অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই
সারাদেশে চলমান তীব্র তাপদাহের বিরূপ প্রভাব পড়েছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম কাপ্তাই হ্রদে। দীর্ঘদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ার ফলে কাপ্তাই হ্রদের পানি দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে করে হ্রদের ওপর নির্ভরশীল মানুষের জনভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে। সহসায় ভারী বৃষ্টিপাত না হলে কিংবা এই তীব্র তাপদাহ অব্যাহত থাকলে কাপ্তাই হ্রদের পানি আরো কমে যাবে। এতে করে দেখা দিবে নানা সমস্যা। এছাড়া কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ার ফলে একদিকে যেমন জনভোগান্তি বাড়ছে অন্যদিকে কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল কাপ্তাই পানি বিদুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে ৪টি ইউনিট পানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। কেবলমাত্র একটি ইউনিট দিয়ে দৈনিক মাত্র ২৫ থেকে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া রুলকার্ভ অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় কাপ্তাই হ্রদে পানি রয়েছে ৭৬.৩৮ এমএসএল (মিনস সি লেভেল)। অথচ বছরের এই সময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৮৪.২০ ফুট এমএসএল। অর্থাৎ ৭.৮২ ফুট এমএসএল পানি কম রয়েছে কাপ্তাই হ্রদে।
সম্প্রতি কাপ্তাই উপজেলার ব্যস্ততম কাপ্তাই জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল বোট চালকদের দুর্দিন চলছে। বিশেষ করে অধিকাংশ বোট চালক অলস সময় পার করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়ার ফলে যাতায়াত ব্যবস্থা অনেকটা থমকে গেছে। দুর দুরান্ত থেকে খুব প্রয়োজন ব্যতিত মানুষজন আসা যাওয়া করছে না। হ্রদে পানি কমে যাওয়া বোটের তেল খরচও বেড়ে গেছে।
স্থানীয় বোট চালক মো. রহমান আলী, সুবল দাশ সহ কয়েকজন জানান, পানি কমে গেলে আমাদের দুঃখ বেড়ে যায়। বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদের বেশ কিছু অংশে চর জেগে ওঠার ফলে বোট আটকে যায়। এতে করে পানিতে নেমে অনেকসময় বোট ঠেলা দিতে হয়। সেই সাথে আগের ছেয়ে বোটের তেল খরচ বেড়েছে। এতে করে আমাদের আয় রোজগার কমে গেছে। সামনে ভারী বৃষ্টিপাত না হলে, হ্রদে পানি না বাড়লে দিন দিন দুর্ভোগ বাড়বে। তখন হয়তো এ পেশা আমাদের ছেড়ে দিতে হবে।
এদিকে শনিবার কাপ্তাই জেটিঘাটে বসে বাজার। যেখানে কাপ্তাই হ্রদের মাধ্যমে বোট নিয়ে বিলাইছড়ি, ফারুয়া, হরিনছড়া সহ দুর্গম এলাকা হতে উৎপাদিত বিভিন্ন ফলমুল, সবজি নিয়ে আসেন পাইকার বিক্রেতারা। তবে সম্প্রতি যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি হওয়ার ফলে অনেকেই ওইসব দুর্গম এলাকা থেকে বাজারে আসছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওইসব এলাকার উৎপাদিত সবজি, ফলমুল ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যাতায়াত খরচ বেড়ে যাওয়া সাথে দুর্ভোগ বেড়ে যাওয়াতে আগ্রহ হারাচ্ছেন পাইকার বিক্রেতারা। এতে করে চাহিদার তুলনায় জিনিসপত্র না আসার ফলে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এবিষয়ে বিলাইছড়ির ফারুয়ার বাসিন্দা কলা ব্যবসায়ী যদুরাম তঞ্চঙ্গ্যা জানান, আগে প্রতিসপ্তাহে বাজারে বোট যোগে কলা নিয়ে আসতাম। তবে এখন মাসে একবার আসি। কারণ জানতে চাইলে বলেন, দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। কলা বিক্রয় করে লাভবান হতে পারছিনা। এছাড়া হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় বোট বিভিন্ন স্থানে আটকে যায়। তাই বোট চালকরাও দুর্গম এলাকায় যেতে চান না।
কাপ্তাই জেটিঘাটের ব্যবসায়ী মো. সাইফুল ইসলাম জানান, কাপ্তাই হ্রদের পানি কমার প্রভাব জেটিঘাট বাজারেও পড়েছে। এখন বিক্রেতার তুলনায় ক্রেতা কম হচ্ছে। কারণ হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমায় দুর দুরান্ত থেকে বিক্রেতারা আসতে পারছেনা। এতে বাজারে প্রভাব পড়ছে।
এদিকে কাপ্তাই জেটিঘাটের দায়িত্বরত কর্মকর্তা শীতল সরকার জানান, বছরের এই সময় আমাদের হ্রদে পানি কমে ঠিক। কিন্তু এবছর অত্যাধিক তাপদাহে পানির পরিমাণ অনেক বেশি কমে গেছে। যা আমাদের মাঝে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে তীব্রতাপদাহে পর্যটক ও কম আসছে তেমনি দৈনন্দিন বোটের মাধ্যমে যাতায়াত কমে গেছে। তাই দ্রুত সময়ে ভারি বৃষ্টিপাত না হলে এই দুর্ভোগ আরো বাড়ার আশংকা করছে তিনি। এছাড়া তিনি জানান, কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ যদি এভাবে কমে তাহলে বিভিন্ন উপজেলার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।