নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
জুম্ম জাতির জনক মানবেন্দ্র নারায়ণ লারম’র(এমএন লারমা) ৪১ তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জুম্ম জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে রাঙামাটিতে। রবিবার সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙামাটি জেলা কমিটির আয়োজনে রাঙামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র অস্থায়ী প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্মরণ সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, সদস্য মনি চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম রাঙামাটি অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিকর্মী শিশির চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি এডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান, বিশিষ্ট আইনজীবী জুয়েল দেওয়ান, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ¤্রানুচিং মারমা। সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি ডা. গঙ্গা মানিক চাকমা। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জনসংহতি সমিতি রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা।
সভায় প্রধান আলোচক ঊষাতন তালুকদার বলেন, এমএন লারমাকে হত্যা নিছক কোনও হত্যাকান্ড নয়; এর মাধ্যমে জুম্ম জাতির আন্দোলনকে নসাৎ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেদিন ষড়যন্ত্রকারীরা ভেবেছিল এমএন লারমাকে হত্যা করলেই জুম্ম আন্দোলন থেমে যাবে, কিন্তু এমএন লারমা’র আদর্শকে ধারণ করে সেদিন আরো শত-সহ¯্র যুবক স্বজাতির অধিকারে আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে সরকার জনসংহতি সমিতির সাথে পার্বত্য চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিল। তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
ইউপিডিএফের সাথে এখনো বৈঠকের আগ্রহ জেএসএসের আছে জানিয়ে ঊষাতন তালুকদার বলেন, ওরা যদি ঐক্য চাই, তাহলে কী দরকার ছিল জুরাছড়িতের যাওয়ার, যদি ঐক্য চাইতো তাহলে মাইকেল চাকমা, যিনি কিছুদিন আগে আয়নাঘরের দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি বলছেন চুক্তি মানেন না, নতুন চুক্তি করতে হবে। ঊষাতন তালুকদার এসময় প্রশ্ন করেন, হেডাম আছে? আমাদের চুক্তি একটু ঘষামাজা করে অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদের কাছে সেই কাগজ দাখিল করলো। তিনি আরো বলেন, ইউপিডিএফ ছলনা ও ভাঁওতাবাজি কত ফন্দি-ফিকির আঁটে। ঢাকায় বদরুদ্দিন উমরের পরামর্শে ওরা খেলতেছে। এখন ‘এগত্তর’ ‘এগত্তর’ খেলছে। ‘এগত্তর’ এমনভাবে আওয়াজটা তুললো যেন মনে হচ্ছে জনসংহতি সমিতি ঐক্য চাই না, আমরা এককভাবে থাকতে চাই। এগত্তর এগত্তর করে আন্দোলন হয় না। জনগণের ব্যাপক সমর্থন ছাড়া আন্দোলন হয় না।
সভায় বক্তারা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সংগ্রামী জীবনের কথা তুলে ধরে বলেন, এমএন লারমা তাঁর জীবন শোষিত, নিপীড়ন ও অধিকারহারা মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। এমএন লারমা জীবনভর স্বজাতির অধিকারের লড়াইয়ে সামিল ছিলেন। বক্তারা আরো বলেন, লড়াই সংগ্রাম ছাড়া পৃথিবীতে কোনো জাতির অস্তিত্ব টিকে থাকেনি। তাই অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে তরুণদেরকেই অধিকতর সামিল হতে হবে। এম এন লারমার আদর্শকে ধারণ করে পাহাড়ের অধিকারহীন মানুষের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
প্রসঙ্গত, এমএন লারমা ১৯৭০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম আসন থেকে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ৪ দফা সংবলিত আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের দাবিনামা পেশ করেন। সেই সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) গঠন করে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনসংহতি সমিতির মনোনীত প্রার্থী হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। একই বছর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতির দায়িত্ব নেন। এমএন লারমা ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর ৮ সহযোগীসহ দলের বিভেদপন্থি গ্রুপের হাতে নিহত হন।