মিশু মল্লিক ॥
শীতের মৌসুম মানেই হরেক পদের পিঠার জমজমাট আয়োজন। বাড়ি থেকে ফুটপাত সর্বত্রই নানান পদের পিঠা তৈরি হয়। এসময় অনেকেই খুলে বসেন পিঠার দোকান। নতুন চাল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পিঠা ভোজনরসিকদের রসনা বিলাসের তালিকায় ঠাঁই করে নেয় নিয়মিত। সচরাচর ভাঁপা, চিতই আর তেলেভাজা পিঠার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে ভাঁপা পিঠা খেতে ভালোবাসেন সকল বয়সী মানুষ।
সাধারণত ভাঁপা পিঠা তৈরি হয় সাদা চালের গুড়া দিয়ে। কিন্তু পাহাড়ের চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন। এখানে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে জুমে উৎপাদিত বিনি চালের কালো ভাঁপা পিঠা। দেখতে অনেকটা চকলেট কেকের মত এই পিঠা। শহরের বিভিন্ন এলাকায় বসেছে এই পিঠার ভাসমান দোকান।
শহরের রাজবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি পিঠার ভাসমান দোকান তৈরি হয়েছে। যাদের প্রায় সবাই কালো বিনি চালের পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত। সাদা চালের পিঠার চেয়ে এই পিঠার চাহিদাই বেশি দেখা গেল।
বিকেল থেকে রাত অব্দি এসব দোকানে চলে পিঠা বিক্রি। বিকেলের কিছু পর থেকে ক্রেতা সমাগম বাড়তে শুরু করে। কিছু দোকানে পিঠার স্বাদ নিতে আসা ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে।
প্রতিদিন বিকেলে পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতা পরানি চাকমা। তিনি জানালেই এই পিঠা বানানোর প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, এই চালগুলো পাহাড়ের জুমে উৎপাদিত বিশেষ বিনি চাল। চাল সংগ্রহ করার পর আমরা এগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে শুকাই। শুকানোর পর মেশিনে গুড়ো করা হয়। গুড়ো হওয়া চালগুলো হালকা পানি এবং লবণ দিয়ে মাখানোর পর ভাঁপে দেয়া হয় এবং কিছুক্ষণ পর নামিয়ে পরিবেশন করা হয়।
তিনি আরো বলেন, এই পিঠাগুলো কিছুটা আঁঠালো কিন্তু অন্যান্য চালের গুড়ার পিঠার চেয়ে এগুলোর স্বাদ বেশি। প্রতিদিন ৫-৬ কেজি চালের পিঠা তৈরি করি এবং ২-৩ হাজার টাকা বিক্রি হয়।
আরেক বিক্রেতা গরিকা চাকমা বলেন, বিনি চাল অনেক প্রকারের হয়। সাদা বিনিও হয়, তবে এই কালো বিনি চালটার নাম লঙ্কা পড়া বিনি। এই চালের গুড়ার সাথে নারিকেল, গুড় মিশিয়ে ভাঁপে দিয়ে পিঠাটা তৈরি করা হয়। এই পিঠার স্বাদ অন্যান্য পিঠা থেকে বেশি তাই সবার মধ্যে এটির চাহিদাও বেশি।
বিকেলে পর থেকে পিঠাপ্রেমীদের ভিড় জমতে শুরু করে স্টেডিয়াম এলাকায়। ছোট-থেকে বড়, পাহাড়ি-বাঙালি সকলের কাছেই সমান জনপ্রিয় এই কালো পিঠা। কাঁঠাল পাতায় করে পরিবেশন করা হয় এই পিঠা।
পিঠা খেতে আসা ক্রেতা সুরভি চাকমা বলেন, এই পিঠাটি বাংলাদেশের অন্যকোথাও পাওয়া যায় না। এটি শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামেই পাওয়া যায়। সাদা পিঠার চেয়ে এই পিঠার স্বাদ বেশি, তাই খেতে আসা।
আরেক ক্রেতা পলেন চাকমা বলেন, এই পিঠাটা একটু আলাদা। সাদা পিঠা একটু শক্ত হলেও এটা নরম হয়। যেহেতু চালটার বিশেষত্ব আছে, তাই পিঠাটার স্বাদ এবং পুষ্টিগুণও ভালো।
মিরাজু চাকমা বলেন, পাহাড়ে অনেক ধরণের পিঠাই হয়। যার মধ্যে কলাপাতা পিঠা, ছাইন্না পিঠা, বড়া পিঠা ইত্যাদি অন্যতম। তবে নতুন বিনি চালের এই পিঠাটা অন্যান্য পিঠাগুলোর থেকে স্বাদে আলাদা। তাই এটার জনপ্রিয়তাও বেশি। আমি প্রায় প্রতিদিনই পরিবারের ছোটদের জন্য নিয়ে যাই।
দিনদিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে পাহাড়ি এই পিঠার। সুখ্যাতি লাভ করেছে রাঙামাটির বাইরেও। স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকরাও রাঙামাটি বেড়াতে এসে এই পিঠার স্বাদ নিতে ছুটে আসছেন। জুমের বিনি চালের কালো ভাঁপা পিঠা সারাদেশে পরিচিত পাবে এমটাই প্রত্যাশা ক্রেতা বিক্রতাদের।