মিশু মল্লিক
টানা বৃষ্টিপাত ও উজান হতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ খ্যাত ঝুলন্ত সেতু ডুবে গেছে। এতে হতাশ হচ্ছেন সেখানে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা। সেতুটি তৈরি করার সময় হ্রদের রুল কার্ভ মেনে তৈরি না করায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এটি ডুবে যায় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হ্রদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডুবে গেছে সেতুর পাটাতন। অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে পাটাতনের কাঠ। পানিতে ডুবতে থাকা ভাঙা পাটাতন দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন সেতুর অপর প্রান্তে বসবাস করা স্থানীয়রা। অনেকে সেতুর দড়ি ধরে পার হচ্ছেন।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আরমান হোসেন বলেন, গতকাল রাতে রওনা করে আজ সকালে রাঙামাটি এসে পৌঁছেছি। রাঙামাটি এসেই প্রথমে ঝুলন্ত সেতু দেখতে এলাম। কিন্তু এসে দেখছি সেতু পানিতে তলিয়ে গেছে। খুব হতাশ হলাম।
পর্যটক সুধির কান্তি বলেন, আমরা পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছি। ঝুলন্ত ব্রিজে এসে আমরা সত্যিই হতাশ হয়েছি। কারণ ব্রিজে পানি উঠে গেছে। আর দু-একদিন পর যারা বেড়াতে আসবে তাদের হতাশ হয়ে ঝুলন্ত ব্রিজ ভ্রমণ না করেই ফিরে যেতে হবে। অথচ এই ব্রিজটিই রাঙামাটিকে রিপ্রেজেন্ট করে।
পানি উঠে সেতু ডুবে গিয়ে পর্যটক সমাগম বন্ধ হয়ে গেলে পর্যটকদের হতাশার পাশাপাশি ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঝুলন্ত ব্রিজ সংশ্লিষ্ট পর্যটকনির্ভর ব্যবসায়ীরা।
ট্যুরিস্ট বোট চালক আবদুল মান্নান বলেন, ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন যাবত রাঙামাটিতে পর্যটক খরা চলছে। তার ওপর আজ(শুক্রবার) ব্রিজও ডুবে গেল। ব্রিজ ডুবে যাওয়ায় এখন আর পর্যটক আসবে না। আমরা খুব কষ্টে পড়ে গেলাম।
পর্যটন নৌ-ঘাটের ম্যানেজার ফখরুল ইসলাম বলেন, এই বর্ষায় রাঙামাটিতে আশানুরুপ পর্যটক সমাগম হয়নি। তার ওপর ব্রিজে পানি উঠে ডুবে গেছে। আপাতত ব্রিজে পর্যটক ওঠা নিষিদ্ধ করেছে পর্যটন কর্পোরেশন। আমরা ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়লাম।
ঝুলন্ত ব্রিজ সংলগ্ন পার্কে স্থানীয় পাহাড়ি পণ্য বিক্রেতা তুষিত চাকমা বলেন, প্রতি বছর বর্ষার শেষের দিকে ব্রিজটি ডুবে যায়। আমাদের ব্যবসাগুলো ট্যুরিস্টদের ওপর নির্ভরশীল। এমনিতে এই বছর আমরা তেমন ব্যবসা করতে পারিনি। এখন যদি আবার পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যায় তবে তা আমাদের জন্য খুবই ভয়ানক হবে।
ব্রিজ ডুবে যাওয়ার খবরে ইতোমধ্যেই কমতে শুরু করেছে পর্যটক সমাগম। যারা আসছেন তারাও জানাচ্ছেন তাদের হতাশার কথা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন রাঙামাটির ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, ব্রিজে পানি উঠাতে আমরা আপাতত পর্যটক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি। বৃষ্টিপাত কমে আসলে আশা করছি পানি কমে যাবে। তখন আমরা আবার পর্যটকদের জন্য ব্রিজ উন্মুক্ত করে দেব। প্রতিবছর ব্রিজ ডুবে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, আসলে নাবাত্য সংকটের কারণে হ্রদের গভীরতা কমে গিয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়লেই সেতু ডুবে যাচ্ছে। পর্যটন ঝুলন্ত সেতু নিয়ে আমরা নতুন কিছু ভাবছি।