে। গতকাল সকাল থেকে শহরের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল শুরু হয়। এতে নগর জীবনে স্বস্তি ফিরে আসে। পাশাপাশি রাঙামাটি-চট্টগ্রাম রুটে চলে যান চলাচল। তবে বন্ধ ছিল রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি-বান্দরবানে রুটে যান চলাচল। অবরোধের কারণে ছেড়ে যায়নি যাত্রীবাহি কোনও লঞ্চ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।
এদিকে অবরোধের কারণে মেঘের রাজ্য খ্যাত সাজেক ভ্যালিতে বেড়াতে গিয়ে তিনদিন ধরে আটকা ছিল প্রায় দেড় হাজার পর্যটক। গতকাল রাতে অবরোধ শেষ হওয়ার পর আজ সকালে পর্যটকরা সাজেক ছাড়ার কথা রয়েছে। তবে গত চারদিন ধরে সাজেকে বিদ্যুৎ না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছিল পর্যটকরা। বৃহস্পতিবার রাতে দীঘিনালা-সাজেক সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটির ওপর গাছ পড়ে সাজেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। চারদিন ধরে জ্বালানি তেল দিয়ে জেনারেটর ব্যবহার করে পর্যটকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে পারলেও অবরোধে জ্বালানি তেলের গাড়ি সাজেকে যেতে না পারায় তেল সঙ্কট দেখা দেয় সাজেকে। এতে পানি ও বিদ্যুৎ নিয়ে পর্যটকরা ভোগান্তি পড়েছে।
সেলিম উদ্দিন নামে এক পর্যটক জানিয়েছেন, এখানে আসার পর বিদ্যুৎ ছিল না। জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা সার্বক্ষণিক পাচ্ছি না। এখন নাকি জ্বালানি তেলও শেষ হয়েছে তাই জেনারেটরও চালাতে পারছে না। আজকে(সোমবার) রাত কীভাবে কাটাবো বুঝতে পারছি না। আবার পানিও পর্যান্ত নেই। সবমিলে দুর্বিষহ জীবন।
সাজেকে তিন শতাধিক কটেজ ও রেস্টুরেন্টে মালিক কর্মচারী রয়েছে প্রায় আরো দেড় হাজার মানুষ অবস্থান করে সব সময়। সাজেকে পর্যটক ও ব্যবসায়ী মিলিয়ে প্রায় তিনহাজার পর্যটকের খাবার সেখানে মজুদ না থাকায়, খাবার, জ্বালানি তেল, জ্বালানি গ্যাস সংকটে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে সাজেকে অবস্থান করা পর্যটকদের খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
সাজেক অবকাশ কটেজের সত্ত্বাধিকারী বিজয় ঘোষ জানান, সাজেকে অবরোধের কারণে আমাদের কটেজেই ৬৫জনসহ সাজেকে প্রায় দেড় হাজার পর্যটক আটকা পড়ে আছে শনিবার থেকে। সেখানে বিদ্যুৎ নেই বৃহস্পতিবার থেকে। জেনারেটর দিয়ে পর্যটকদের সেবা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু বর্তমানে জ্বালানি তেলের সঙ্কটে সে সেবাও বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে গরমে শিশুরা কষ্ট পাচ্ছে। অনেক অসুস্থ রোগী আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
তিনি আরো জানান, সেখানে খাবারে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কারণ সেখানে অগ্রিম তেমন খাবার মজুদ রাখা হয় না। খাবার নিয়ে যেতে হয় ৪০ কিলোমিটার দূরে বাঘাইহাট থেকে। কিন্তু অবরোধের কারণে তা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে সাজেকে মনটানা রেস্টুরেন্ট গতকাল(রবিবার) থেকে বন্ধ রয়েছে। আমাদের কটেজের লোকজনের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছি। একটি রেস্টুরেন্টের সাথে কথা বলেছি তারা দুপুরে শুধু ডাল ভাত খাওয়াতে পারবে। সেখানে জ্বালানি তেল পাঠানো গেলে সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে বলে আশা করছি।
সাজেক নিরিবিলি কটেজের মালিক মো. ফয়সাল আহমেদ জানান, সাজেকে প্রচুর পর্যটক আটকা আছে। সেখানে অবরোধের কারণে তেল নেয়া সম্ভব না হওয়ায় পানিসহ বেশ কিছু সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি চাই থোয়াই চৌধুরী জয় জানিয়েছেন, আটকা পড়া পর্যটকদের জন্য প্রথমদিন ৫০ভাগ ডিসকাউন্ট এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন ৭৫ ভাগ ডিসকাউন্ট দেয়া হয়েছে। রিসোর্ট ও কটেজ মালিক সমিতি পর্যটকদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, খাদ্য অপ্রতুলতার কারণে আজ(সোমবার)রাতে কটেজ মালিক মালিক সমিতি ও ট্রাভেল এজেন্সি ইলেকট্রনিক ট্যুরিজম এসোসিয়েশনের উদ্যোগে পর্যটক, গাড়ির চালক, স্টাফ সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা আমাদের অতিথি, তাদের যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য আমরা সবসময় তাদের পাশে আছি।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, অবরোধের কারণে বাঘাইহাট-দীঘিনালা সড়কে একাধিক স্থানে গাছের গুঁড়ি ফেলা রাখা হয়েছে। এতে গাড়ি চলাচল করতে না পারায় পর্যটকদের তিনদিন সেখানে অবস্থান করতে হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল সকাল তারা সাজেক ত্যাগ করতে পারবে। তিনি আরো বলেন, খাদ্যের সঙ্কটের বিষয়ে আমরা তেমন কোনও সংবাদ পাইনি, তবে বিদ্যুতের সমস্যা আছে।