বদলে যাচ্ছে পাহাড়ি শহর রাঙামাটি পৌরসভা। নতুনরূপে সাজতে শুরু করেছে রাঙামাটি পৌরসভা কার্যালয় থেকে শুরু পুরো রাঙামাটি শহর। দীর্ঘদিন ধরে পৌর এলাকায় বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা আর নাগরিক ভোগান্তি নিয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ ছিলেন রাঙামাটি নগরবাসি।
অবশেষে একাধিক খাত থেকে তহবিল সংগ্রহ করে নগরবাসির সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে রাঙামাটি পৌর কর্তৃপক্ষ। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে স্বীকৃত রাঙামাটি পৌরসভার ৯ টি ওয়ার্ড এর আয়তন ৬৪.৭৫ বর্গ কিলোমিটার আর জনসংখ্যা হচ্ছে ৮৪ হাজার ৮০৪ জন।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে ইউজিপ-৩ (তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরন প্রকল্প) প্রকল্প শীঘ্রই শুরু হতে চলেছে। এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে শহরের রাস্তা-ঘাট, ড্রেন,নালা,দেওয়াল, সিঁড়ি,বস্তি উন্নয়নসহ ছোট ছোট কালভার্ট নির্মান। এই মার্চ মাস থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ৫ বছর মেয়াদী এই ইউজিপ প্রকল্প-৩ এর কার্যক্রম। আগামী ৫ বছরে রাঙামাটি পৌরসভার উন্নয়নে প্রায় ৮০-১০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন খোদ পৌর মেয়রও।
পৌরসভা সুত্র জানা গেছে,প্রকল্পের ১ম বছরে খরচ হবে প্রায় ১৫ কোটি টাকা এবং ২য় বছরে ব্যয় করা হতে পারে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। পরবর্তী বছরগুলোতে বরাদ্দের উপর ভিত্তি করে পৌর এলাকার উন্নয়নের জন্য খরচ করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে রাঙামাটি শহরের পৌর এলাকার প্রত্যন্ত এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে বলে জানিয়েছেন পৌর কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে বিএমডিএফ (বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড) এর মাধ্যমে এই বছরের এপ্রিল থেকেই ২০-২৫ কোটি ব্যয়ে ২ বছর মেয়াদী প্রকল্পও শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এ প্রকল্পে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে পৌর মিলনায়তন কাম অফিস ভবন। যেখানে প্রায় ৭ শত থেকে ১ হাজার আসন সংখ্যা বিশিষ্ট বিশাল হল রুম থাকবে। একই সাথে সাড়ে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে পৌর মার্কেট বর্ধিতকরন, আবাসিক হোটেল ও কমিউনিটি সেন্টার ও কিচেন মার্কেট নির্মান।
একটি কিচেন মার্কেট করার জন্য শহরের সুফিয়া হোটেলের পার্শ্বে ৭ শতক সরকারী জমি অধিগ্রহন করেছে রাঙামাটি পৌরসভা। এই মার্কেটে একই ছাদের নীচে সব ধরণের পণ্য পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া রাঙামাটি শহরের পুরো পৌর এলাকা জুড়ে ফুটপাত নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এলজিআরডি ও পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে ৩ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পৌর ভবন নির্মান,বাজার,জলমহল ও টার্মিনালের টেন্ডার এর কাজ শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রনালয় বাকী টাকা পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করা হবে জানিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
