নিজস্ব প্রতিবেদক, লামা ॥
২০১৫ সালে বাংলাদেশে তামাক চাষ হয় ১ লক্ষ ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে, বর্তমানে তা বেড়ে ২ লক্ষ ৫০ হাজার হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। আর এ তামাক চাষ বেড়ে যাওয়ায় আগের তুলনায় খাদ্যশষ্য উৎপাদন কমেছে ৯০ শতাংশ। তামাক চাষের ফলে পরিবেশ হারাচ্ছে তার নিজস্ব ভারসাম্য, কমে যাচ্ছে মাটির গুণাগুণ। উজার হয়ে গেছে বনাঞ্চল, এর প্রভাবে প্রাণীকুল হারাচ্ছে তাদের আবাসস্থল ও খাদ্য নিরাপত্তা। এতে নানা রকম শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন তামাক চাষীরা। এদিক বিবেচনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ রক্ষায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিষবৃক্ষ এ তামাক চাষ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা বরাবরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে স্মারক লিপি দিয়েছেন- বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ছাত্র জনতা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হাতে এ স্মারকলিপি তুলে দেন- ছাত্র জনতা পরিষদের নেতা মো. আবু কাউছার, মো. নাজমুল হাসান, মো. জামাল হোসেন, মো. নাজিম উদ্দিন, হাসান মাহমুদ, মাসুদ পারভেজ ও আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, সবুজ গুপ্ত ঘাতক নামে পরিচিত তামাক কোন খাদ্য নয়। এমনকি সচরাচর অর্থে কৃষকের ফসলও নয়। কৃষক তার নিজের প্রয়োজনে এই তামাক উৎপাদন করে না কিন্তু কৃষি জমিতেই চলছে তামাকের আগ্রাসন। বেসরকারী এক তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে বান্দরবান জেলার ৭টি উপজেলায় তামাক চাষ হয়েছে ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে। অথচ ২০১৫ সালে বান্দরবান ও পাশের কক্সবাজার জেলায় এ তামাক চাষ হয়েছিল মাত্র ১২ হাজার হেক্টর জমিতে। তায় পরিবেশের সুরক্ষা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে তামাক ও তামাকের বাই প্রোডাক্ট উৎপাদন বন্ধ করে বিকল্প চাষ পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। তারা আরও উল্লেখ বলেন, একজন কৃষকের পরিবেশ বিনষ্টকারী তামাক চাষ করে যে পরিমান লাভবান হয়, তার চেয়ে অধিক পরিমান লাভবান হওয়া যায় এমন কৃষিপন্য বর্তমান আছে, যা একটি উদ্যোগ গ্রহনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশ ও প্রতিবেশকে রক্ষা করা সম্ভব।
এর আগে ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট সাংবাদিক আলা উদ্দিন শাহারিয়ারের দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে বান্দরবান জজ আদালত কর্তৃক জারি করা এক আদেশে বান্দরবান জেলায় ১ হাজার হেক্টরের বেশি নয় জমিতে তামাক চাষ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তৎসঙ্গে নদীর তীর ও পাহাড়ের কিনারায় তামাক চাষ এবং বন উজাড় করে তামাকের চুল্লি ব্যবহারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু আদালতের এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তামাক চাষ হচ্ছে ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে। নদীর তীর, পাহাড়ের কিনারায় ও তামাক চুল্লির জন্য ব্যবহার হচ্ছে বনের কাঠ। এমনকি বনবিভাগ ও সরকারি প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়ে থাকে।
তামাক কোম্পানি কর্তৃক অগ্রিম লোন ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য উদ্দীপনার কারণে ক্ষতি আছে জেনেও চাষীরা তামাক চাষ করতে উৎসাহী হচ্ছে। এখনি যদি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা না হয় তাহলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে বলেও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন ছাত্র জনতা পরিষদ। তবে তামাক লামা পৌরসভা এলাকার ছাগল খাইয়া গ্রামের তামাক চাষী শাহ জাহান, আবুল কালাম ও আনোয়ার হোসেন জানায়, পরিবেশ ও নিজেদের ক্ষতির কথা জানার পারও বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়ে তামাক চাষ করতে হচ্ছে। সরকার বিকল্প চাষের উদ্যোগ নিলে তামাক চাষ ছেড়ে দিবেন তারা।
লামা ছাত্র জনতা পরিষদ নেতা মো. আবু কাউছার, নাজিম উদ্দিন ও আনোয়ার হোসেন বলেন, জুলাইয়ের ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় গড়া সামাজিক সংগঠন ‘লামা ছাত্র জনতা পরিষদ’। এ সংগঠন’র লক্ষ্য উদ্দেশ্যে হচ্ছে, দূনীতি প্রতিরোধ, সামাজিক অবক্ষয় রোধ, শিক্ষা-সাংস্কৃতির উন্নয়ন, মানব সম্পদ গঠন ও পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা। এ ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ পুরো দেশে বিষ বৃক্ষ তামাক চাষ বন্ধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা বরাবরে এ স্মারক লিপি প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ছাত্র জনতা পরিষদের স্মারক লিপিটি মাননীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা বরাবরে প্রেরণ করা হবে বলে জানান, লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রুপায়ন দেব। তিনি বলেন, ছাত্র জনতা পরিষদের স্মারকলিপিতে উল্লেখিত দাবী সমূহের যুক্তিকতা রয়েছে।