জয়নাল আবেদিন, কাউখালী ॥
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে গোপন ভোটের মাধ্যমে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার ১১ মাস পর, ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কাউখালী উপজেলা বিএনপি’র কমিটি অনুমোদন দিয়েছে রাঙামাটি জেলা বিএনপি। মঙ্গলবার রাঙামাটি জেলা বিএনপি’র সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মামুনুর রশীদ মামুন এ অনুমোদন দেন। অনুমোদনের পর কমিটির তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে শুরু হয় নানান আলোচনা-সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে সিনিয়র অনেক নেতাকে।
১০১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে স্থান পাওয়া আবুল কালাম আজাদ তাঁর ফেসুবুক ওয়ালে লিখেন ‘রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে বলছি, আপনাদের উপস্থিতিতে কাউখালী বিএনপির কোন কর্মসূচী করতে দেওয়া হবেনা। পারলে করে দেখাইয়েন। আপনরাই আওয়ামীলীগের এজেন্ডা বাস্তাবায়নে লিপ্ত। —ওপেন চ্যালেঞ্জ।’
এর আগে নতুন কমিটি অনুমোদনের পর তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেন- ‘গুডবাই রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির প্রতিহিংসার রাজনীতি। বিদায় কাউখালী বিএনপি। যথাসময়ে জেলা বিএনপির ১ এবং ২ তৈরি থাইকেন উপযুক্ত জবাবের জন্য।’
তার পর একের পর এক স্ট্যাটাস দিতে থাকেন এই নেতা। সেখানে সহমত জানিয়ে কমেন্ট করতে দেখা গেছে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সাবেক সভাপতি সহ অনেক নেতাকর্মীকে।
এই নেতার ফেসবুক স্ট্যাটাস ও স্ট্যাটাসে কমেন্ট করা নেতাকর্মীদের মন্তব্যগুলো নিয়ে উপজেলায় বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আবুল কালাম আজাদ তাঁর আরেকটি স্ট্যাটাস হল- ‘কাউখালী উপজেলা বিএনপির তালিকা হিসাবে কমিটি অনুমোদন না দিয়ে, জেলা বিএনপির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক মনগড়া কমিটি দিয়েছেন। উক্ত কমিটি অনুমোদন বিষয়ে কাউখালী বিএনপির সভাপতি সাধারণ ও সাংগঠনিক সম্পাদক অবগত নয়। আরো মজার ব্যাপার কাউখালী উপজেলা বিএনপির অন্তর্ভূক্ত ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি রাঙ্গামাটি মিডিয়া সেল অনুমোদন হয়েছে মর্মে ফেইজবুকে প্রকাশ করেছে। অথচ যাঁরা অনুমোদন দিবে তারাই জানেনা কে অনুমোদন দিল। জেলা বিএনপির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক বিএনপির রাজনীতিকে কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছেন? এই স্ট্যাটাসে লাইক দিয়েছেন উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনেকে।’
এই স্ট্যাটাসে উপজেলাব বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলম মেম্বার লিখেন, ‘আমার মনে হয়। কাউখালী উপজেলার বিএনপিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ ষড়যন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে চলছে, উনারা কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে ? সেখানে পাল্টা মন্তব্য করেন আবুল কালাম। লিখেন রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপিকে বয়কট করে, আলাদা কর্মসূচি দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’
বর্তমান কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মন্তব্য করেন, ‘এর জবাব দিতে হবে ইনশাআল্লাহ। এই মন্তব্যে ৩ জন লাইকও দিয়েছেন। আবু জাফর লিখেন ডিম পাড়ে হাঁসে আর খেয়ে বাগডাশ। এমডি মুন্না লিখনে যতো সব নোংরামি সুদ কাউখঅলী উপজেলার নিয়ে। মো সুমন জোর দাবী জানান যারা এই জালিয়াতি কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার।’