রাঙামাটি পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রবীর দাশ জানিয়েছেন, ইউজিপ-৩ প্রকল্পের প্রথম বছরের জন্য ১৫ কোটি টাকার বাজেট পাঠানো হয়েছে। এর পাশাপাশি বিএমডিএফ প্রকল্প ও এলজিআরডি অর্থায়নে পৌরভবনের নির্মানের জন্য বাজেট দেয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্ধ হলে কাজ শুরু হবে।
ইতোমধ্যেই বিএমডিএফ প্রকল্পের মাধ্যমে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রাঙামাটি পৌরসভা এলাকার তবলছড়ির ধনমিয়া পাহাড় রাস্তা ও রিটানিং দেওয়াল নির্মান,রাঙ্গাপানির সিসি রাস্তা, কর্মচারী কলোনী বিসি রাস্তা,সুভাষ চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা কার্বারী বাড়ী রাস্তা,কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এর সিসি রাস্তা,মুসলিম পাড়া সড়ক,বনরুপা- ট্রাইবাল আদাম সড়ক,রায় বাহাদুর সড়ক,হাসপাতাল সড়ক,চক্রপাড়া(উত্তর পার্শ্বে) স্বর্র্নটিলা আব্দুর রশীদ সড়ক, আমানত বাগ সিসি রাস্তা,পুলিশ লাইন সিসি রাস্তা,পশ্চিম ট্রাইবাল আদাম সড়ক,ভেদভেদী শান্তিপাড়া ড্রেন এবং ফুটপাত,তবলছড়ির মাঝেরবস্তি কালীবাড়ি ও ধোপাপাড়া সড়ক,সোনালী বাগ সড়ক,রিজার্ভ বাজার তৈয়বিয়া পাহাড় এবং মহসিন কলোনী সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্প ও পরিকল্পনা সম্পর্কে রাঙামাটির পৌর মেয়র সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ভূট্টো বলেন, রাঙামাটি পৌর এলাকার সার্বিক উন্নয়নে আমরা বেশকিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে শহরের সৌন্দর্য্য বর্ধন, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, সড়কবাতি নিশ্চিতকরণ, রাস্তা-ঘাট ও বস্তি উন্নয়ন।
পৌর মেয়র বলেন, আগে রাঙামাটি শহরের যত্রতত্র গরুর খোয়ার ছিলো, বর্তমানে পৌর ট্রাক টার্মিনালে নির্দিষ্ট স্থানে গরুর খোয়ার করা হয়েছে। রাঙামাটি শহরে গুরুত্বপুর্ন ৫ টি জায়গায় যাত্রী ছাউনি হচ্ছে। সেগুলো হলো নতুন বাস ষ্টেশন, বনরুপা, কে কে রায় সড়ক, কলেজ গেইট ও রাজবাড়ীতে যাত্রী ছাউনি হচ্ছে।
মেয়র সাইফুল ইসলাম চৌধুরী আরো বলেন, রাঙামাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি নতুন আঙ্গিকে নির্মান করারও পরিকল্পনা আছে।
মেয়র বলেন, আমি দয়িত্বভার গ্রহনের পর পৌরসভার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ছিল ৫৭ লক্ষ টাকা। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার পর বর্তমানে বিল বকেয়া আছে ২৬ লক্ষ টাকা।
আগে পৌরসভার সংরক্ষন(কনজারভেন্সী) বিভাগে ৭৩ জন কর্মচারী নিয়োজিত ছিলো, বর্তমানে এর পরিসর বৃদ্ধি করে ১১৮ জনে উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে পরিচ্ছন্নতার জন্য ৪ টি গাড়ী সচল রয়েছে।
মেয়র ভূট্টো আরো বলেন,পৌরসভা হচ্ছে পৌর এলাকার জনগনের সেবক। পৌর জনগনের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কর্তব্য। পৌর এলাকায় বসবাসকারি জনগণের চাহিদা অনুযায়ী স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় উপকরন ও সেবা নিশ্চিতকরনই হলো রাঙামাটি পৌরসভার লক্ষ্য। তাই আগামীতে আমি এবং আমার পরিষদ, রাঙামাটি শহরের মানুষকে একটি বাসপযোগি,আধুনিক ও মডেল পৌরসভা উপহার দিতে চাই। এজন্য পৌরবাসীকে নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করে পৌরসভার পাশে থাকার অনুরোধ জানান তিনি।