দরিদ্র পরিবারদের এ গ্রামটিতে এ রকম পরিবর্তন হবে কখনো কেউ কল্পনাই করেনি কোনদিন। যেখানে অনেকেই ছিল বেকার, সেখানে এখন প্রায় সবাই কর্মব্যস্ত। অনেকটা আবেগ মিশ্রিত সুরে কথাগুলো বলছিলেন, খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের বেতছড়ি পশ্চিমপাড়া গ্রামের সমাজ কমিটির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন। রেডক্রিসেন্ট এর ইকোসেক প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি সে গ্রামের পরিবারদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ায় বদলে যাচ্ছে গ্রামটির চিত্র।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যে নারী সেলাই কাজ জানতো তার এখন একটি নতুন সেলাই মেশিন, সাথে বিক্রির জন্য কিছু নতুন কাপড়ও। কেউবা শুরু করেছেন চাষ আর প্রায় পরিবারের ঘরেই এখন নিজস্ব গরু। সংসারের টানাপোড়েনের কষ্ট বুঝি এবার অনেকটা কমে আসবে; তাই আনন্দের ছাপ সবার চোখে-মুখে। দুমুঠো ভাত খাওয়ার নিশ্চয়তার তৃপ্তি যেন সবার মাঝে। নিজের থাকার ঘরেই ছোট পরিসরে চা দোকান করেন ফুলজান বেওয়া (৫৫)। তিনি জানান, প্রথম দফায় ২০ হাজার টাকা পেয়ে দুইটি গরু ক্রয় করেছেন; অল্প কিছু মালামালও উঠেছে দোকানে। গরু ক্রয় করেছেন কুলসুমা বেগম, নাসিমা বেগম, হোসেন আলী, শাহজাহানসহ অনেকেই। আবার কৃষির সাথে সম্পৃক্ত যারা আগে বর্গা চাষ করতেন এবার তারা জমি বন্ধক রেখে নিজেরা চাষে নেমেছেন।
টাকা পেয়ে জমি বন্ধক নিয়ে চাষ শুরু করেছেন হোসেন আলী, শাহজাহান, মনির, বাবুলসহ অনেকেই। হোসেন আলী জানান, আগে বর্গা চাষ করতেন; তাও আবার সব সময় বর্গা জমি পাওয়া যেতনা। এবার জমি বন্ধক রেখে নিজেই চাষ করছেন। তাতে করে পরিবার পরিজনের দুমুঠো ভাতের ব্যাবস্থা হওয়ার আশা করছেন তিনি। একই অনুভূতি জানিয়ে শাহজাহান ও মনির জানান, প্রথম দফায় ২০ হাজার টাকা পেয়ে জমি রেখে চাষ শুরু করেছেন পরবর্তী টাকা পেলে সেগুলোও কাজে লাগাবেন যেন সংসারের টানাপোড়েন কেটে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রেডক্রিসেন্ট নিজস্ব জরীপ চালিয়ে উপজেলায় দরিদ্র গ্রাম হিসাবে বেতছড়ি পশ্চিম পাড়াকে চিহ্নিত করে। এর পর গ্রামটিতে নিজস্ব কর্মীর মাধ্যমে দীর্ঘদিন জরীপ চালিয়ে অতি দরিদ্র ৮১ পরিবারকে চিিহ্নত করা হয়। প্রত্যেক পরিবারের নামে ব্যাংকে পৃথক পৃথক একাউন্ট করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ইকোসেক (ইকোনোমিক সিকিউরিটি) অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রকল্পের আওতায় প্রথম দফায় প্রতি পরিবারকে ২০ হাজার টাকার করে চেক দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে চেক ভাঙ্গিয়ে প্রত্যেকে নিজ নিজ পেশায় উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ করছেন। দ্বিতীয় দফায় আরো ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে এবং পরবর্তীতে আরো সহযোগিতার চিন্তা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
রেডক্রিসেন্ট খাগড়াছড়ি ইউনিটের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হাজি মোহাম্মদ কাশেম জানান, রেডক্রিসেন্ট এর অপর একটি ইউনিট ওয়াটসন এর কর্মকর্তারা (ওয়াটার এন্ড স্যানিটেশন) গ্রামটি পরিদর্শন করেছে। তারা সেখানে ওয়াটার এবং স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করবেন। এছাড়াও পরবর্তীতে দীঘিনালায় আরো দুইটি গ্রামে একইভাবে ইকোসেক এবং ওয়াটসন নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রকল্প পরিচালক মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, এ টাকা সম্পূর্ন অফেরৎযোগ্য এবং টাকা যেন অপচয় না করা হয় সে জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ্য থেকে সার্বিক পর্যবেক্ষন ও পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিআরসি’র অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।