আরমান খান, লংগদু ॥
রাঙামাটির নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেছেন, লংগদু উপজেলায় যোগাযোগের দুর্গমতা রয়েছে। এখানকার ইউনিয়নগুলোর সাথে উপজেলার যোগাযোগের মাধ্যম একমাত্র নৌকা। ফলে এখানকার মানুষের যাতায়াত করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কিন্তু এরপরেও অনেক দুর্গম এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে, তারা এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে কিন্তু শিক্ষকদের বড় ভূমিকা রয়েছে। নিশ্চয় শিক্ষকরা ওইসব শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করেছেন, ভালো শিক্ষা দিতে পেরেছেন এবং সাহস যুগিয়েছেন। বুধবার দুপুরে লংগদু উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান।
এসময় তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারলে পড়ালেখার উদ্দেশ্য সফল হবে না। শিশুদের ছোটবেলা থেকেই বড়দের সম্মান করা, শিক্ষকদের সম্মান করা, প্রতিবেশির সাথে ভালো আচরণ ও ছোটদেরকে ¯েœহ করার বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে। এই শিক্ষাটা আমাদের শিক্ষার্থীদের শৈশবেই শেখাতে হবে, বড় হয়ে গেলে তখন আর শেখানো সম্ভব হবে না। শিক্ষকদের বলবো আপনারা শিশুদের আদর্শ ও নৈতিক শিক্ষায় গড়ে তুলুন। যাতে শিশুরা বড় হয়ে সৎ হয়, দেশ প্রেমিক হয়। এবং শিশুদের স্বপ্ন দেখাতে হবে। শিশুরা শুধু বলে ডাক্তার হবো ইঞ্জিনিয়ার হবো। এ ছাড়াও আরো অনেক পেশা আছে সেটাও তাদের জানাতে হবে। শিশুদের স্বপ্ন দেখার চোখ খুলে দিতে হবে। তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদেরকেই বড় ভূমিকা রাখতে হবে। সমাজ গঠনে শিক্ষার্থীদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আকিব ওসমানের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক আরমান খানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক আরো বলেন, হেডম্যান, কার্বারি, চেয়ারম্যান মেম্বারদের পদগুলো খুবই সম্মানজনক। একজন হেডম্যান মৌজা প্রধান হিসেবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকেন। একজন চেয়ারম্যান একটা ইউনিয়নের প্রধান, তিনি তার ইউনিয়নের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আপনাদের কাছে যারা সেবা নিতে আসবে সবাইকে সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। আপনারা আপনাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে লংগদুর চিত্র বদলে যাবে। এলাকার ছোট খাটো বিরোধগুলো প্রাথমিকভাবে নিষ্পত্তি করতে পারলে বড় ঘটনা ঘটানোর সুযোগ পাবে না কেউ। এখানে যারা সরকারি কর্মচারী আছি আমরা সবাই জনগণের সেবক। জনগণকে সেবা দেয়াটাই আমাদের একমাত্র কাজ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, সরকারি কর্মচারীরা হচ্ছে জনগনের সেবক খাদেম ও ভাই। যার অর্থ জনগনের সাথে নিবির সম্পর্ক রেখে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করবো। সরকারি কর্মচারীদের কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। আপনার কাজ করার ইচ্ছা থাকলে দূর্গমতাকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নাই। সর্বোপরি লংগদুতে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করতে হবে। কোনো কারণেই যেন সম্প্রীতি নষ্ট না হয় সে বিষয়ে সকলের জোড়ালো ভূমিকা রাখতে হবে।
মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার, লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মীর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, লংগদু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিক্রম চাকমা, গুলশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মীর শাহ নেওয়াজ চৌধুরী, হেডম্যান (মৌজা প্রধান) অমর বিকাশ চাকমা, বায়তুশ শরফ মাদরাসার সুপার হাজী ফোরকান আহাম্মেদ, লংগদু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাজিব ত্রিপুরা, সাংবাদিক এখলাস মিঞা খান।
বক্তারা বলেন, জেলা শহরের সাথে লংগদু উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে এখানকার জনসাধারণ পিছিয়ে আছে। এছাড়াও উপজেলা সদরের সাথে চারটি ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় চার ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষ বাসিন্দার। লংগদু উপজেলার সাথে নানিয়ারচর উপজেলার সড়ক যোগাযোগ উন্নত করতে পারলেই দুর্ভোগ অনেকটা কমে যাবে।
মতবিনিময় সভায় অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাইফুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম, জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুর রহিম, উপজেলা প্রকৌশলী শামশুল আলমসহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের বিভাগীয় কর্মকর্তাবৃন্দ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, হেডম্যান/কার্বারি, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।