এছাড়া ফেসবুকে আবুল কালাম আজাদ লিখেন-‘একটি সুশৃঙ্খল রাজনীতির প্লাটফর্ম তৈরি হযেছিল কাউখালী উপজেলায়, জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক আজ সাজানো বাগানকে ধ্বংস করে দিল। এর জবাব দিবোই ইনশাল্লাহ।’ এই স্ট্যাটাসে সভাপতি জাহাঙ্গীর মন্তব্য করেছেন রাইট লিখে।
এরপর তিনি আরো লিখেন- ‘রাঙামাটির অধিনস্ত সকল উপজেলা বিএনপি, গুটিকয়েক ব্যক্তির বাপ দাদার সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে।’ এই স্ট্যাটাসে রাঙামাটি জেলা ছাত্রদলের সহ সভাপতি নজরুল হুদা লিখেন ‘বর্তমান জেলা বিএনপি তো আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী পরিবার খুব পছন্দ।’ এই মন্তব্যে নিচে নজরুল হুদার উদ্দেশ্যে রাঙামাটি পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির সহ সভাপতি সাইফুল ইসলাম ভূট্টো লিখেন ‘শুধু পছন্দ না দলের নির্বাচনে অনেকেইতো টাকাও নিয়েছে (প্রমাণ চাইলেই আমি দিতে প্রস্তুত) যা কেন্দ্র জেনেও জানেনা….দীপংকর-সন্তু দুই গ্রুপ, দীপংকর-নিখীল দুই গ্রুপ, মুছা-আকবর দুই গ্রুপ, জেএসএস-ইউপিডিএফ দুই গ্রুপ বাট সাইফুল ইসলাম ভূট্টোকে ঠেকাতে সবাই এক গ্রুপ……….শাবাস। আর আমি ভূট্টো আওয়ামী লীগের কি ক্ষতি করলাম আল্লাহ তায়ালা জানেন…..!!!!!!!’
এছাড়া উপজেলার এই নেতা আরো লিখেন- ‘রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে বলছি, আপনাদের উপস্থিতিতে কাউখালী বিএনপির কোন কর্মসূচী করতে দেওয়া হবেনা। পারলে করে দেখাইয়েন। আপনরাই আওয়ামীলীগের এজেন্ডা বাস্তাবায়নে লিপ্ত। —ওপেন চ্যালেঞ্জ।’
এরপরও আরও একাধিক স্ট্যাটাস দেন এই নেতা। এছাড়াও প্রিয় নেতাদের নেতাদের কমিটিতে স্থান না হওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অনেকে।
এবিষয়ে কথা হয় উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর সাথে। সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব জানান- উপজেলা বিএনপি’র কমিটি অনুমোদন দিবে জেলায়। জেলার কাজ জেলা করেছে। আমরা যেহেতু নির্বাচিত, আরেকটা পক্ষ আছে, ব্যালেন্স ঠিক রাখার জন্য উনারা অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিএনপি’র ভালোর জন্য। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন,সংগ্রাম ঐক্যবদ্ধ বিএনপি রাখার জন্য যেটা ভালো মনে হয় সেই সিদ্ধান্ত নিছে উনারা। একটা কমিটি হলে অনেকের প্রত্যাশা থাকতে পারে। অনেকে কমিটিতে আসেনাই তারা হয়তো অনেক কথা বলতে পারে। এখন কমিটি যেটা হয়েছে এটা চুড়ান্ত এর বাইরে আমাদেরতো কথা বলার কোন সুযোগ নাই।
১০১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ৯৯% সঠিক আছে মন্তব্য করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেখেন বিএনপি আসলে বিশাল দল। যেখানে নেতা কর্মীদের অভাব নাই। প্রত্যাশা অনুযায়ী পদ-পদবি না পাওয়ায় অনেকে এই কমিটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। ঠিক হয়ে যাবে, নতুন কমিটি দিলে দুইএকদিন এরকম হয়। উপজেলা বিএনপি থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছিলো, জেলা কমিটি কিছুটা রদ বদল করেছে।
সার্বিক বিষয়ে কথা রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু’র সাথে তিনি জানান- কমিটি করেছে উপজেলা কমিটি। ওদের কমিটি ওরাই প্রস্তাব করেছে, ওরাই নিয়েছে। এখানে আমাদের কাজ হচ্ছে উপজেলা কমিটিকে সহযোগিতা করা। সে ক্ষেত্রে আমরা আমাদের কাজগুলো সঠিকভাবে করেছি। বিএনপিতো বড় দল, এক্ষেত্রে অনেকের আগ্রহ বেশি থাকে, বড় দলের কারণে অনেককে কমিটিতে রাখা সম্ভবও হয় না। মূলত বিষয় এইটা। এখানে একতরফা বা জেলা বিএনপি’র খুব বেশি হস্তক্ষেপ থাকে না। আমরা সবাই মিলে দলটাকে গুছাতে চাচ্ছি। তাই বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে দলের স্বার্থে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।