শ্যামল রুদ্র, রামগড় ॥
পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলায় নির্মীয়মান রামগড় স্থলবন্দরটি শুধু এই অঞ্চল নয়; পুরো দেশের অর্থনৈতিক কল্যাণেই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বলা যায় প্রাণসঞ্চারী উদ্যোগ এটি। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম, পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামের এবং ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত সাত রাজ্যের কয়েক কোটি মানুষ এ বন্দর ব্যবহারে উপকৃত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে আরও সুদৃঢ় হবে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীময় বন্ধন।
বন্দরটি পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম এবং একমাত্র স্থলবন্দর। এই বন্দরকে কেন্দ্র করে আগেই উদ্বোধন হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু -১। যেটি ফেনী নদীর ওপর রামগড় মহামুনি নামক স্থানে স্থাপিত। এ সেতু দুদেশকে সংযুক্ত করেছে। ইমিগ্রেশন ভবনও প্রস্তুত। মৈত্রী সেতুর সামনের দক্ষিণাংশে সদ্য নির্মিত ভবনে একই সঙ্গে দুদেশের যাতায়াতকারীদের কাস্টমস, ইমিগ্রেশনসহ নানা চেকিং কার্য সম্পন্ন হওয়ার কথা।
চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্টতার পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্ব বিবেচনায় বেনাপোল কে ছাড়িয়ে যাবে। পুরো দেশের অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠবে। বৈদেশিক বাণিজ্যে এগিয়ে যাবে দেশ, সফল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে যুক্ত হবে সমৃদ্ধির এক নতুন অধ্যায়ে।
রামগড়ের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনে মিরসরাই ফটিকছড়িসহ উত্তর চট্টগ্রামের সড়ক ব্যবস্থাপনায় এসেছে বৈপ্লবিক উন্নয়ন । রামগড় স্থলবন্দরের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যর ব্যাপক প্রসার ঘটবে। চট্টগ্রাম থেকে বেনাপোলের দুরত্ব অত্যাধিক। প্রচুর সময় দরকার, খরচও বেশি। পক্ষান্তরে রামগড় বন্দর চালু হলে কম সময় ও স্বল্প খরচে ভারত পণ্যসামগ্রী নিতে পারবে। এটি একটি ইতিবাচক দিক। এতে দুুুুদেশই লাভবান হবে। এ ছাড়া মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের নানা কর্মকান্ডে রামগড় বন্দর গুরুুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠবে। পাশাপাশি চট্টগ্রামের নাজিরহাট থেকে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণের মহাপরিকল্পনার বিষয়টি সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছেন।
এ সবই বর্তমান সরকারের অবদান। দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারের এ পদক্ষেপকে আমরা সাধুবাদ দিই। এধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে রামগড় এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছুবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ১১২ কিলোমিটার দূরত্বের এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে মাত্র ৩ ঘণ্টায় ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য যাবে ভারতে। পাশাপাশি এ সড়কের মাধ্যমে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচলের( সেভেন সিস্টার্স) সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে।
রামগড় স্থলবন্দরটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে মাত্র ১১২ কিলোমিটার ও রাজধানী ঢাকা থেকে ২০৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। সুতরাং এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও ঢাকার সঙ্গে ত্রিপুরার সাব্রুম ও খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দরের সংযোগ স্থাপিত হবে।
এখন দু’দেশের জনগণেরই চাওয়া যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি স্থলবন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করা। এর মাধ্যমে আন্তঃদেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্প্রসারণ ঘটবে। উন্মোচিত হবে অর্থনীতির নতুন দুয়ার। বিশ্লেষকদের মতে, রাজনীতির সীমারেখা বাণিজ্যে বাধা হতে পারে না, শুধু চট্টগ্রাম পোর্ট নয়, চট্টগ্রাম বিমান বন্দরও ত্রিপুরাবাসী ব্যবহার করতে পারে। রামগড় স্থলবন্দর হবে দুই দেশের নতুন বাণিজ্যিক করিডোর।
এই স্থলবন্দর ঘিরে অর্থনৈতিক মুক্তির প্রত্যাশা করছেন এ অঞ্চলের বিপুল জনগোষ্ঠী। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আশা রামগড় স্থল বন্দর সফল কানেক্টিভিটিতে যুক্ত হবে নতুন এক সোনালী অধ্যায়ে। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়, বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পের প্রসার এবং মানুষে মানুষে সম্পর্কোন্নয়নে গোটা অঞ্চলের উপকার হবে। বিপুল সংখ্যক মানব সম্পদ কাজে লাগবে অযুত সম্ভাবনার এই কর্মযজ্ঞে। চট্টগ্রাম বন্দরকে উত্তর-পূর্ব ভারতের কমপক্ষে পাঁচ কোটি মানুষ ব্যবহার করবে। তখন প্রচুর রাজস্ব আয় হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়বে। উত্তর-পূর্ব ভারতের পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য কলকাতা বন্দরে যেতে ১২শ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয় অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব অনেক কম। ভারতীয়রা সময় ও অর্থ বাঁচিয়ে পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। আবার চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের লোকজনও সহজেই সেভেন সিস্টার্স বেড়াতে পারবেন। অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চল হবে সমৃদ্ধ। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথম স্থাপিত এই বন্দরের বিশাল কর্মযজ্ঞ দরিদ্র মানুষের মুক্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে, দুদেশের মানুষের জন্যই হবে আশীর্বাদস্বরুপ। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রেই অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটবে। পুরো এলাকার চেহারাটাই পাল্টে যাবে।
সর্বোপরি রামগড় স্থল বন্দর পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদানের পাশাপাশি বিপুল জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। সর্বাত্মক যোগাযোগ স্থাপনে সূচিত হবে যুগান্তকারী মাইলফলক । আঞ্চলিক গন্ডি ছাপিয়ে এ যেন বৃহত্তর পরিসরে দীপ্তিময় পদচারণা।