প্রান্তিক রোগীদের দোরগোড়ায় বিনামূল্যে আধুনিক চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিচ্ছে এসসিবি-বিদ্যানন্দ ভ্রাম্যমান হাসপাতাল ‘জীবনখেয়া’। সারাদেশের লক্ষাধিক রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা, ওষুধ, ল্যাব পরীক্ষা, পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি এক লক্ষ কিশোরীর মাঝে স্যানিটারি প্যাড পৌঁছে দিবে ভ্রাম্যমান এই হাসপাতাল”
অবহেলিত প্রান্তিক দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘জীবন খেয়া’ নামের ভ্রাম্যমান হাসপাতাল আবারো চালু করেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ। দেশের লক্ষাধিক প্রান্তিক রোগী এই হাসপাতাল থেকে আধুনিক চিকিৎসাসেবা পাবেন তিন বছরে। থাকছে চক্ষু বিশেষজ্ঞ, শিশু, নারী ও মেডিসিনে অভিজ্ঞ ডাক্তার। থাকছে প্যাথলজি ল্যাব সুবিধা ও চোখের আধুনিক পরীক্ষা সহ ফ্রি চশমা।
মঙ্গলবার বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষংছড়ি উপজেলার ঠাকুরপাড়ায় চিকিৎসা সেবা দেয়ার মাধ্যমে উদ্বোধন হয়েছে এই হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। প্রথমদিনেই দুই শতাধিক রোগী এই ক্যাম্প থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। তাঁরা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ, ১ সপ্তাহের ওষুধ ও পুষ্টিকর খাদ্যপণ্য বিনামূল্যে পেয়েছেন।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড মেম্বার মো. জামাল উদ্দিন বলেন, দুর্গম পাহাড় কিংবা বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষজনকে চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য হাজার টাকা শুধু যাতায়াত ভাড়ায় ব্যয় করতে হয়। এসসিবির অর্থায়নে বিদ্যানন্দের এই ভাসমান হাসপাতাল সেইসব মানুষের দোরগোড়ায় আধুনিক চিকিৎসা সেবা নিয়ে হাজির হয়েছে। তিন বছরে প্রায় দেড় লক্ষ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এখান থেকে চিকিৎসাসেবা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাবেন।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন থেকে আরো জানানো হয়; বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অর্থায়নে ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় ৬ জন চিকিৎসক, ১ জন গাইনী বিশেষজ্ঞ, ১ জন শিশু বিশেষজ্ঞ ও ১ জন চক্ষু বিশেষজ্ঞ নিয়ে এই ভাসমান হাসপাতালটি আগামী ৩ বছর ব্যাপী সারাদেশ বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্পটে ক্যাম্প করে চিকিৎসা দেবে। বিনামূল্যে ল্যাব টেস্ট ও ওষুধের পাশাপাশি রোগীদেরকে পুষ্টিকর খাদ্যপণ্যও দেয়া হচ্ছে এই হাসপাতাল থেকে। এর পাশাপাশি জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে স্বাবলম্বীকরন, শীতবস্ত্র বিতরণসহ বহুমুখী সেবামূলক কার্যক্রমও চলমান থাকবে এই হাসপাতাল থেকে।
জামাল উদ্দিন আরো বলেন, ৩ বছরে ১২ বার আমাদের মেডিকেল টিম বের হবে। প্রতি বারে টানা ১ মাস তাঁরা দেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে ক্যাম্প স্থাপন করবে। এবার এক মাসের জন্য নাইক্ষছড়ি থেকে শুরু হয়ে রুমা উপজেলায় গিয়ে শেষ হবে। ১ম পযায়ে ১ মাসে ১২ হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা পাবেন। এই টিমে কাজ করছে প্রায় ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক।
বিদ্যানন্দ চরাঞ্চলের মানুষকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য সর্বপ্রথম ২০২০ সালে ভাসমান হাসপাতাল চালু করে খুলনায়। ১ম বার বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এই হাসপাতাল পরিচালনায় সহযোগিতা করে। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর এই হাসপাতাল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গত বছর থেকে এই হাসপাতাল অর্থায়ন করছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ। এবার সারাদেশব্যাপী এটা পরিচালিত হবে।
দেশ বিদেশে ভিন্নতর ও অভিনব সব আইডিয়া নিয়ে সেবামূলক কাজ করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিদ্যানন্দ। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে কেউ যখন ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে না তখন জীবনবাজি রেখে করোনা মহামারী মোকাবেলায় সম্মুখসমরে যুদ্ধ করে সাধারণ মানুষের ভালবাসা অর্জন করে নেয় এই প্রতিষ্ঠান। সমাজসেবায় তাদের অসামান্য সব অবদানের জন্য ২০২৩ সালে সরকার তাদের একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়াও ২০২২ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় মানবকল্যাণ পদক ও ২০২১ সালে বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ থেকে “কমনওয়েলথ পয়েন্টস অফ লাইট” পদকে ভূষিত হয় এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।(বিজ্ঞপ্তি)