ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই
মারমা ভাষার গান-
‘লিলে থাঃলোঃ থাঃলোঃ
মোহ লেঃ ক্যালোঃ ক্যাল্যাঃ
আগাঃ মোহ মঃমই
আগাঃ মোহ লালাং’
অর্থাৎ-‘আকাশের মেঘের ডাক আর বিজলী চমকালে মনে হয় বৃষ্টি হবে, আবার মনে হয় বাতাস বইছে, সে আনন্দে ময়ূর পাখনা মেলে নাচছে। সে ময়ূরের নাচ আর আনন্দটা দেখে খুশিতে ছোট ছোট মেয়েরা নেচে উঠে।’ এই চরণগুলো মারমা জনগোষ্ঠীর ময়ূর নৃত্যের গানের বঙ্গানুবাদ।
মুলত মেঘের গর্জন বা মেঘলা আকাশে ময়ূররা পেখম খুলে নাচে, তাই এই দৃষ্টিতে নাচটি ময়ূরের নৃত্য বলা হয়।
মারমা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন উৎসব পার্বণ ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এই ময়ূর নৃত্য পরিবেশন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সবুজ পোশাকের সাথে পেছনে ময়ুরের পেখম পড়ে ৪ কি ৫ জনের একদল নৃত্য শিল্পী সমবেতভাবে এই নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের অনাবিল আনন্দ দেন।
তেমনি একটি মারমা নৃত্য দল রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম বড় পাড়ার চান্দাউই মারমা এবং তাঁর দল। তাদের ৪ জনের দলের এই ময়ূর নৃত্য পরিবেশন ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মারমা জনগোষ্ঠীর উৎসব ছাড়াও কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন সরকার-বেসরকারি অনুষ্ঠানে তাদের ময়ূর নৃত্য পরিবেশন ইতিমধ্যে দর্শকের প্রশংসা অর্জন করেছে।
এই দলের সদস্য সান্দাউই, মাসাইন শৈ, হ্লামেসিং এবং হ্লাহ্লাচিং বলেন, আমরা যখন বিভিন্ন উৎসবে পার্বণে এবং বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে এই ময়ূর নৃত্য পরিবেশন করি, তখন দর্শক শ্রোতা প্রচুর করতালিতে আমাদেরকে প্রশংসায় ভাসান, তখন খুব ভালো লাগে।
কাপ্তাই উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্য এবং বাংলাদেশ বেতার, রাঙামাটি কেন্দ্রের মারমা গানের শিল্পী মংচাই মারমা বলেন, মারমা জনগোষ্ঠীর অনেকগুলো জনপ্রিয় নৃত্যের মধ্যে এই ময়ূর নৃত্য ইদানীং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যখন পেছনে পেখম পড়ে একদল মারমা মেয়ে এই নাচ পরিবেশন করেন তখন তাদের দেখতে যেমন সুন্দর লাগে তেমনি সেই নাচের মুদ্রাটাও উপভোগ্য হয়।
কাপ্তাই উপজেলার মারমা জনগোষ্ঠীর নৃত্য শিল্পী মিনু মারমা বলেন, আমাদের সময় এই ময়ূর নৃত্য টি তেমন জনপ্রিয় না হলেও বর্তমান সময়ে মারমা এই ময়ূর নৃত্য পরিবেশন বেশ ভালো লাগছে।
কাপ্তাই উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম সম্পাদক নাট্য পরিচালক আনিছুর রহমান বলেন, উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি, কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চিৎমরম এলাকার এই মারমা দলের ময়ূর নৃত্যটি পরিবেশিত হয়েছে। সত্যি নাচটি যতবার উপভোগ করি ততবারই মুগ্ধ হয়েছি।