অনুপম মারমা, থানচি
বান্দরবানে থানচি উপজেলা সদরে দুই গ্রামে শতাধিক পরিবারের সারা বছর শঙ্খ নদীর দূষিত ও ঘোলা পানিই এক মাত্র ভরসা। বিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য স্বাধীনতা ৫২ বছরের মধ্যে কোন প্রকার রিংওয়েল, টিউবওয়েল বা জিএসএফ পাইপ স্থাপন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন দুই পাড়া বাসিন্দাদের।
থানচি উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড ও বলিপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে প্রায় শত বছরের পুরোনো দুইটি গ্রামে ১০০ পরিবারের মাঝে কোন রিংওয়েল বা গভীর নলকুপ স্থাপন না করার ফলে বিশুদ্ধ বা খাওয়ার পানির সকল ঋতুতে তীব্র সংকট চলছে। কোনো উপায় না থাকায় এ সব গ্রামের মানুষের শঙ্খ নদীর দূষিত ও মগকক্রী ঝিরির ঘোলা পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে ডায়রিয়া ম্যালেরিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। থানচি বান্দরবান নতুন সড়ক নির্মাণের ব্যবহারের জন্য বোল্ডার পাথর উক্তোলন, গাছ কাটা, বালির উত্তোলনসহ মানুষের প্রয়োজনীয় কাজের ব্যবহারের কারণে এমনিতে ঝিরি ও নদীর পানির প্রবাহ কমিয়ে আসছে। এর পাশাপাশি শুল্ক মৌসুমে ছোট বড় সব ঝিরিগুলো শুকিয়ে যায়। এই পরিস্থিতির মোকাবেলায় দুই গ্রামের বাসিন্দাদের দ্রুত জলাধার নির্মাণ ও গভীর নলকুপ (ডিপওয়েল) বসিয়ে সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, বান্দরবানে থানচি উপজেলা বলিপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড নাইন্দারী পাড়া থানচি সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের নাইন্দারী পাড়া দুইটি গ্রামে বিশুদ্ধ বা খাওয়ার পানির সংকট চলছে। কোনো উপায় না থাকায় গ্রামের মানুষ শঙ্খ নদীর দূষিত ও মগকক্রী ঝিরির ঘোলা পানি পান করছে। এতে ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। গাছ কাটা, বালির পাথর অবাধে উত্তোলনের কারণে এমনিতেই ঝিরিতে পানির প্রবাহ কমেছে। এর পাশাপাশি এই শুষ্ক মৌসুমে দীর্ঘ অনাবৃষ্টির কারণে ছোট ঝিরিগুলো শুকিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় গ্রামবাসী দ্রুত জলাধার নির্মাণ ও রিংওয়েল বা গভীর নলক‚প বসিয়ে সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন নাইন্দারী পাড়ার প্রধান চাইশৈপ্রু কারবারী।
চাইশৈপ্রæ কারবারী বলেন, বর্ষা মৌসুমে ঝিরিতে একটু পরিষ্কার পানি হলেও সারা বছর জুুড়ে ফুটিয়ে খেতে হয়। অনেক বছর আগে একটি টিউবওয়েল রয়েছে তাও নষ্ট। গাছ কাটা, পাথর বালি অবধে উক্তোলনের ঝিরিতে পানির উৎস কমেছে একসময় গ্রামের আশপাশে ব্যাপক জঙ্গল ছিল। এখন তা ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। গাছপালা ও পাহাড়ের প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা পাথর কমিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝিরিতে পানির প্রবাহ অনেক কমে গেছে। বিকল্প হিসেবে নলকূপ বসানোর চেষ্টা করা হয়নি। ফলে এলাকাবাসী নোংরা পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে।
নাইন্দারী পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উনুথোয়াই মারমা বলেন, কয়েকবছর আগেই স্কুলের জন্য একটি গভীর নলকুপ স্থাপন করেছিল সেটি ও অল্প অল্প পানি পাওয়া যায়। দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। পাড়াবাসীদের দেয়া সম্ভব হয় না।
থানচি সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে মেম্বার মেখয় মারমা বলেন, আমাদের গ্রামের আশপাশের ছড়া-ঝিরিগুলো শুকিয়ে যাওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে শঙ্খ নদী ও বর্ষাকালে মগকঝিরির ময়লা পানি খেতে হচ্ছে।
থানচি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেদোয়ান আহম্মেদ বলেন, বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় গভীর নলকূপ ও রিং বসানো হয়েছে। কিছু এলাকায় বাঁধ দিয়ে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে দেওয়া হচ্ছে।