জিয়াউল জিয়া
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা নানা ধর্মীয় আচারে মাধ্যমে উদযাপন করা হয়েছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বিভিন্ন বিহারে। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের ভেতরের অপবিত্রতা ও কলুষতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য তিন মাসব্যাপী নির্জন আশ্রমে বসবাস শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার মাধ্যমে লোকারণ্যে ফিরে আসেন। একে আশ্বিনী পূর্ণিমাও বলা হয়।
শনিবার সকালে রাঙামাটি শহরের রাজবন বিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে সকাল থেকেই পঞ্চশীল গ্রহণ, প্রার্থনা, বুদ্ধ সংগীত, মোমমবাতি ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের করেছে। এরপর অষ্টপরিষ্কার দান, অষ্টশীল গ্রহণ, বুদ্ধ পূজা প্রভৃতি আচার শেষে দেব-মানবের তথা সকল প্রাণীর হিতার্থে ধর্মদেশনা দেওয়া হয়।
ধর্মীয় দেশনা দেন রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবির। এসময় উপস্থিত ছিলেন চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা ও বিহার পরিচলানা কমিটির সদস্য ও উপাসক-উপসিকাগন। অনুষ্ঠানে কয়েকশত ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নর-নারী অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে পুণ্যার্থীদের উদ্দেশ্য বনভান্তের উদ্ধৃতি দিয়ে, একে-অপরের প্রতি হিংসায় লিপ্ত না হয়ে সৎ চিন্তা ও সৎ কুশলকর্ম সম্পাদন পূর্বক নিজেকে আত্মসংযম রেখে বুদ্ধের নিয়ম-নীতি পালনের আহবান জানিয়েছেন রাঙামাটি রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ ও আবাসিক প্রধান ভদন্ত শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। এসময় আরো ধর্মদেশনা প্রদান করেন রাজবন বিহারের সিনিয়র ভিক্ষু ভদন্ত জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির।
বৌদ্ধ ধর্মালম্বিদের মতে ভিক্ষুরা আষাঢ়ী পূর্ণিমা হতে আশ্বিনী পূর্ণিমান পর্যন্ত, এই তিন মাস বর্ষাব্রত পালন করেন। আর এই বর্ষাব্রত পালন শেষে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথিতে তারা প্রবারণা করেন। এই দিন ভিক্ষু ও পূর্ণার্থীরা তাদের অতিতের ভুল ভ্রান্তির জন্য একে অপরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
প্রবারণা পূর্ণিমায় আসা পূর্ণার্থীরা জানান, এমন পূর্ণময় অনুষ্ঠনে ভক্তকূলের প্রাথর্না সকল সম্প্রদায়ের মৈত্রীময় সহবস্থান। পৃথিবীতে সকল মানুষ যেন শান্তিতে একসাথে বসবাস করতে পারে। হানাহানি বন্ধ হয়। যার যার ধর্ম সঠিকভাবে পালন করতে পারে সেই প্রার্থনা করেন। দেশের শান্তি বজায় এবং বিশে^ যুদ্ধ বন্ধের প্রার্থনা পূর্ণার্থীদের।
চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, সহনাভূতি ভ্রাতৃত্ববোধ, গঠনমূলক সমালোচনা, ক্ষমা প্রার্থনা এগুলো পূর্ণিমা উপলক্ষে বুদ্ধ বলে গেছেন ভিক্ষু ও উপসক-উপাসিকাদের। আমরা রাজনীতির অঙ্গণেও সেই একই নীতি পালন করা হয় সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।
রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবির, ‘বাংলাদেশ তথা পার্বত্য এলাকায় সকলের মৈত্রীময় সহনশীলতা, বন্ধুত্বপূর্ণ চেতনার উৎপন্নের আহবান এই ধর্মগুরুর। একই সাথে সকল হিংসা ভুলে সকলের সাথে মিলেমিশে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে উঠুক। সবাই যেন অনৈতিক কার্যক্রম থেকে নিজেকে বিরত রেখে জীবন যাপন করেন। সুখে শান্তিতে সবাই মিলে পৃথিবীতে বসবাস করতে পারি সেই মঙ্গল কামনা করেন তিনি।
প্রবারণা পূর্ণিমার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে তিন মাস বর্ষাবাসের। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী প্রবারণার পরিসমাপ্তির মধ্যদিয়ে আগামীকাল রোববার থেকে পার্বত্য তিন জেলাতে শুরু হচ্ছে দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব।