মো. ইসমাইল, পানছড়ি
গাছের চাপায় দুই পা হারানো আবারো স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চায়। পরিবারে বোঝা না হয়ে আবারো কাজ করে পরিবারকে সচ্ছল করতে চায় সোহেল চাকমা।
সোহেলের সাথে কথা বলে জানা যায়, আড়াই বছর আগের ঘটনা, গাছের আড়তে কাজ সেরে গাছ বোঝাইকৃত জিপে করে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সোহেল চাকমা। গাছে চাপা পড়ে সোহেলের দুটো পা। উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। সেখানে প্রায় চারটি মাস চিকিৎসার পর ডাক্তার তাঁর দুটো পা কেটে ফেলে। অবশ্য চিকিৎসার পুরো ভার বহন করে তাঁর কোম্পানি।
ছোট দুটো সন্তান আর স্বামী-স্ত্রী’র ছোট্ট একটি পরিবার তাঁর। সোহেল চাকমার এমন করুণ দশাতে ছেড়ে চলে স্ত্রী। স্ত্রী তাঁর দুটো সন্তান নিয়েই পাড়ি জমায় বাবার বাড়ি দীঘিনালায়। আর তো ফিরে এলো না তাঁরা। তবে সোহেলের এমন পরিস্থিতিতে ছেড়ে যায়নি বাবা-মা। নিজ সন্তানকে নিজেদের কাছে নিয়ে এসে সেবাযতœ শুরু করেন। সেই থেকে এ পর্যন্তও সঙ্গে আছেন বাবা-মা।
বাবা-মায়ের পরিবারও অভাবের সংসার। তাঁরা এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। তাই আগের মতো আর কর্ম করার শক্তিও নেই। এদিকে আবার সোহেলের ছোট দুটো ভাইও প্রতিবন্ধী। আর এই তিন প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে সরকারের দেয়া একটি ছোট্ট ঘরে বহু কষ্টে জীবন ধারণ করে কোনো রকমে বেঁচে আছেন বাবা-মা।
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা চেঙ্গী ইউপির ২নং ওয়ার্ডের রতœসেন পাড়ায় তাদের বসবাস। সোহেল চাকমা জানান, আমার এমন পরিস্থিতি দেখে আমার স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে শ্বশুর বাড়ি চলে গেছে। আমার যদি একটা নিজস্ব ঘর থাকতো আর সংসার চালানোর মতো কিছু থাকতো তবে আমার পরিবারকে আবারো ফিরে পেতাম।
সোহেলের বাবা অনল চাকমা জানান, কোনো রকমে দিন পার করছি, আমার তো অভাবের সংসার। সরকার যদি অন্তত একটা সরকারি ঘর দিতো তাহলে সে তাঁর ঘরে সুন্দরমতো বেঁচে থাকতে পারতো। এদিকে তাঁর কোনো প্রতিবন্ধী ভাতাও নেই। আবেদন করা হয়েছে। কোটা খালি হলে পেতে পারে।
ঐ এলাকার সাবেক মেম্বার সুপন চাকমা জানান, তাদের পরিবার অসহায় একটা পরিবার। তাদের ভাঙা ঘর দেখে একটি সরকারি ঘর দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন তাদের পরিবারের অবস্থা আরো খারাপ। তাঁরা কেউই কর্ম করতে পারেন না। কারন তাঁরা প্রতিবন্ধী আর পিতাও বৃদ্ধ। ছোট ঘরে এতোজন থাকা যায় না। তাই সরকার যদি সোহেল চাকমাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেয় এবং যথাযথ চিকিৎসা দেয় তবে তার অনেক উপকারে আসতো।