সাগর চক্রবর্তী কমল, মাটিরাঙ্গা
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা দুর্গম মেঠোপথ অতিক্রম করে জমকালো আলোকসজ্জা গেট, রাস্তার দু’ধারে পাতানো দৃষ্টিনন্দন ফ্লাগ, কনে ও বরের স্টেজ, কোনো কিছুই যেন কমতি ছিলো না এক অসহায় দিন মজুর মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের। যেখানে বরযাত্রীসহ প্রায় দেড় শতাধিক অতিথিদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। তারপর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পর দিনমজুর কামাল মিয়ার মেয়ে কাজল আক্তারকে তার স্বামীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
বলছিলাম গুইমারা রিজিয়নের ১৫ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি মাটিরাঙ্গা সেনা জোনের তত্ত্বাবধানে পাহাড়ে এক দিনমজুর দরিপ্র পিতার মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার কথা। মেয়েটির বাবা কামাল মিয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিয়ের সকল খরচ বহন করে এক অসহায় দরিদ্র পিতার মেয়ের বিয়ে দিলেন মাটিরাঙ্গা জোন।
গত শুক্রবার দুপুরের দিকে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মাটিরাঙ্গা জোনের প্রতিনিধি মেজর জিএম হাসান শাহরিয়ার জিন্নাহ এর উপস্থিতিতে শুভ বিবাহের আনুষ্ঠানিক কার্যটি সম্পন্ন করা হয়।
কনের বাবা কামাল মিয়া নতুন পাড়ার নবচন্দ্র পাড়ার বাসিন্দা। তিনি পেশায় দিনমজুর। তার মেয়ে কাজল আক্তারের সাথে পার্শ্ববর্তী নবীনগর গ্রামের বাসিন্দা রং মিস্ত্রী জয়নাল আবেদীনের শুভ বিবহের দিন ধার্য হওয়ার পর কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা তার মেয়ের বিয়েতে সহযোগিতা চেয়ে মাটিরাঙ্গা সেনা জোনে একটি আবেদন করেন। এবং তাদের এই আবেদন প্রেক্ষিতে মাটিরাঙ্গা সেনা জোন মেয়েটির বিয়ের সম্পূর্ণ খরচ বহন করার প্রতিশ্রæতি দেন।
এই বিয়ের আয়োজনে বর-কনে পক্ষের সকলে বেশ উৎফুল্ল। অসহায় মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন সেনা জোন এমন খবরে মাটিরাঙ্গা জোনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এলাকাবাসী। একই সাথে দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্য কর্তৃক বিয়ের যাবতীয় সরঞ্জামাদি কনের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া নিয়ে এলাকায় উৎসুক জনতার ভিড় লক্ষ করা হয়।
মাটিরাঙ্গা জোনের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ জানিয়ে কনের বাবা মো: কামাল মিয়া বলেন, অর্থের অভাবে মেয়েকে কিভাবে পাত্রস্থ করবো সেটা ভেবে পাচ্ছিলাম না। আবেদনের প্রেক্ষিতে মাটিরাঙ্গা সেনা জোন আমার মেয়ের বিয়ের পুরো দায়িত্ব বহন করেন। কখনও ভাবিনি আমার মেয়ের এত বড় আয়োজনে বিয়ে হবে।
মাটিরাঙ্গা জোন কর্তৃক এমন মহতি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী বলেন, সমাজের বিত্তবানরা যদি এরকম অসহায় দরিদ্র পরিবারের মেয়ের বিয়ে দিতে সহযোগিতার হাত বাড়ান তাহলে অনেক অসহায় বাবার তার মেয়ের বিয়ের জন্য অতটা চিন্তা করতে হতো না।
মাটিরাঙ্গা জোনের প্রতিনিধি মেজর জিএম হাসান শাহরিয়ার জিন্নাহ বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুরু থেকেই অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে আছে। তারই ধারাবাহিকতায় এক দরিদ্র পিতার মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করে মাটিরাঙ্গা সেনা জোন। আগামীতেও এসব মানবিক কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, সমাজের বিত্তবানরা তাদের আশেপাশের গরীব অসহায় দুস্থ্ মানুষদের পাশে দাঁড়ালে হাজারো মানুষ ভালভাবে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে।
অনুষ্ঠানে মাটিরাঙ্গা জোনের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো: গোলাম মোস্তফা, মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো: শামছুল হক, স্থানীয় সাংবাদিক, সমাজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।