জাকির হোসেন, দীঘিনালা
জেলার দীঘিনালায় তিন মুসল্লির জন্য ৬০লাখ টাকা ব্যায়ে মসজিদ নির্মাণ করছে পার্বত্য জেলা পরিষদ। অথচ পাশেই জরাজীর্ণ একটি সামাজিক মসজিদ থাকলেও সেটির কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে; বিব্রতকর অবস্থায় পরেছেন উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতারাও।
ঘটনাটি উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের মধ্যবেতছড়ি গ্রামে। একই রকম আরেকটি মসজিদ হচ্ছে জেলা পরিষদের অর্থায়নে উপজেলার কবাখালী ইউনিয়নের হাচিনসনপুর এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মধ্যবেতছড়ি বাজারে সামাজিক একটি মসজিদ রয়েছে। মসজিদটি জরাজীর্ণ অবস্থায়। সেটি নতুন করে নির্মাণ শুরু করা হয়েছে সামাজিক উদ্যোগে। কিন্তু অর্থ সংকটে কাজ আগাচ্ছে না। অপরদিকে বাজারের মসজিদটির ২০০গজ দূরত্বের মধ্যে পরবর্তীতে “মোহাম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” নামে আরেকটি মসজিদ নির্মাণ করে ঢাকা রাজারবাগের পীরের অনুসারিরা। সে মসজিদে শুধুমাত্র রাজারবাগের পীরের কয়েকজন মুরীদ নামাজ আদায় করেন। এ মসজিদটির পাকা ভবন নির্মাণের জন্য ৬০ লাখ টাকায় টেন্ডার দেওয়া হয়। ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করার জন্য টিনশেডের মসজিদ ঘর ভেঙ্গে পেলোডার দিয়ে পাহাড় কেটে জায়গা তৈরি করা হচ্ছে।
মধ্যবেতছড়ি বাজার ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল খালেক জানান, রাজারবাগের মসজিদটিতে তাদের পীরের ৩/৪জন মুরীদ নামাজ আদায় করেন। সে মসজিদের ভবন নির্মাণের কোন প্রয়োজন ছিল না। অথচ বাজারের মসজিদটি অনেক পুরাতন, যেখানে ব্যবসায়িসহ বাজারে থাকা মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। সামাজিক এ মসজিদের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে তিন মুসল্লির জন্য ৬০লাখ টাকা ব্যায়ে ভবন নির্মাণ খুবই দুঃখজনক।
মধ্যবেতছড়ি গোরস্থানপাড়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, দুই সমাজের কবরস্থান সেখানে; সেখানে দুই সমাজের ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সে মসজিদের ভবন নির্মাণে জেলা পরিষদ এবার টেন্ডার দিয়েছে এমন কথা জানানো হয়েছিল উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে। কিন্তু এখন জানতে পারছেন, তাদেরটি বাতিল করে রাজারবাগেরটি করা হয়েছে। এ কারণে এলাকাতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
মধ্যবেতছড়ি মোহাম্মদিয়া জামিয়া শরীফ নামে রাজারবাগ মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আনছার কাদের সরকার জানান, জেলাসদরে থাকা তাদের পীরের মুরিদ নেতৃবৃন্দ তদবির করে এটার অনুমোদন করিয়েছেন, এর বেশি কিছু তিনি জানেন না।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং উত্তর হচিনসনপুর ঘাটপার জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. বারেক জানান, ঘাটপার জামে মসজিদে ইমামের দায়িত্বে ছিলেন ইউসুফ বিন সুরুজ। বছরখানেক আগে মসজিদে আওয়ামীলীগ সরকার বিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় তাঁকে মসজিদের ইমামের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সেই ইউসুফ বিন সুরুজ তাঁদের কয়েকজন সঙ্গি নিয়ে তৈরি করেন আল-হেরা নাম দিয়ে মসজিদ। যেটিতে তারা কয়েকজন ওয়াক্তের নামাজ আদায় করতেন। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের প্রতিবাদে ইউসুফ বিন সুরুজ সেখান থেকেও চলে যেতে বাধ্য হন; তবে রয়ে গেছে সেই মসজিদ। আল-হেরা মসজিদের দুইপাশে ১কি.মি এর মধ্যে দুটি ছাদঢালাই পাকা মসজিদ রয়েছে। তাই ৬০লাখ ব্যায়ে আলহেরার ভবন নির্মাণে টেন্ডারের কোন প্রয়োজন ছিলনা। বারেক আরো বলেন, অপ্রয়োজনীয় দুটি মসজিদের ভবন নির্মাণে এলাকাতে আওয়ামীলীগ এবং সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে সাধারণ ভোটারদের নিকট। এ অর্থ দিয়ে জনগুরুত্ব রয়েছে এমন মসজিদের ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন ছিল।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের উপসহকারী প্রকৌশলী প্রশান্ত হালদার জানান, বিশেষ কোন ব্যাক্তির সুপারিশে এ মসজিদের নাম টেন্ডারে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।