জাকির হোসেন, দীঘিনালা
পাহাড়ে জুমের ধান কাটা শুরু হয়েছে। জুমচাষকৃত এলাকার পাহাড় যেন এখন পাকা ধানে আনেকটা রঙিন। ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। পাকা ধান ঘরে উঠায় চাষীদের মুখে হাসি ফুটলেও এবার জুমে সাথী ফসল নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন চাষীরা।
সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে বন্যায় পাহাড়ের তিন জেলাতেও আমন, আউশ ধান নষ্ট হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ের চূড়ায় জুম চাষ হওয়ায় জুমের ধান নষ্ট হয়নি। তাই জুমের ধান-ই এবার সোনালী ফসল। তবে, জুমে ধান টিকে থাকলেও প্রয়োজনের সময় অনাবৃষ্টি আর যখন বৃষ্টি হয়েছে তখন অতিবৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়েছে জুমের সাথী ফসল।
পাহাড়ের দুর্গম এলাকার বাসিন্দাদের অধিকাংশ পরিবারের জীবিকা নির্ভর করে জুমচাষের ওপর। নিজস্ব আবাদি জমি না থাকায় তারা জুমনির্ভর। জুমে ধানের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে পরিবারের প্রয়োজনীয় খাদ্যের আনেক কিছুই ফলানো হয়। আদা, হলুদ, মরিচ, শসা জাতীয় মারফা, ভূট্টা, চিনাল, কুমড়া, মিষ্টি কুমড়াসহ আনেক শাকসব্জি ফলানো হয় জুমে।
সাজেকের উদয়পুর এলাকার বাসিন্দা পূর্ণ জীবন চাকমা (৩৬)। তিনি জুমচাষ করেছেন প্রায় পাঁচ একর জমিতে। একই এলাকার সাধন চাকমা (৪৫) চাষ করেছেন চার একর এবং গঙ্গাধন চাকমা (৫০) চাষ করেছেন চার একর জমিতে। তারা সবাই জানিয়েছেন এবছর যে পরিমাণে ধান ফলেছে তাতে প্রতি একরে ১০-১২ মণ করে ধান পাবেন তারা। তাঁদের হিসেবে উৎপাদিত ধান দিয়ে নিজেদের পরিবারের ৬-৮ মাসের খাদ্য চাহিদা মিটবে। নিজেদের কোনও আবাদি জমি নেই। অর্থনৈতিক সংকটে কোনও ব্যবসাও করতে পারেন না। বাধ্য হয়েই জুমচাষের ওপর নির্ভর প্রত্যেকের পুরো পরিবার। বছরের বাকি সময়ের খাদ্য পূরণ এবং সংসারের অন্যান্য খরচের চাহিদা মিটাতে জুমচাষ পরবর্তী সময়টাতে তাদের গাছ আর বাঁশ কাটার কাজে শ্রম বিক্রি করতে হয়।
পূর্ণজীবন এবং গঙ্গাধন আরো জানান, এবছর প্রয়োজনের সময় বৃষ্টি হয়নি। আর যখন বৃষ্টি হয়েছে তখন অতিবৃষ্টি। এ কারণে এবছর জুমের সাথী ফসল নষ্ট হয়েছে। যার ফলে সাথী ফসল বিক্রি করে যে আয় হতো সেটা থেকেও এবছর জুমচাষীরা বঞ্চিত। এজন্য এবছর জুমচাষীদের অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে।