শুভ্র মিশু
পাহাড় আর কাপ্তাই হ্রদে আবৃত রাঙামাটি জেলা। উঁচু পাহাড়ে ধান চাষ কষ্টসাধ্য যার কারণে অধিকাংশ পাহাড় সেগুন বা নানা প্রজাতির পাহাড়ি গাছে ভরপুর। সেগুনে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর এককালিন মোটা অংকের টাকা আসলেও পাহাড়ি নানা প্রজাতির গাছে তেমন আয় আসে না বার্ষিক বা এককালিন। যার কারণে পাহাড়ে বসবাস করা অনেক তরুণই শহরমুখি হলেও ব্যতিক্রম চাষাবাদে, এলাকার তরুণদের জীবনে আশার আলো দেখাচ্ছেন সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা।
রাঙামাটির মগবান ইউনিয়নের সোনারাম কার্বারি পাড়ার কলা চাষী সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ১০একর পাহাড়ি জমিতে কলাসহ নানা মৌসুমি ফলের গাছ লাগিয়ে সচ্ছল জীবন যাপন করছেন। এইবছর শুধু তার কলা বাগান থেকে ৫০ হাজার টাকার কলা বিক্রয় করেছেন আরো এক লাখ টাকার কলা বিক্রয় করার প্রত্যাশা করেছেন তিনি। তেমনিভাবে কলা, কুল, আম, কাঠাঁল, লিচু থেকে তার বার্ষিক আয় প্রায় ১২লক্ষ টাকা। তার কৃষিজ খামারে অতন্ত ১২জন শ্রমিক মৌসুম ভেদে কাজ করে, এতে এলাকার বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। তার সফলতা দেখে কৃষিজ খামার করতে উৎসাহিত হচ্ছে এলাকার বেকার তরুণরা।
সুশান্তের বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকার আমছড়িপাড়া গ্রামের মঙ্গল মনি চাকমা, জ্ঞান চাকমা, সোনা মনি চাকমা, দীলিপ চাকমা, দেপ্পোছড়ি দুয়ার এলাকার মঙ্গল ধন চাকমাসহ অনেকে কলা বাগান করেছেন।
সুশান্তের বাগানের শ্রমিক সুকুমার চাকমা ও সজল চাকমা জানান, আমরা ১২ জন শ্রমিক সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা বাগানে কাজ করছি। আমরা এক প্রকার বেকার ছিলাম। কৃষি উদ্যোক্তা সুশান্ত দাদা বাগানে কাজ করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করছি। তার বাগানে কাজ করে আমাদের পরিবার সংসার চলছে। সুশান্ত দাদা একজন সফল পরিশ্রমী কৃষি উদ্যোক্তা। পাহাড়ের উদ্যোক্তাদের রোল মডেল। তারঁ বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকে এখন কলা বাগান করেছেন। তার বাগানে কাজ করার পাশাপাশি তার বাগান দেখে আমরা উদ্বুদ্ধ হয়ে কলা বাগান করেছি। এখানের পারিশ্রমিকের পাশাপাশি সামনে আমরা কলা বিক্রি করে অনেক টাকা পাবো।
উদ্যোক্ত সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা জানান, নিজে কিছু করার চিন্তা থেকেই আমার ফলজ চাষে আসা। প্রায় ১০ একর জায়গা নিয়ে আমি ফলবাগান করেছি। গত বছর আমি পাঁচশত কলার চারা লাগিয়েছি, এই বছর সেখান থেকে ইতিমধ্যে পঞ্চাশ হাজার টাকার কলা বিক্রয় করেছি। আরো একলাখ টাকার কলা বিক্রয় করতে পারবো বলে আশা করছি। এছাড়াও প্রতিবছর আমি বাগান থেকে আম লিচু কুলসহ বিভিন্ন মৌসুমী ১২লাখ টাকার ফল বিক্রয় করি। বাগানে শ্রমিকদের মজুরী খরচ, কীটনাশক খরচ, গোবর সার, আগাছা পরিষ্কার, ফল পরিবহন খরচে ফল বিক্রির অর্ধেক টাকা চলে যায়। বাকি অর্ধেক টাকা দিয়ে আমার সংসার ভালো ভাবে চলছে। গ্রীষ্মের গরমে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যায়। তখন এখানে পানির অভাব থাকে। অনেক চারাগাছ পানির অভাবে মরে যায়। এতে ফলজ বাগানে উদ্বুদ্ধ হলেও তারা বাগানে সাহস করতে পারছে না। যদি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো যদি গ্রীষ্মের সময়ে চারাগাছে পানি দেওয়ার জন্য এখানে ডিপ টিউপওয়েল বা সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে, এই এলাকার লোকজন উপকারভোগী হতো এবং আমরা আরো বেশি ফলজবাগানে উৎসাহিত হতাম।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে জেলা এই বছর ১১হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে, যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২লক্ষ ৪২হাজার ৮২৩মেট্রিকটন। সবচেয়ে বেশি কলার চাষ নানিয়াচর উপজেলায় সেখান ১হাজার৩২০হেক্টর জমিতে কলার চাষ করা হচ্ছে , যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার ৪০০ মেট্রিকটন।
মগবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পুষ্প রঞ্জন চাকমান জানান, আমার ইউনিয়নে পশ্চিম অংশে ডিপটিউপওয়েল হয় না যার কারণে শুষ্ক মৌসুমে কৃষি উদ্যোক্তাদের খামারে ব্যবহার ও পানীয় জলের ব্যবহারে রিং ওয়েল করার জন্য রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে আবেদন করেছি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছি যাতে এখানে সেচ প্রকল্প নেয়া হয়। তারা যদি সদয় দৃষ্টিদেন তাহলে আমাদের এই এলাকার জনসাধারণের পাশাপাশি কৃষি উদ্যোক্তারাও উপকৃত হবেন। সুশান্তের কৃষি উদ্যোগ দেখে আমরা খুশি। তাকে দেখে এলাকার তরুণরা কৃষিতে আগ্রহি হচ্ছে।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আপ্রু মারমা জানান, আমাদের এখানে কলার বাম্পার ফলন হচ্ছে। এখানে সারাবছরই কলা ফলন হয় কম বেশি। এই বছর আমাদের উদপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২লক্ষ ৪২হাজার ৮২৩মেট্রিকটন। সবচেয়ে বেশি কলার চাষ হচ্ছে নানিয়াচরে। এখানকার মাটি কলা চাষে উপযোগী হওয়ায় কৃষি উদ্যোক্তারা কলা চাষে আগ্রহী হচ্ছে।